ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্মৃতির রাজ্যে রঙিন বিপাশার ক্যানভাস

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৯ আগস্ট ২০১৫

স্মৃতির রাজ্যে রঙিন বিপাশার ক্যানভাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্মৃতির পাতায় রং ছড়িয়েছেন চিত্রকর বিপাশা হায়াত। বর্ণের ওপর বর্ণ চাপিয়ে শিল্পী ফিরে গেছেন অতীতের আয়নায়। তাঁর ক্যানভাস যেন পরিণত হয়েছে রঙের মিছিলে। সেই বর্ণবহুল মিছিল এসে মিশেছে শিল্পীর হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির অলিন্দে। জীবনকে রাঙিয়ে তোলা খ- খ- মুহূর্তগুলো প্রকাশিত হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত বিমূর্ত আবেগে। আর এভাবেই স্মৃতির রাজ্যে রঙিন হয়েছে বিপাশার ক্যানভাস। সৃজনের বৈভবে অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র রূপ পেয়েছে তাঁর চিত্রশিল্পীর পরিচয়টি। শনিবার থেকে গুলশানের বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে শুরু হলো গুণী এই শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শিরোনাম স্মৃতির রাজ্য। শনিবার শ্রাবণ সন্ধ্যায় যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকার কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লী ইউন ইয়াং এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক ও চিত্রসমালোচক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিপাশা হায়াত। উপস্থিত ছিলেন আর্ট লাউঞ্জের পরিচালক নওশীন খায়ের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বিপাশার বাবা বরেণ্য অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত এবং জীবনসঙ্গী অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। প্রদর্শনী পরিদর্শনে আসেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর, শিল্পসমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের প্রমুখ। এছাড়াও ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, বরেণ্য অভিনেতা আফজাল হোসেন, চিত্রশিল্পী বীরেন সোম, খালিদ মাহমুদ মিঠুসহ শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে প্রদর্শনী প্রাঙ্গণ। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে বিপাশা বলেন, আমার ছবির টুকরো অংশগুলো প্রতিনিধিত্ব করে আমার টুকরো স্মৃতিগুলোকে। আর যে লাইনগুলো দিয়ে এগুলো আলাদা করা সেটা একে আহ্বান করে আমার বর্তমানে। ক্যানভাসটা আসলে এ দুইটি সময় অতীত বর্তমান এবং আমার মৌলিক আবেগ ধরে রাখার জায়গা। সেভাবেই নিজের মনের ভাবনাগুলো ক্যানভাসে তুলে এনেছি। এই শিল্পী আরও বলেন, মানুষের দেহ সীমাবদ্ধ হলেও মনের পরিধি অসীম। ক্যানভাসে সেই অসীম মনের রাজ্য থেকে স্মৃতির টুকরোগুলো ভাসিয়ে দিয়েছি। নিজের অভিনয়শিল্পীর সত্তা প্রসঙ্গে বলেন, ক্যানভাসের সামনে দাঁড়ানো যে আমি সে ভিন্ন মানুষ। সেখানে আমার অভিনয় জগতের একটা অংশমাত্র। আমার সমগ্র জীবন আর সেই জীবনের নির্যাসকে তুলে আনতে চাই ক্যানভাসে। বিপাশা হায়াতের ছবি প্রসঙ্গে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিপাশা ক্রমশই নিজেকে ভাঙছে। এর আগেও প্রদর্শনীতেও ওর ছবি দেখেছি। এবারেরটা দেখে মনো হলো সে নতুন করে নিজেকে উপস্থাপন করছে। বোঝা যায় তাঁর এই শিল্প-যাত্রার সঙ্গে জুড়ে নিবিড় শ্রম ও মনোযোগ। প্রথম থেকেই নিজের শিল্প-ভাষা সৃষ্টি করতে চাইছেন বিপাশা। প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, গ্যালারিজুড়ে থরে থরে সাজানো এক রঙের পৃথিবী। বর্ণিল সব ক্যানভাস। রঙের আঁচড়ে ফুটে উঠেছে জীবনের বহুবর্ণিল অবয়ব। গাঢ় রং শিল্পীর প্রিয়। সেই গাঢ় রঙে তিনি ভরে তুলেছেন তাঁর স্মৃতি-বিস্মৃতির পৃথিবী। শৈশব-কৈশোরের রঙিন দিন, ফেলে আসা স্মৃতির রাজ্য, যাপিতজীবনের টুকরো ভাবনা তাতে প্রতীয়মান। বিপাশার ছবি তাঁর একান্তই নিজের। নিজের মতো করে তিনি রাঙিয়েছেন ক্যানভাস। পরাবাস্তব পৃথিবীর জয়গান গেয়েছেন, সুর ও ছন্দে ভরিয়ে তুলেছেন বাস্তবতা আর অধিবাস্তবতার জগৎ। পরাবাস্তব জগত আঁকতে গিয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন জ্যামিতিক ফর্ম। একই সঙ্গে ব্যবহার করেছেন মোটা ও সূক্ষ্ম রেখা। রেখাগুলো ছন্দময়। দূর থেকে দেখে মনে হয়, যেন নৃত্যরত তাঁর ক্যানভাস। তাতে দেখার আনন্দ টের পাওয়া যায়। