ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের মানুষকে আনন্দ দিতে চাই ॥ রনি

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১১ আগস্ট ২০১৫

বাংলাদেশের মানুষকে আনন্দ দিতে চাই ॥ রনি

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘আশে-পাশে শুভঙ্কর দা নেইতো’-প্রতিকী এই কথাটাকে ভিত্তি করে ভারতের জি বাংলার জনপ্রিয় কমেডি শো মিরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার ৬ প্রতিযোগিতায় শুরু থেকে বিশেষ এক স্থান দখল করে নিয়েছিলেন নাটোরের ছেলে আবুহেনা রনি। প্রতি পর্বের শেষের দিকে পারফর্ম করতে দেয়া হতো তাকে। মানুষকে আনন্দ দেয়ার এক অসাধারণ ক্ষতমার কারনেই হয়ত তাকে শেষের দিকে রাখা হতো। কারণ অনেকেই মিরাক্কেলে তার পারফর্ম দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতেন জি বাংলার পর্দার দিকে। দুই বাংলা হতে প্রাপ্ত তের লক্ষ ভোটের মধ্যে বাংলাদেশের গর্ব লাজুক এই ছেলেটি একাই পেয়েছিলেন তিন লাখ ভোট। নতুন নতুন জোকস্ আর সেগুলোকে দর্শকের কাছে উপস্থাপনের ভঙ্গিমা ছিল তার অসাধারণ এক প্রতিভার বহি:প্রকাশ। অবশেষে এ কমেডি শোয়ের গ্রান্ড ফিনালের ট্রফিটা অনায়াশেই অর্জন করে নেয় বাংলাদেশের কমেডি প্রতিভা আবুহেনা রনি। নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত ৫ নং চামারী ইউনিয়নের বিলদহর গ্রামে ১৯৮৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর আবুহেনা রনির জন্ম। তার বাবা আব্দুল লতিফ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং মা বিনা বেগম একজন গৃহিণী। চার ভাইয়ের মধ্যে রনি দ্বিতীয়। একান্নবিঘা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু। এরপর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে, বিলদহর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক(এসএসসি) এবং রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজ হতে উচ্চ-মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাশ করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। জীবনের গল্পের সঙ্গে মিরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জর ৬ এর গল্প শোনালেন রনি। ছোটবেলা থেকেই কৌতুক উপস্থাপনার মাধ্যমে বন্ধুদের আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করতেন। ২০১০ সালে এনটিভিতে প্রচারিত ‘হা-শো’ অনুষ্ঠানে তিনি প্রথম কৌতুক উপস্থাপনে অংশ নেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের জুলাই মাসে ভারতের জি বাংলায় প্রচারিত কমেডি শো মীরাক্কেলে অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানের প্রথম প্রায় ৮৬ টি পর্বে অংশ নিয়ে তার ৩০টিতে তিনি একক ও ৫০ টিতে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০১২ সালে মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জারস ৬-এর বিজয়ী হন। রনি বলেন, মিরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার ছয়ের জন্য আমরা প্রায় দেড় বছর ধরে কলকাতায় ছিলাম। আমাদের বিভিন্ন আড্ডা ও গল্পের ছলে নতুন নতুন জোকস্ তৈরী হয়ে যেত। সব সময় এক আনন্দের মুহুর্তের মধ্যে আমাদের সময় কাটত। মাঝেমধ্যে বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ত। কিন্তু দুই বাংলার মানুষের এত এত ভালবাসার কারণে তেমন মন খারাপ হতো না। বর্তমানে তিনি নতুন কৌতুক অভিনেতা তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশে কৌতুকে আরও জনপ্রিয় করার লক্ষে ‘বুনো পায়রা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি বাংলাদেশ কমেডি ক্লাবের উদ্যোগে দেশের সাত বিভাগে সাতটি কমেডি ক্লাব তৈরি করেছেন। মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্সে বিজয়ের পর ২০১৪ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় মীরাক্কেল জোকস্ ‘ল্যাও ঠ্যালা’ শিরোনামে কৌতুক বিষয়ক তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে ‘আনন্দ টাই মাটি’ শিরোনমে তার আরেকটি বই প্রকাশিত হয়। রনি ‘কাকতাড়–য়ার দেশে’, চতুষ্কোণ ইত্যাদি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। এছাড়া গৌতম কৈরীর ‘কাগজের ক্যামেরা’ এবং ‘জ্যোছনায় মেঘের আচড়’ নামে দুটি টেলিফিল্মেও অভিনয় করেন। মনিরুল ইসলাম সোহেলের ‘স্বপ্ন যে তুই’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। এরপর অভিনয় করেন তন্ময় তানসেনের পরিচালনায় ‘পদ্ম পাতার জল’ (২০১৫) চলচ্চিত্রে বিষু চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মুক্তিপ্রতিক্ষিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘টম অ্যান্ড জেরি’। কৌতুক অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে উপস্থাপনা করছেন। এর মধ্যে জি টিভিতে ফারহানা নিশোর সঙ্গে সফল নারীদের নিয়ে অনুষ্ঠান ‘আজকের অনন্যা’ (শুক্রবার রাত ৮-৪০মিনিটে), এটিএন বাংলায় কমেডি আওয়ার ও সিনে মিউজিক (রবি থেকে বৃহস্পতিবার (রাত ১-২০ মিনিটে), বাংলাভিশনে বাচ্চাদের কমেডি শো ‘ক্ষুদে রসিকরাজ (বুধবার বিকেল ৫-২৫ মি. ও শুক্রবার বেলা দেড়টায়) এবং বিটিভিতে মাসিক কমেডি শো ‘হাসতে মোদের মানা’ উল্লেখযোগ্য। রনি শোনালেন তার নতুন জোকস্-একটি লোক গর্তের পাশে বসে আছে। গর্তের মধ্যে একটি কাগজে লিখে রেখেছে প্রেম। জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা এমন কেন? বললেন, দেখছি লোকজন কিভাবে প্রেমে পড়ে। রনি এভাবেই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে আনন্দ দিতে চান। সেই লক্ষ নিয়ে তৈরি করবেন কৌতুক। আর এগুলো বিভিন্ন সংগঠন ও মাধ্যমের দ্বারা পৌছে যাবে মানুষের কাছে।
×