ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক কারণে জিএসপি সুবিধা পাইনি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১২ আগস্ট ২০১৫

রাজনৈতিক কারণে জিএসপি সুবিধা  পাইনি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শুধু রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল না হলে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিশেষ দেশের প্রতি বিশেষ নজর না দিয়ে বাজার বহুমুখীকরণের দিকে নজর দেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত সেøাভেনিয়ার রাষ্ট্রদূত দারজা বাভদাজ কুরেতের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গত ২৯ জুলাই থেকে বিশ্বের ১২২টি দেশ ও অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস) পুনর্বহাল করা হয়। এই তালিকায় সার্কভুক্ত ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও পাকিস্তান থাকলেও তাতে নেই বাংলাদেশের নাম। জিএসপি পাওয়া দেশ ও অঞ্চল থেকে পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিনা শুল্কে রফতানি করা যায়। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক কারণ ছাড়া, রাজনৈতিভাবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা ছাড়া এটা (জিএসপি) না পাওয়ার কোন কারণ নেই। যেখানে বারাক ওবামা নাইরোবিতে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন, সেখানে সামান্য জিএসপি সুবিধা না পাওয়ার কোন কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১৬টি শর্ত পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার ধারণা জন্মেছে এ শর্তের চেয়েও যদি আমরা বেশি কিছু করি তারপরও তারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবে না। আমরা আশা করব, আমাদের সঙ্গে যেহেতু টিকফা (ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট) আছে, এর আওতায় তারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবে। তাদের দেয়া শর্ত পূরণের পরও জিএসপি ফিরিয়ে না দেয়ার ব্যাখ্যা চাওয়া কিংবা নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, জিএসপি পাওয়ার জন্য আমি কোন উদ্যোগ নিতে রাজি না। আমরা আমাদের শর্ত পূরণ করেছি, আমাদের আর কিছু করার নেই। ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিকদের ব্যাপারে একটি পয়েন্টই আনে তারা। ভিয়েতনামে কি শ্রমিকদের স্বাধীনতা আছে? সেখানে তো এক পার্টি, সেখানে কন্ডিশন কি শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের সেটা কি আমরা জানি। পাকিস্তানে কি অবস্থা এটা কেউ জানে, সেখানে নিত্য-নতুন জঙ্গী তৎপরতা কত কিছু হচ্ছে। সুতরাং আমাদের আর কিছু করার নেই। তবে কী জিএসপি ফিরে পেতে ট্রেড ইউনিয়ন বাধাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেখুন আমি অনেক কথা বলতে চাই না। তৈরি পোশাককে জিএসপি দেয় না, মার্কেট এক্সেস দেয় না। কিন্তু তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিয়ে তারা কথা বলে। তারা প্লাস্টিকের ও সিরামিকের ওপর জিএসপি দিয়েছে। কিন্তু সে কারখানা নিয়ে তো কোন প্রশ্ন নেই। যেটার সুবিধা দেবেন না কিন্তু তা টেনে নিয়ে আসবেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, অপরদিকে একটি কথা বলা প্রয়োজন, আমাদের দেশের কিছু শ্রমিক নেতা যারা কারখানায় কাজ করে না। যারা আন্তর্জাতিক কোন কোন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তারা আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। ইউএসটিআরে (ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ) চিঠি দেয়া, কংগ্রেসম্যানদের চিঠি দিয়েছে তারা, যারা কারখানার শ্রমিক না। ব্যক্তিগতভাবে বলতে কোন দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের উত্থান পৃথিবীর অনেক দেশ পছন্দ করে না। বিশেষ করে যে সমস্ত দেশ মুক্তিযুদ্ধকালীন আমাদের সমর্থন করেনি তাদের কাছে আমরা অপছন্দনীয়, কারণ বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান। যারা এক সময় বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, তারা যখন বলে বিস্ময়কর উত্থান, আমরা আরও উপরের দিকে যাই এটা অনেকেই চায় না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সব দেশই বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে। এবার আফ্রিকান কতগুলো দেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়েছে, তারা এক্সপোর্টই করতে পারে না। যে ১২২টি দেশকে জিএসপি দেয়া হয়েছে, তারা আগেও এ সুবিধা পেত। এখানে কোন নতুন দেশের নাম ইনক্লুড হয়নি। জিএসপি স্থগিতে আমাদের রফতানির কোন ক্ষতি করেনি। জিএসপি স্থগিতের পর প্লাস্টিক ও সিরামিক পণ্যের রফতানির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অতি দরিদ্র ও দরিদ্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা দিতে চলতি বছরের ২৯ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা এই স্কিমে পুনর্বহাল সম্পর্কিত আইনে (এইচআর ১২৯৫) স্বাক্ষর করেন। ইউএসটিআরের ওয়েবসাইটে নতুনভাবে সুবিধা পাওয়া দেশগুলো হচ্ছে- ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি, পশ্চিম আমেরিকা এনামিক এ্যান্ড মনিটরি ইউনিয়ন, সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসডিসি) সাউথ এশিয়ান এ্যাসোসিয়েশন ফর রিজওন্যাল কো-অপারেশনে (এসএএআরসি) রয়েছে আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। আর আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডও রয়েছে। এদিকে, জিএসপি স্কিমে রফতানি অবদান ছিল মাত্র ২৩ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। শতাংশ হারে এর অবদান ০.২৫ শতাংশেরও কম। যদিও বর্তমানে দেশে ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একক বাজার রয়েছে ৫০০ কোটি ডলারের। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেসব পণ্য রফতানি হয়, আর্থিক মূল্যে তার ৯৯ শতাংশই যাচ্ছে তৈরি পোশাক। জিএসপি স্কিম বহাল থাকা অবস্থায় এই বিপুল পরিমাণ পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বন্দরে ন্যূনতম ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে। জিএসপি পাওয়া উচিত বলে মনে করেন কংগ্রেসওম্যান ম্যালোনি ॥ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক-কোটামুক্ত প্রবেশের যৌক্তিকতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসওম্যান ম্যালোনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কংগ্রেসওম্যান ক্যারোলিন বি ম্যালোনি আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশের দীর্ঘদিনের দাবির যথার্থতা সমর্থন করে এ মন্তব্য করেন। তিনি উগ্র-ধর্মীয় কর্মকা-ের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের লড়াই এবং বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিবেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রশংসা করেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন নিউইর্য়ক ম্যানহাটনে কংগ্রেসম্যানের অফিসে সোমবার ম্যালোনির সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি এ কথা বলেন। ম্যালোনি বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। বর্তমানে যখন দেশটি সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মীয় উগ্রতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখন কেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে না?
×