ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪৩ বছরে পাঁচবার নাম বদল ॥ তবুও সরকারী হয়নি কলেজ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৯ আগস্ট ২০১৫

৪৩ বছরে পাঁচবার নাম বদল ॥ তবুও সরকারী হয়নি কলেজ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সরকারীকরণের আশ্বাসে প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে পাঁচবার নাম পরিবর্তন করার পরেও আজ পর্যন্ত সরকারী করণ করা হয়নি। জেলার একমাত্র সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে অবস্থিত একমাত্র ডিগ্রী কলেজটি। যার বর্তমান নাম শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ। দীর্ঘদিনেও এ কলেজটি সরকারী করণ না হওয়ায় কলেজের স্টাফসহ পুরো উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার অবহেলিত বিলাঞ্চলের জনসাধারণের শিক্ষা-দীক্ষায় জ্ঞানার্জন করে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার প্রয়াসে স্থানীয় শিক্ষাবিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বিভূতি ভূষণ বিশ্বাস, মতিয়ার রহমান তালুকদার, ওহাব আলী ফকির, অতুল চন্দ্র মালাকার, নওয়াব আলী ফকির ও তপন কুমার বিশ্বাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালে ৫ একর জমির ওপর ‘বাংলাদেশ মহাবিদ্যালয়’ নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে কলেজটি সরকারী মঞ্জুরিপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘আগৈলঝাড়া মহাবিদ্যালয়’। ১৯৮২ সালে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে পুনরায় কলেজটি সরকারীকরণের আশ্বাসে নাম পাল্টে রাখা হয় ‘পল্লীবন্ধু এরশাদ কলেজ’। ওই সময় যদিও সাইন বোর্ড ছাড়া এই নামটি কোন কাগজ কলমে ছিল না। এরশাদ সরকারের পতনের রাতে কালো রং দিয়ে ওই নামটিও মুছে দেয়া হয়। ১৯৮৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিক্রমে ডিগ্রী কোর্স চালু করার পর কলেজের নামকরণ করা হয় ‘আগৈলঝাড়া ডিগ্রী কলেজ’। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ১০মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে কলেজের নতুন নামকরণ করা হয় ‘শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ’। জানা গেছে, শুধু সরকারীকরণের জন্য এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বাসে পাঁচবার কলেজটির নাম পরিবর্তন করা হলেও আজও সেই দাবি আলোর মুখ দেখেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদসহ একাধিক ক্ষমতাধর মন্ত্রী এ বিদ্যাপীঠ পরিদর্শন করে প্রত্যেকেই সরকারী করার আশ্বাস দিলেও উপজেলার প্রাণকেন্দ্রের একমাত্র কলেজটি আজও সরকারী করা হয়নি। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ১৫শ’ শিক্ষার্থী কলেজে লেখাপড়া করছে। শিক্ষক সংকটের পরেও বর্তমানে কলেজটিতে ৬৪ শিক্ষক, কর্মচারী রয়েছে। শিক্ষকদের জন্য নেই কোন আবাসিক ভবন। কলেজ থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ছাত্রদের জন্য ‘শহীদ সুরেন্দ্রনাথ ছাত্রাবাস’ নামে একটি ভবন থাকলেও তা ব্যবহারে সম্পূর্ণ অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভবন সংকটসহ বিজ্ঞানাগারে নেই পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। রাসায়নিক দ্রব্যের অভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ হেমায়েত উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ সরকারীকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। আবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে কলেজটি অডিট করা হয়েছে। এখন সম্পূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর। অবহেলিত বিলাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৪ লাখ বাসিন্দার এখন প্রাণের দাবি অচিরেই কলেজের সকল সমস্যা দূর করে যেন সরকারীকরণ করা হয়। আর এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
×