ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপ

অবশেষে ২৮শ’ ভুয়া ও অবৈধ সিম্যান আইডি বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ আগস্ট ২০১৫

অবশেষে ২৮শ’ ভুয়া ও অবৈধ সিম্যান আইডি বাতিল

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দীর্ঘ দশ বছর পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপে একযোগে ২৮ শ’ সিম্যান আইডি (আইডেন্টিটি ডক্যুমেন্ট) বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এ জাতীয় সিম্যান আইডির পরবর্তী ফেরিফিকেশন কার্যক্রমও বাতিল করে দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত নৌ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর ফলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন ডিজি শিপিং অফিস থেকে ভুয়া ও অবৈধ সিম্যান আইডি ইস্যুর অপকর্মের একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। এ জাতীয় ভুয়া সিম্যান আইডি ইস্যু করে মন্ত্রণালয় ও ডিজি শিপিং অফিসের সংশ্লিষ্ট জালিয়াত চক্রটি বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সর্বনাশ ঘটিয়েছে প্রকৃত নাবিক ও সিডিসি (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট) ধারীদের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ব বাজারে নাবিকদের চাকরির চাহিদা ব্যানারে নৌ মন্ত্রণালয় ও ডিজি শিপিং অফিসের দুর্নীতিবাজ একটি চক্র মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে একের পর এক ভুয়া ও অবৈধ সিম্যান আইডি ইস্যু করে আসছিল। এ জাতীয় আইডি নিয়ে অনভিজ্ঞ ও অযোগ্যরা দেশী বিদেশী জাহাজে চাকরি লাভ করে বাংলাদেশী নাবিকদের সুনাম ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে আসছিল। এ ব্যাপারে নৌ মন্ত্রণালয় ও ডিজি শিপিং অফিসসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রকৃত নাবিকদের সংগঠনের ব্যানারে নানা অভিযোগ এলেও তাতে কোন সুফল আসছিল না। অপরদিকে, নৌ মন্ত্রণালয় ও ডিজি শিপিং অফিসের দুর্নীতিবাজ চক্রটি অর্থের বিনিময়ে আগ্রহী যে কাউকে এ ধরনের সিম্যান আইডি ইস্যু শুরু করে ২০০৪ সাল থেকে। ২০১০ সাল পর্যন্ত এ ধরনের ভুয়া সিম্যান আইডি ইস্যু হয় প্রায় ১৪শ। এরপর চলতি বছরের হালনাগাদ পর্যন্ত ইস্যু হয় আরও ১৪শ’। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল নাবিক নিয়োগের সঙ্গে জড়িত বেশকিছু ম্যানিং এজেন্ট। মূলত কোস্টাল জাহাজে চাকরির জন্য এ জাতীয় ভুয়া সিম্যান আইডি ইস্যু করা হলেও পরবর্তীতে এসব আইডিধারীরা সমুদ্রগামী জাহাজেও নানা ফাঁকফোকরে চাকরি লাভে সক্ষম হয়। কিন্তু অনভিজ্ঞ এসব কথিত নাবিক কাজেকর্মে জাহাজ কোম্পানিগুলোর কাছে নানাভাবে ধরা পড়তে থাকে। যার ফলে বিদেশী বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানি থেকে সরকারের কাছে এ নিয়ে নানা অভিযোগও আসতে থাকে। কিন্তু ভুয়া সিম্যান আইডি কার্ড ইস্যু তৎপরতা থামেনি। অপরদিকে, এহেন গর্হিত কাজের ফলে প্রকৃত সিডিসিধারীদের চাকরি বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল। প্রকৃত সিডিসিধারীদের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর বারে বারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে আসছিল। কিন্তু কোন ধরনের পদক্ষপ লক্ষণীয় ছিল না। সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়ালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের নিয়ে মঙ্গলবার একটি জরুরী এক বৈঠক হয়। যে বৈঠকে অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ভুয়া ও অবৈধ সীম্যান আইডি ইস্যু। বিস্তারিত আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে ২০০৪ সাল থেকে হাল নাগাদ ইস্যুকৃত ২৮ শ’ সিম্যান আইডি বাতিল ঘোষিত হয়। এর পাশাপাশি এ জাতীয় সিম্যান আইডি পরবর্তী ভেরিফিকেশনও বাতিল করা হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তের পর বুধবার থেকে নৌ মন্ত্রণালয় ও ডিজি শিপিং অফিসের দুর্নীতিবাজ চক্রটি ফেঁসে যেতে পারে এ আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় রয়েছে। সূত্র জানায়, ভুয়া সিম্যান আইডি ইস্যুকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে কোন দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি। বিদেশে চাকরির সুযোগ দেখিয়ে চক্রটি আনাড়ি অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নামে অবৈধভাবে সিম্যান আইডি ইস্যু করতে থাকার পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে যে আঘাত এসেছে তা এদেশের প্রকৃত নাবিকদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি আঘাত। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বুধবার থেকে এ জাতীয় সিম্যান আইডিধারীদের পরবর্তী ভেরিফিকেশন বন্ধ হয়েছে। তবে যারা এ জাতীয় ভুয়া আইডি নিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযানে কর্মরত রয়েছে তাদের নির্দিষ্ট সময়ের পর আর চাকরিতে থাকার সুযোগ থাকছে না। এদিকে, ডিজি শিপিং অফিস ও নৌ মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তারা এ জাতীয় ভুয়া সিম্যান আইডি ইস্যু করার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি উঠেছে প্রকৃত নাবিক ও সিডিসি সনদধারীদের পক্ষ থেকে।
×