ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় ২০২ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৯ আগস্ট ২০১৫

পাবনায় ২০২ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৮ আগস্ট ॥ সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রায় তিন কোটি টাকার ২০২টি প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া এডিপির শেষ কিস্তির প্রকল্প কাজ সমাপ্ত না করে ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় ৪১ লাখ টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার সঙ্গে সাঁথিয়া এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী, নির্বাহী অফিসার ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের গত ৩০ জুনের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এডিপি (রাজস্ব উদ্বৃত্ত) হতে বরাদ্দকৃত এক কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে ৪৩ লাখ টাকায় ৩৬টি ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ৮২ লাখ টাকায় ৫৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। একই অর্থ বছরে মন্ত্রণালয় হতে এডিপি খাতে বরাদ্দ পাওয়া ৬৩ লাখ টাকার মধ্যে প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে ১৫ লাখ ৮২৮ টাকা ব্যয়ে ১৩টি এবং টেন্ডারের মাধ্যমে ৪৭ লাখ ৯৯ হাজার ১৭২ টাকা ব্যয়ে ৪৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মন্ত্রণালয় হতে এডিপি খাতে ৩৮ লাখ ৩ হাজার ও ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ৮৮ লাখ ৩ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে ৪৪ লাখ ২ হাজার টাকায় ৩২টি প্রকল্প এবং আরএফকিউ প্রক্রিয়ায় ৪৪ লাখ এক হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া একই অর্থ বছরে মন্ত্রণালয় হতে এডিপি (উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স) খাতে বরাদ্দকৃত ২৫ লাখ টাকার মধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে ৩টি গ্রুপে ২৪ লাখ ৬০ হাজার ৩০৩ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর, মেইন গেট নির্মাণ, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকৌশলীর দফতরের টয়লেট নির্মাণ, উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে রাস্তা সিসি দ্বারা উন্নয়ন ও রংধুনু ভবন মেরামত করা হয়। উপজেলা পরিষদের গত ৩০ জুন সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে এক কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ৮১টি প্রকল্প এবং টেন্ডারের মাধ্যমে এক কোটি ৯৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২১টি প্রকল্প কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়েছে। সাঁথিয়া এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে ২০২টি প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা পরিষদ। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজেই অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœœ হচ্ছে। অভিযোগে জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলা এলজিইডি অফিস বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (বিশেষ ও অতিরিক্ত কিস্তি) আওতায় গত ২৩ জুন কোটেশন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আটটি গ্রুপে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৫ জুন এবং কাজ সমাপ্তির চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩০ জুন। প্রাক্কলন, সিডিউল ও স্পেসিফিকেশন অনুয়ায়ী শতভাগ কাজ ৩০ জুনের মধ্যে সমাপ্ত করে বিল উত্তোলন করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ তো দূরের কথা, ২০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। এডিপি বাস্তবায়নের নিয়ম অনুয়ায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় বরাদ্দের অবশিষ্ট ৮০ ভাগ টাকা ফেরত দেয়ার বিধান রয়েছে। তাছাড়া যে কাজ হয়েছে তার গুণগতমান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খোয়া কনসুলেশন (ডাব্লিউবিএম) এবং হেরিংবন্ড (এইচবিবি) কাজে নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিয়ম অনুয়ায়ী এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সংশ্লিষ্ট পিআইসি অথবা ঠিকাদারের নামে এডিপি প্রকল্পের বিল তৈরি করে ইউএনও দফতরে পাঠাবে। ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান বিলে স্বাক্ষর করে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠাবেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বিল যাচাই-বাছাই করে পে-অর্ডার ব্যাংকে পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বা পিআইসি এডিপির নির্দিষ্ট হিসাব খাত থেকে টাকা উত্তোলন করবেন। কিন্তু গত ৩০ জুনে ঠিকাদারদের নামে বিল না করে কিভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হলো সে প্রশ্ন এখন সচেতন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। অভিযোগে জানা যায়, গত ৩০ জুন সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুবোধ কুমার সরকারকে ম্যানেজ করে সোনালী ব্যাংক সাঁথিয়া শাখা ২০১৪-১৫ অর্থ বছর বার্ষিক উন্নয়ন সহায়ক তহবিল থেকে প্রায় ৪১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এই হিসাব খাতটি ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাঁথিয়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুবোধ কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সপ্তাহে দুইদিন অফিস করেন। রেজিস্টার বই না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। সাঁথিয়া এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিয়ার রহমান ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, এডিপির বরাদ্দের টাকা অর্থ বছরের শেষে জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আসায় স্বল্প সময়ে আটটি গ্রুপ কাজের টেন্ডার আহবানের পর ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে ৩০ জুন মাত্র পাঁচদিনে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
×