ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এর বাইরে অন্য সড়কে অটোসহ তিন চাকা ও অযান্ত্রিক গাড়ি চলতে বাধা নেই

বাইশ মহাসড়কে অটোরিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৮ আগস্ট ২০১৫

বাইশ মহাসড়কে অটোরিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার / নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী থেকে ॥ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশের ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিক্সা, তিন চাকার যান ও অযান্ত্রিক সকল পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর বাইরে অন্যান্য সড়কে এসব পরিবহন চলতে বাধা নেই। উল্লেখ্য, এক আগস্ট থেকে দেশের প্রায় চার হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে অটোরিক্সাসহ তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারী এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে নিষিদ্ধ পরিবহনের মালিকসহ চালকরা। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়কে ধীরগতির গাড়ি চলাচলের জন্য আগামী বছর হতে বাইলেন নির্মাণ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। অটোরিকশা যে সকল মহাসড়কে বন্ধ থাকবে ॥ জাতীয় মহাসড়ক এন-১ কাঁচপুর সেতু (ঢাকা)-মদনপুর-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম-রামু (কক্সবাজার), এন-২ কাঁচপুর সেতু (ঢাকা)-ভেলানগর (নরসিংদী)- ভৈরব-সরাইল-মাধবপুর-মিরপুর, শেরপুর-সিলেট বাইপাস, এন-৩ জয়দেবপুর চৌরাস্তা-ময়মনসিংহ বাইপাস পয়েন্ট, এন-৪ জয়দেবপুর চৌরাস্তা-টাঙ্গাইল-জামালপুর, এন-৫ আমিনবাজার সেতু (ঢাকা)-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়াঘাট-খয়েরচরঘাট-কাশিনাথপুর-হাটিকুমরুল-বগুড়া বাইপাস-রংপুর বাইপাস-সৈয়দপুর বাইপাস-দশমাইল (দিনাজপুর)-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা, এন-৬ কাশিনাথপুর (পাবনা)-পাবনা বাইপাস-দাশুড়িয়া-নাটোর বাইপাস-রাজশাহী বাইপাস-নবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ-বালিয়াদীঘি স্থলবন্দর, এন-৭ দৌলতদিয়া-ফরিদপুর (রাজবাড়ী মোড়)-মাগুরা-ঝিনাইদহ বাইপাস-যশোর বাইপাস-খুলনা সিটি বাইপাস-মংলা, এন-৮ তেঘরিয়া মোড় (ঢাকা)-মাওয়া-কাওড়াকান্দি-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী, এন-১০২ ময়নামতি (কুমিল্লা)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাইপাস-সরাইল, এন-১০৫ মদনপুর-ভুলতা-মিরেরবাজার-ভোগড়া-কড্ডা (ঢাকা বাইপাস), এন-৪০৫ এলেঙ্গা-নলকা-হাটিকুমরুল, এন-৫০২ বগুড়া-নাটোর, এন-৫০৬ রংপুর-বড়বাড়ী-কুড়িগ্রাম, এন-৫০৭ হাটিকুমরুল-বনপাড়া, এন-৫০৯ বড়বাড়ী-লালমনিরহাট-বুড়িমারী, এন-৫৪০ নবীনগর-ইপিজেড-চন্দ্রা, এন-৭০২ যশোর-মাগুরা, এন-৭০৪ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-দাশুড়িয়া, এন-৭০৬ চাঁচড়া মোড় (যশোর)-বেনাপোল, এন-৮০৪ ভাঙ্গা-ফরিদপুর বাইপাস-রাজবাড়ী মোড়, এন-৮০৫ ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া মোল্লারহাট-ফরিকহাট-নোয়াপাড়া,এন-৮০৬ ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধকল্পে ও বড় যানবাহনের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সারা দেশের ২২টি জাতীয় মহাসড়কে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, অটোটেম্পো এবং অযান্ত্রিক যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মহাসড়কগুলোতে এসব ধীরগতির যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ)-এর বাড়িতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধের এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যে সকল সড়ক-মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হবে সে সকল মহাসড়কের পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য বাইলেন নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই মহাসড়কে এসব পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা আগে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান, সড়ক বিভাগ কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জুনায়েদ আহমেদ এবং নোয়াখালী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শাহনেওয়াজ। তিনি আরও বলেন, দেশের আড়াই লাখ কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা ও গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। তার মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক-মহাসড়কের পরিমাণ ২১ হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। এসব সড়কে দুর্ঘটনা রোধ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার অটোরিকশা চালনা নিষিদ্ধের এ ঘোষণা করেছে। লক্ষ্যণীয়, গত কয়েক দিনে মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমেছে। তিনি অটোরিকশা বন্ধের ইতিবাচক দিক উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, জাতীয় মহাসড়কগুলো দেশব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এ সকল সড়কে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরি চলাচল করে। অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ও ধীরগতির গাড়ি বড় যানবাহনের গতি মন্থর করে দেয়। উপরন্তু অহরহ ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। মূল্যবান প্রাণহানি ঘটছে। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের মধ্যে যে সকল মহাসড়কে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে সে সকল মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ সময়ের দাবি। সিএনজি অটোরিকশার বিষয়ে আরও বলেন, দেখা যায় বেশিরভাগ অটোরিকশা সিএনজিচালিত। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, সিএনজি স্টেশনগুলো মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। সে জন্য সিএনজি চালকদের গ্যাস সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দু’ঘণ্টা সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সারাদেশে অভিযান অব্যাহত থাকবে ॥ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহনসহ নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এক আগস্ট থেকে দেশের সকল জাতীয় মহাসড়কে অটোরিক্সার পাশাপাশি অযান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মন্ত্রিত্ব গেলে যাবে কিন্তু মহাসড়কে নিষিদ্ধ যান চলতে দেয়া হবে না। যে কোন মূল্যে সরকারী এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথাও বলেন তিনি। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি রাজধানীতে চারটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এছাড়াও ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মোবাইল কোর্ট বসানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ফিটনেসবিহীন গাড়ি পাকরাও হচ্ছে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে।
×