ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৯ আগস্ট ২০১৫

শোকের মাস

শরীফুল ইসলাম ॥ এবার শোকের দিনে জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এজন্যই তিনি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে দেশের বাইরে থাকার কৌশল নিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ১১ আগস্ট তিনি লন্ডন যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই তার লন্ডন সফরের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকালে সিঙ্গাপুর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সেখানে যাচ্ছেন। সূত্রমতে, সরকারী দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহল থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে এবার ১৫ আগস্ট শোকের দিনে জন্মদিন পালন না করার আহ্বান জানানোর পর বিএনপির থিংকট্যাংক বলে পরিচিত কিছু বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে তিনি ওই সময় দেশের বাইরে থাকার কৌশল নেন। তাই এ সময়ে লন্ডন গিয়ে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যেই তার লন্ডন সফরের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, ১১ আগস্ট খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ১০ আগস্ট আদালতে তার একটি মামলার হাজিরার তারিখ রয়েছে। যদি মামলাজনিত কোন কারণে সমস্যা না হয় তাহলে তিনি ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডন যাবেন। সেখানে ছেলে ছাড়াও ছেলের বউ ডাঃ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানের সঙ্গে একান্তে কিছুদিন সময় কাটাবেন। আর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এবার দেশে দলীয়ভাবে তার জন্মদিন পালনের কর্মসূচী নাও থাকতে পারে। বিএনপির কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘদিন ধরে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় ছিলেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। প্রথমে চেয়েছিলেন সৌদি আরবে ছেলের সঙ্গে সাক্ষাত হলে সেসব বিষয়ে তার পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এবার রোজার মাসে বিভিন্ন সমস্যার কারণে ওমরা করতে সৌদি আরব যাওয়া হয়নি খালেদা জিয়ার। এছাড়া পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকায় ছেলে তারেক রহমানও লন্ডন থেকে সৌদি আরব আসতে পারছিলেন না। তাই এবার লন্ডন গিয়ে কিছুদিন অবস্থান করে ছেলের পরামর্শ নিয়ে তিনি দলের ঝুলে থাকা কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান। আর এসব বিষয় ভালভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বার্থে খালেদা জিয়ার সফরকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও লন্ডনে তলব করা হয়েছে। এ কারণেই বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও লন্ডন যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। লন্ডন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বেশ কিছুদিন অবস্থান করার পর মির্জা ফখরুল দেশে ফিরে আসবেন বলে জানা গেছে। লন্ডনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুলের মধ্যে বৈঠকে যেসব বিষয় আলোচনার মধ্যে আসতে পারে বলে জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছেÑ বিএনপির নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন, নিষ্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে উদ্যমী তরুণ নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা, সব জেলা কমিটি পুনর্গঠন, ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠন, দলের জাতীয় কাউন্সিল করা না করা, ভবিষ্যত আন্দোলন কর্মসূচী, ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের অবস্থান এবং পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। লন্ডন সফরের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত সফরেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তিনি প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশ সফর করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশল নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে প্রথমেই তিনি যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে সে দেশের সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি লন্ডনে সপরিবারে অবস্থানরত ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন। তবে ভারত সফরের দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। তবে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা খালেদা জিয়ার হয়ে ভারতের বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যখনই সুযোগ হবে তখনই তিনি ভারত সফরে যেতে চান। এর আগে ২০১২ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ভারত ও যুক্তরাজ্য সফরে গিয়েছিলেন। আর ২০১৪ সালের রমজান মাসে ওমরা করতে সৌদি আরব গেলে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয় খালেদা জিয়ার। সূত্রমতে, টানা ৯২ দিনের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। আন্দোলনের আগে বিএনপির প্রতি বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের নেক নজর থাকলেও ওই আন্দোলনে পেট্রোলবোমাসহ ব্যাপক নাশকতামূলক কর্মকা- হওয়ায় বিএনপির প্রতি অসন্তুষ্ট হয় অনেক প্রভাবশালী দেশ। এমনকি সৌদি আরবের সঙ্গেও আগের মতো আর সুসম্পর্ক নেই বিএনপির। এ কারণেই বিগত রমজান মাসে ওমরা করতে সৌদি আরব যাওয়া হয়নি খালেদা জিয়ার। এসব কারণে দলীয় হাইকমান্ডের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তবে এ অবস্থার অবসানে আবারও নতুন করে বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। এদিকে, এবার শোকের দিনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন না করার কৌশল হিসেবে লন্ডন সফরের বিষয়টি এখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মুখে মুখে। নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন এমন এক কেন্দ্রীয় নেতা কথা প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহল থেকে ১৫ আগস্ট শোকের দিনে খালেদা জিয়াকে জন্মদিন পালন না করার আহ্বান জানানো হয়েছে, সেহেতু এবার দলের নেতাকর্মীরা কিছুটা নিরুৎসাহিত হবেন- এটাই স্বাভাবিক। আর চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যেহেতু এ সময় লন্ডন সফরে থাকবেন তাই এবার আগের মতো আর কেউ উৎসবমুখর পরিবেশে চেয়ারপার্সনের জন্মদিন পালন করতে চাইবে না। ঢাকা মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, এবার ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়া বিদেশে থাকবেন। তাই অন্যান্যবারের মতো ঢাকা মহানগর বিএনপি বড় কেক নিয়ে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে হয়ত যাবে না। স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বলেন, হঠাৎ করে জন্মদিন উপলক্ষে একেবারে কিছু না করলে আবার প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই সীমিত আকারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করা হতে পারে। এ বিষয়ে ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার জন্মদিনে কেক কাটার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান জনকণ্ঠকে বলেন, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজে কখনও তার জন্মদিন পালন করেন না। আর এবার শুনেছি তিনি লন্ডন সফরে যাচ্ছেন। তবে তার অনুপস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীরা ইচ্ছা করলে জন্মদিন পালন করতে পারেন। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে যাচ্ছেন। তবে এবার ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন পালন করা হবে কিনা তা জানি না।
×