ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৭ প্রধান লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ॥ সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক সম্মেলনে অনুমোদন

সফলভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন ॥ রোল মডেল হতে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ আগস্ট ২০১৫

সফলভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন ॥ রোল মডেল হতে চায় বাংলাদেশ

তৌহিদুর রহমান ॥ দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, সকল শিশুর জন্য সমান শিক্ষা, সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) কর্মসূচীতে যোগ দেবে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৯৩টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও এই নতুন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর মেয়াদী এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে জাতিসংঘ। আগামী মাসে নিউইয়র্কে এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু হবে। জাতিসংঘের এমডিজি কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়নের পর এসডিজি কর্মসূচী বাস্তবায়নেও রোল মডেল হতে চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) কর্মসূচীর মেয়াদ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হচ্ছে। এই কর্মসূচীর পর এখন বিশ্বজুড়ে নতুন কর্মসূচী আসছে। এমডিজিতে অনেক দেশ অন্তর্ভুক্ত না হলেও এসডিজি বাস্তবায়নে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্মসূচী। কেননা এর আগে বিশ্বের এতগুলো দেশে একযোগে কোন কর্মসূচী বাস্তবায়ন হয়নি। এসডিজির মাধ্যমেই বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বড় কর্মসূচী বাস্তবায়িত হবে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী জানিয়েছে, এসডিজি কর্মসূচীতে ১৭টি প্রধান লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে সকল দেশ (৪ পৃষ্ঠা ৩ কঃ দেখুন) রোল মডেল (প্রথম পৃষ্ঠার পর) থেকে দারিদ্র্য বিলোপ ক্ষুধা নিবারণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পুষ্টি উন্নয়ন ও টেকসই কৃষিব্যবস্থা উন্নয়ন। সকলের জন্য সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা। সকল শিশুর জন্য সমান শিক্ষা ও সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা। নারীর সমান অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করার জন্য টেকসই ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনার টেকসই উন্নয়ন। শিল্প ব্যবস্থাপনার টেকসই উন্নয়ন। সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন ইত্যাদি। বিশ্বজুড়ে এসডিজি কর্মসূচী নেয়ার লক্ষ্যে গত তিন বছর ধরে জাতিসংঘ কাজ করছে। ১৫ বছর মেয়াদী এই কর্মসূচীতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, সে বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে এই কর্মসূচী চূড়ান্ত করেছে জাতিসংঘ। এই কর্মসূচী নেয়ার জন্য প্রায় এক শ’টি দেশে জাতীয় পরামর্শ সভা হয়েছে। এসব পরামর্শ সভা থেকে এই কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়। এসডিজির প্রধান লক্ষ্যমাত্রা ১৭টি হলেও আরও ১৬৯টি সহযোগী লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এসব লক্ষ্যমাত্রা উন্নয়নে এক যোগে কাজ করবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের সব সদস্য দেশই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। আগামী ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এসডিজি শীর্ষ সম্মেলন হবে। এই সম্মেলনে যোগ দেবে বাংলাদেশ। সেখানেই এসডিজি কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হবে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন, ২০০০ সালে কেউ ভাবেনি বাংলাদেশে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করবে। তবে এমডিজিতে যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এর সবই আমরা অর্জন করেছি। যেখানে পৃথিবীর ৫০টি দেশ এখনও তাদের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সামর্থ্য অনেক বেশি। সেজন্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও আমরা অবশ্যই এগিয়ে থাকব। বিশ্বজুড়ে এসডিজি অর্জনে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। আর এই অর্থ সংগ্রহেও কাজ করছে জাতিসংঘ। এসডিজি অর্জনে প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহে সহায়তায় আগামী তিন বছরে চার হাজার কোটি ডলার দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা। সংস্থাগুলো হলো আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক, ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক, ইন্টার আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। জাতিসংঘের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা (আঙ্কটার্ড) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্বল্পোন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হতে চাইলে ২০১৫ পরবর্তী ১৫ বছর মেয়াদী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে (এসডিজি) সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এসডিজিই হবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। জাতিসংঘের এই সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী কাঠামোগত যে পরিবর্তন এসেছে, সে আলোকে নীতির সংস্কার আনতে হবে। একই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিল্পায়নে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, উৎপাদনশীলতা এবং সম্পদ আহরণ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলেছে সংস্থাটি। এসডিজি কর্মসূচী বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি। এটা আশার কথা। বাংলাদেশের অর্থনীতি রেমিটেন্স, তৈরি পোশাক রফতানি ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে রেমিটেন্স ও তৈরি পোশাক রফতানি বিশ্ব অর্থনীতির উত্থান-পতনের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দীর্ঘমেয়াদে তা টেকসই নাও হতে পারে। সে কারণে এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা এশিয়ার অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নে নিজেদের সম্পদ আহরণ বাড়াতে হবে। এদিকে এমডিজির সাতটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, শিক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশের সাফল্য এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই এমডিজির সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চায় বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যেই উন্নয়ন অগ্রগতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে সাফল্য অর্জন করায় জাতিসংঘ এমডিজি পুরস্কারও পেয়েছে।
×