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে মোট ৩৬টি চিত্রকর্ম। এর মধ্যে রয়েছে ২৮টি পেইন্টিং ও ৮টি ড্রইং। তিন সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২৯ আগস্ট। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চিত্রশালায় গানে গানে রবীন্দ্রনাথ স্মরণ ॥ বাঙালীর মননের দিশারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম প্রয়াণবার্ষিকী ছিল বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে শনিবার কবিগুরুকে স্মরণ করল বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংসদ। সঙ্গীতসন্ধ্যায় গানে গানে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা বিশ্বকবিকে। সুরে সুরে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে। সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায়Ñ আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী...। সমবেত সঙ্গীত শেষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংসদের সহযোগী সভাপতি দোদুল আহমেদ। সংক্ষিত কথন শেষে শুরু গানের পালা। বিচার ও সংঘাত বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ॥ শনিবার থেকে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী বিচার ও সংঘাত বিষয়ক দক্ষিণ এশীয় প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদ ও বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। জাস্টিস প্র্রোজেক্টের অধীনে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতারা পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। সেই সব ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। উদ্বোধনী দিনে বিকেলে প্রথমেই অনাড়ম্বর উদ্বোধন ও পরিচালকদের সঙ্গে পরিচয় পর্ব। এরপর শুরু হয় প্রদর্শনী। বিকেল সোয়া ৫টায় দেখানো হয় প্রসন্ন ভিতানাগে পরিচালিত শ্রীলঙ্কান ছবি ‘সাইলেন্স ইন দ্য কোর্টস’ এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রদর্শিত রাহুল রয় পরিচালিত ভারতীয় ছবি ‘দ্য ফ্যাক্টরি’। এছাড়া প্রথম দিনে প্রদর্শিত হয় আমার আজিজ পরিচালিত পাকিস্তানী ছবি ‘এ ওয়ালনাট ট্রি’ এবং কেসাং সিটেন পরিচালিত নেপালী ছবি ‘ক্যাস্টওয়ে ম্যান’। আজ রবিবার বিকেল ৫টা ও ৭টায় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। প্রদর্শনী শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেবেন প্রামাণ্যচিত্রগুলোর পরিচালকরা। এ অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্স সেন্টার, সেন্টার দি রিসার্চার্স পোর লে ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্লাস্ট। মঞ্চস্থ বটতলার নতুন নাটক মধুশিকারি ॥ মঞ্চে এসেছে নাট্যদল বটতলার নতুন নাটক মধুশিকারি। কার্তিক নায়ারের দ্য হানি হান্টার অবলম্বনে প্রযোজনাটির নাট্যরূপ দিয়েছেন কবি শামীম আজাদ। বটতলার এই ষষ্ঠ প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটম-লে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। সুন্দরবনের মধুশিকারি শনু মিয়ার রোমাঞ্চভরা জীবন নিয়ে এগিয়ে যায় মধুশিকারির গল্প। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে শনু মিয়ার পরিবার হারায় সব; যেমন সুন্দরবনের গাছপালা-পশুপাখি হারায় প্রাণ। কিন্তু প্রকৃতি তার নিজের খেলায় নিজেকে পুনর্নির্মাণ করে। অর্বাচীন শনু মধু ক্ষুধায় কাতর হয়ে অকালে মধু শিকার করে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বনের রক্ষাকর্তা দক্ষিণ রায় মতান্তরে রয়েল বেঙ্গল টাইগার মানুষের হিংস্রতারূপী শনু মিয়াকে সংহার করে নিতে চায় প্রতিশোধ। বনবিবির বাধায় শিশু শনু মিয়া প্রাণ ফিরে পায় কিন্তু এক শর্তে। কী সেই শর্ত? সুন্দরবনের সঙ্গে অসংখ্য শনু মিয়ার জীবনের গল্প উপস্থাপিত হয় নাট্যমঞ্চের অন্য আলোয়। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন তৌফিক হাসান, হুমায়রা আক্তার, ইভান রিয়াজ, সেঁউতি শাহগুফতা, পারভিন কণা, অনিন্দিতা বিশ্বাস দোলা, তাহিম জহির ও প্রীতি। বাদ্যযন্ত্র ও কণ্ঠে ছিলেন মোহাম্মদ আলী হায়দার, সামিনা লুৎফা নিত্রা, শারমিন ইতি, রাখাল আবেদিন, বাকেরুল ইসলাম ও ভুলু ধর।
×