ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ বৈঠক

জনশক্তি রফতানি বিষয়ে আলোচনা করতে মালয়েশীয় দল ঢাকায়

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১১ আগস্ট ২০১৫

জনশক্তি রফতানি বিষয়ে আলোচনা করতে মালয়েশীয় দল ঢাকায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ থেকে বেসরকারীভাবে জনশক্তি রফতানির বিষয়ে আলোচনা করতে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। রবিবার তারা ঢাকায় এসে পৌঁছান। আজ মঙ্গলবার তারা প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে মালয়েশিয়ার পাঁচ সদস্যের কারিগরি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। এই কারিগরি বা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিনিধি দলটির সরকারী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার সরকারী প্রতিনিধি দলের প্রধান অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তফা বিন ইব্রাহিম। তার সঙ্গে রয়েছেনÑ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদমর্যাদার আন্ডার সেক্রেটারি শাহিল ইসলাম, জামিরি বিন মাত জায়িন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জুলকিফিল ইয়াকুব। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এসেছেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম। রবিবার রাতে সরকারী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নৈশভোজে অংশ নেন জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) নেতৃবৃন্দ। সোমবার প্রতিনিধি দল বিএমইটি পরিদর্শন করেছেন। মঙ্গলবার সকালে প্রথমে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও পরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। বৈঠকে চূড়ান্ত হবে কবে নাগাদ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হবে। সরকারীভাবে জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া (জিটুজি) ব্যর্থ হওয়ার পর বেসরকারীভাবে ১৫ লাখ কর্মী নেয়ার ঘোষণা দেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি। সরকারী প্রতিনিধি দল আসার দু’দিন আগেই ঢাকায় এসে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে রিয়েল টাইম নেটওয়ার্কি নামে মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারী তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী মোঃ আবু হানিফ রিয়েল টাইম নেটওয়ার্কের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উর্ধতন কর্মকর্তা রাজা আজহার প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। এছাড়া নির্বাহী চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম হামিদি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্বাস আলী ও অপারেশন ম্যানেজার রসলি বিন আবগানি ও পরিচালক নুর ফিজারানা। তারাও সরকারী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। এদিকে, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয় নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করব। কর্মী পাঠানোর সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পরই মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ শুরু করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দেশের জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখের বেশি কর্মী নিয়োগ দেবে। তবে এবার তারা বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ১৪ লাখ কর্মী যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন মালয়েশিয়া আসার জন্য তাদের থেকেই কর্মী নিয়োগ হবে। তবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ দক্ষ কর্মী নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেবেন। একটি কমন সার্ভারে কর্মীদের সব ধরনের তথ্য থাকবে। মালয়েশিয়ার কোন্ কোম্পানিতে কত কর্মী নিয়োগ হবে তা ওই কমন সার্ভার থেকেই বাছাই করা হবে। সে অনুযায়ী বেসরকারী জনশক্তি রফতানিকারকদের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা নেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ হবে। অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ হলে জনশক্তি রফতানিকারকরা নিবন্ধন ছাড়া কোন কর্মী পাঠাতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, কর্মীদের কাছ থেকে বেশি টাকাও নিতে পারবেন না। স্বচ্ছতার মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের জন্য উভয় দেশই নীতিগতভাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সরকার যে সমালোচনার সম্মুখীন হয় তার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার সরকারের প্রস্তাব অনুসারে বিটুবি পদ্ধতি মেনে নেয়া হয়েছে। বিটুবি পদ্ধতি যাতে প্রতারণা ও শঙ্কামুক্ত হয়, তা নিশ্চিত করতে উভয়পক্ষ মিলে বিষয়টি নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি এসব নিশ্চিত করবে, যাতে পরে কোন ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে না হয়। তবে সরকার টু সরকারের মাধ্যমেও কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম চলবে। বেসরকারীভাবেও যাতে কম খরচেই কর্মীরা মালয়েশিয়ায় যেতে পাররেন এ বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, জিটুজি চুক্তি হওয়ার পর থেকে গত আড়াই বছরের বেশি সময়ে মাত্র পাঁচ হাজারের মতো কর্মী সরকারীভাবে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এসব কর্মী পাঠানো হয় শুধু প্ল্যান্টেশন খাতে। বনায়ন বা পামগাছ রোপণ ও পরিচর্যা খাতে, যা অপেক্ষাকৃত কষ্টকর কাজ। তার বিপরীতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সমুদ্রপথে নৌকাযোগে ২০১৪ সালেই ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মানবপাচারকারীদের হাত ধরে মালয়েশিয়া গেছে। এসব কারণ বিবেচনা করে মালয়েশিয়া বেসরকারীভাবে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
×