ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ আগস্ট ২০১৫

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “...পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-/ কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।/...এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান?/ যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;/ তাঁরই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-/ চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।” সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় এমনিভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বাধীন জাতি রাষ্ট্রের স্রষ্টা, স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আর মাত্র দু’দিন পরই সেই ভয়াল দিন। যে দিনে বাঙালী হারিয়েছিল তাঁর জাতির পিতাকে, দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল অগ্রমিছিল থেকে। বাঙালীর জীবনে শোকাহত ও অভিশপ্ত আগস্ট মাসের আজ তেরোতম দিন। শহরের মোড়ে, প্রধান সড়কে, অলিগলিতে উঠছে শোকতোরণ। সকাল থেকে মধ্যরাত- বাজছে শোকগাথা। ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনে মনে হয় এখনও কালো ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে হাসছে যে উজ্জ্বল চোখের দ্যুতি, একদিন তাঁরই আঙ্গুল ধরেই তো পথে নামে বাঙালী জাতি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। বাঙালীর অমোঘ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকেই ঘর ছেড়েছিল মানুষ। মৃত্যুর থাবায় বুক মেলে দেয় কোটি জনতা। শুরু করে স্বাধীনতার লড়াই। তারপর টানা ৯ মাস সেই প্রাণপ্রিয় নেতার নির্দেশেই চলে মুক্তির যুদ্ধ। একদিন স্বাধীন হয় দেশ। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় আরও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র- ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। জন্ম নেন এক চিরভাস্বর মুখ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই কালজয়ী মানুষকেই একদিন, এই আগস্টেই নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার পবিত্র মাটি। বাঙালীর ইতিহাসে যোগ হয় এক কলঙ্কময় অধ্যায়। বাঙালী কাঁদে। কাঁদায় বিশ্ববাসীকে। বুকের খুনে, বঙ্গবন্ধু রচনা করেন ভালবাসা ও শ্রদ্ধার এক কালজয়ী ইতিহাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারী ও বেসরকারী অজস্র সংগঠন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে গ্রহণ করছে বিস্তারিত কর্মসূচী। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রং তুলিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর জীবন ও কর্মকে বিভিন্ন চিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পীরা। চিত্রশিল্পীদের রং আর তুলির বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সেই কালরাতের ঘটনা। বুধবার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ৩২ ধানম-ির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে ‘রং তুলিতে শোকগাথা’ শীর্ষক দিনব্যাপী চিত্রাঙ্গন কর্মশালার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। অনুষ্ঠানটি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে। এতে দেশের প্রতিথযশা অর্ধশতাধিক শিল্পীবৃন্দ ছবি একে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। চিত্রশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রফিকুন নবী, আবুল বারক আলভী, বিরেন সোম, জামাল আহমেদ, শামসুদ্দোহা, নিসার হোসেন, শেখ আফজাল, মোঃ মনিরুজ্জামান, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, হেলাল উদ্দিন সরকার, কনকচাঁপা চাকমা, খালিদ মাহমুদ মিঠু, বিপাশা হায়াত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, একাত্তরের ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ নেয়। সেই ঘাতকচক্র এখন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর রক্তকে ভয় পায় বলেই নতুন করে চক্রান্ত শুরু করেছে। সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে যার অবস্থানে থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ থেকে একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘাতকদের রুখে দিতে হবে। ছবি একে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শিল্পীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ওপর ৫ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১১টা রাত ৮টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে। কর্মসূচীর উদ্বোধনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না, আমিও উপাচার্য হতে পারতাম না। আজ বাংলাদেশের মানুষ যে অবস্থানে রয়েছেন, তারা কেহই সেখানে থাকতেন না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. আলী আসগর মোড়ল, অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল প্রমুখ।
×