ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্কুলে স্কুলে ভোট উৎসব ॥ ছাত্ররাই তৈরি করল ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৯ আগস্ট ২০১৫

স্কুলে স্কুলে ভোট উৎসব ॥ ছাত্ররাই তৈরি করল ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেবল নির্বাচন নয়, এ যেন নির্বাচনী উৎসব। আর এই উৎসবে শামিল হতেই শনিবার বিদ্যালয়ে এসেছিল লাখ লাখ শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক স্তরের এক হাজার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী উৎসবে শামিল হলো লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত ছিল শিক্ষাঙ্গন। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পা রেখেই তারা মেতে ওঠে উল্লাসে। শুরু হয় ভোট দেয়ার পালা। নিজ নিজ স্কুলে নির্বাচনী উৎসবে শামিল হয়ে শিক্ষার উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরই ভোট দিয়ে নির্বাচন করলেন নিজেদের প্রতিনিধি। গঠন করলেন ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’। নির্বাচন কমিশনার, প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছে শিক্ষার্থীরাই। শৃঙ্খলা রক্ষায় কেউ কেউ হয়েছে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠনের সফলতার ধারাবাহিকতায় শনিবার দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গঠন করা হয় ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’। ইতোমধ্যেই এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘ছোটদের মন্ত্রিপরিষদ’ হিসেবে। স্টুডেন্ট কেবিনেটের কর্মপরিধিতে আছে- পরিবেশ সংরক্ষণ (বিদ্যালয়, আঙ্গিনা, টয়লেট পরিষ্কার এবং বর্জ ব্যবস্থাপনা), পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য; ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সহপাঠ কার্যক্রম, পানি সম্পদ বৃক্ষ রোপণ ও বাগান তৈরি (সবুজায়ন), দিবস পালন ও অনুষ্ঠান সম্পাদন, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন এবং আইসিটি। লক্ষ্য-কৈশোর থেকে ছাত্রদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা, অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানে শিক্ষকদের সহায়তা, ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষাকার্যক্রমে অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, পরিবেশ উন্নয়ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। স্টুডেন্টস কেবিনেট স্কুলের পরিবেশ সংরক্ষণ, পুস্তক ও শিক্ষণ সামগ্রী, স্বাস্থ্য ক্রীড়া, সাংস্কৃতি ও সহপাঠ কার্যক্রম, বৃক্ষ রোপণ, বাগান তৈরি, জাতীয় দিবস পালন ও আইসিটি বিষয়ক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে। প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৪৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে এ কেবিনেট গঠন করা হয়। সরাসরি ছাত্র ছাত্রীদের ভোটে নির্বাচন করা হয় কেবিনেট সদস্য। পরীক্ষামূলকভাবে দেশের প্রত্যেক উপজেলা ও মহানগরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩টি করে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠন করছে। বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভোট দানের সুযোগ পায়। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ভোটার তালিকাভুক্ত যে কোন শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রার্থীও হতে পেরেছে। প্রত্যেক ভোটার প্রত্যেক শ্রেণীতে একটি এবং সর্বোচ্চ তিনটি শ্রেণীতে দুটি করে মোট ৮টি ভোট প্রদান করে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে একজন করে এবং অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীতে দুজন করে ৮ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠিত হয়। এ নির্বাচন ছিল সম্পূর্ণভাবে অরাজনৈতিকভাবে। এতে কোনো পোস্টার ছাপানো যায়নি, প্রার্থীদের কোনো প্রতীকও ছিল না। তবে প্রার্থীরা হাতে লেখা একাডেমিক ও শিক্ষা উন্নয়নমুখী স্লোগান সংবলিত পোস্টার ব্যবহার করার সুযোগ পায়। স্টুডেন্টস কেবিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। প্রতি ছয়মাস অন্তর সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতিতে স্টুডেন্ট কেবিনেটের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ছোটদের মন্ত্রিপরিষদ গঠনকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে শনিবার ছিল অনেকটা উৎসবের আমেজ। শিশুরা নিজেরাই ভোটার, প্রার্থীও নিজেরা। আবার নিজেরাই পালন করছেন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব; লাইন ধরে ভোট চলছে উৎসবমুখর পরিবেশে। শিক্ষামূলক ছোট ছোট সেøাগানে হাতে লেখা ছোট পোস্টারে ছেয়ে যায় পুরো ক্যাম্পাস। ঢাক-ঢোলসহ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।
×