ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনসিসির ভুলের খেসারত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ আগস্ট ২০১৫

ডিএনসিসির ভুলের খেসারত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ট্রেড লাইসেন্স ফির সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট গ্রহণের জন্য প্রকাশিত ৪ বছর আগের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা ৪ বছর পর বাস্তবায়ন করছে ডিএনসিসি। এর ফলে ডিএনসিসি এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রকাশ্য ক্ষোভ বিরাজ করছে। পূর্বের ধার্যকৃত অর্থ বর্তমানে একসঙ্গে আদায় করায় প্রতিদিনই রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তর্ক বিতর্কে জড়াতে দেখা যাচ্ছে। সূত্র জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের রহিম নামের একজন ব্যবসায়ী গত ১০ বছর যাবত সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়মানুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিবছরের মতো এবারো তিনি ট্রেড লাইসেন্সের ফি জমা দিতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, চলতি বছর ট্রেড লাইসেন্স ফি বাড়ানো হয়েছে। এজন্য তাকে চলতি বছরের জন্য অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হবে। সরকারের নিয়মানুযায়ী তিনি তা প্রদান করতেও রাজি হলেও বিপত্তি বাধে গত ৪ বছর পূর্বের বকেয়া ভ্যাট নিয়ে। রাজস্ব বিভাগের দাবি আপনার লাইসেন্সের বিপরীতে আপনাকে শুধু চলতি বছর নয় এর পূর্বের ৪ বছরের বকেয়া ভ্যাটের টাকাও গুনতে হবে। এ শুনে রহিম সাহেব আঁতকে ওঠেন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, আমি একজন নিয়মিত লাইসেন্স ফি পরিশোধকারী ব্যবসায়ী। প্রতিবছরই আমি নির্ধারিত সময়ে আপনাদের ধার্যকৃত ফি প্রদান করি। তবে কেন আমাকে গত ৪ বছরের অতিরিক্ত ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রদান করতে হবে? উত্তরে ঐ কর্মকর্তা বলেন, সরকার গত ৪ বছর আগেই এ ফি ধার্য করেছে তবে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ধার্যকৃত ফি সম্পর্কে সরকারের নির্দেশিত কোন চিঠি হাতে পায়নি। তাই বাধ্য হয়ে এখন থেকে সকল ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীকে পূর্বের ৪ বছরের ভ্যাটসহ চলতি বছরের ১৫ ভাগ ভ্যাট বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হবে। অতএব, ৫ বছরের ভ্যাট প্রদান ব্যতীত ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করবে না ডিএনসিসি। এ নিয়ে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন ঐ ব্যবসায়ী। কিন্তু উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়ে সিটি কর্পোরেশনের অফিস থেকে তিনি ফিরে আসেন। জানা গেছে, সরকার ২০১১ সালে ট্রেড লাইসেন্সের ফির সঙ্গে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রদান বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। অথচ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এ প্রজ্ঞাপনের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে আগের নিয়মে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি গ্রহণ করতে থাকে। চলতি বছর সরকারের অডিট বিভাগ কর্তৃক উক্ত প্রজ্ঞাপনের নির্দেশ না মানা নিয়ে ও নির্ধারিত রাজস্ব আদায় করতে না পারায় অডিট আপত্তি প্রদান করে। সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছর থেকে উক্ত অর্থ আদায়ের নির্দেশনা প্রদান করে। অডিট বিভাগের উক্ত আপত্তির পর নড়েচড়ে বসে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরই ফলশ্রুতিতে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের ৪ বছর আগের সরকারী প্রজ্ঞাপনের নির্দেশ বাস্তবায়নের করা ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের। ডিএনসিসির বনানী অফিসে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি জমা দিতে আসা বনানী বাজারের মাসুম আহমেদ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিবেদককে বলেন, আমি নিয়মিত লাইসেন্স ফি প্রদান করি ও সরকারী নির্দেশনা মেনে চলি। এ বছর ডিএনসিরি ভুলের কারণে আমাকে একসঙ্গে গত ৪ বছরসহ চলতি বছরের ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রদান করতে হবে। যা আমার পক্ষে দেয়া অনেকটা কঠিন। আমাকে ৪ বছর আগে প্রতিবছর সরকারের নির্ধারিত ১৫ ভাগ ভ্যাট নিলে আমার তেমন একটা ক্ষতি হতো না। জানতে পেরেছি ৪ বছর আগে কাগজ পৌঁছলেও শুধুমাত্র কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবহেলার কারণে ৪ বছর পর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একসঙ্গে টাকাগুলো নিচ্ছে। প্রতিবছর দিলে তো কারও তেমন একটা গায়ে লাগে না। এ ধরনের কর্মকা- করা অন্যায় ও অমানবিকও বটে। তাদের করা ভুলের খেসারত কেনো আমাদেরকে গুনতে হবে? জনগণ কেন কষ্ট পাবে ও হয়রানির শিকার হবেন। প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা এর চেয়ে বাস্তব উদাহরণ আর কি হতে পারে? আমরা এর সঙ্গে জড়িত দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারীর কে কে তা তদন্ত সাপেক্ষে বের করতে ও তার সমাধান করতে মেয়রের কাছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো: মনতাজ উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, গত ৪ বছর আগেই ট্রেড লাইসেন্সের সাথে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাই নিয়মানুযায়ী এ পরিমাণ অর্থ প্রত্যেক ট্রেড লাইসেন্স নবায়নকারীকেই প্রদান করতে হবে। কিন্তু গত কয়েক বছরেও এ প্রজ্ঞাপনটি আমাদের কাছে পৌঁছায়নি বিধায় আমরা এতদিন অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় করতে পারিনি। কিন্তু চলতি বছর আমাদের অডিট বিভাগ থেকে সরকারী প্রজ্ঞাপনে নির্দেশিত অর্থ আদায় করা হয়নি কেন তা নিয়ে অডিট বিভাগ আপত্তি দেয়। এরপর সরকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হিসেবে বকেয়া পূর্বের ৪ বছরের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাটের অর্থ আদায় করছি। প্রজ্ঞাপনটিতে কি লেখা রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রকৃতপক্ষে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এখন পর্যন্ত নির্দেশিত উক্ত প্রজ্ঞাপনের কপিটি হাতে পাইনি কিন্তু আপনি ডিএনসিসির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে যান তার কাছে তা পাওয়া যেতে পারে। আপনাদের ভুলের কারণে ব্যবসায়ীরা কেন হয়রানি হচ্ছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একসঙ্গে কয়েক বছরের ভ্যাট প্রদান করা কিছুটা সমস্যার বটে কিন্তু সরকারী নিয়মানুযায়ী তা নিচ্ছি। এছাড়া সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করলেও আমরা গত ৪ বছরেও তা হাতে না পাওয়ায় অডিট আপত্তির পর থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে তা আদায় করছি।
×