ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর গোড়ানে দিনদুপুরে বাসায় ঢুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যাকা- ॥ আল কায়েদার দায় স্বীকার

এবার খুন হলেন ব্লগার নিলয় ॥ মুক্তচিন্তা বধ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ আগস্ট ২০১৫

এবার খুন হলেন ব্লগার নিলয় ॥ মুক্তচিন্তা বধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার আবারও ব্লগার ও মুক্ত চিন্তার আরেকজনকে হত্যা করা হলো। বধ হলো মুক্ত চিন্তা। খোদ রাজধানীতেই দিনদুপুরে বাসায় ঢুকে নির্মমভাবে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হলো শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে জড়িত নীলকে। এ নিয়ে সারাদেশে ৬ ব্লগারকে হত্যা করা হলো। হত্যার ধরন একই। সবাইকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নারায়ে তকবীর, আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে নীলকে চার হত্যাকারী কুপিয়ে হত্যা করে। মাত্র ৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যেই নীলকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে হত্যাকারীরা। এদিকে আল কায়েদার বাংলাদেশ শাখার নামে প্রেরিত এক ই-মেলে শুক্রবার রাতে তারা নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করেছে। হত্যার সময় নীলের স্ত্রীকে পিস্তলের নলের মুখে জিম্মি করে বারান্দায় আটকে রাখা হয়। আর শ্যালিকাকে রান্নাঘরে রেখে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি আটকে দেয়। পুরো ঘটনাটি ঘটে মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যে। এমন ঘটনায় দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। রাত আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন পূর্ব গোড়ানের ৮ নম্বর সড়কের ১৬৭ নম্বর পাঁচতলা বাড়ির পঞ্চম তলার নিজ বাসায় হত্যা করা হয় নীলকে। বাড়িটি ৪ থেকে ৫ ফুট চওড়া রাস্তার মুখে। অনেকটা পুরনো ধাঁচের নির্মাণাধীন বাড়িটি পাঁচতলা পর্যন্ত করা হয়েছে। বাড়ির মালিক হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী শামসুল কবির জনকণ্ঠকে বলেন, তারা প্রায় দুই বছর ধরে ওই বাড়িতে মাসিক সাত হাজার টাকা ভাড়ায় বাস করছিলেন। এদেশ আমার। মুক্ত চিন্তার মানুষ আমার স্বামীকে এভাবে হত্যা করা হবে কেন? কারা একের পর এক মুক্ত চিন্তার মানুষকে হত্যা করছে? তারা কি ধরাছোঁয়ার বাইরে? মুক্ত চিন্তার মানুষ হত্যাকারী হিসেবে যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কেন বিচার হচ্ছে না? আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। থানা পুলিশ কেন আমার স্বামীর প্রাণের হুমকির বিষয়ে করা অভিযোগ আমলে নিল না? এ থানা থেকে ও থানা ঘোরাল। আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও যেকোন সময় হত্যাকারীরা হত্যা করতে পারে। প্রাণনাশের আশঙ্কায় আমার স্বামী বিদেশ যাওয়ার চেষ্টাও করছিলেন। গগন বিদারী আর্তনাদে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে খুন হওয়া ব্লগার নিলাদ্রী চ্যাটার্জী ওরফে নিলয় নীলের (৩০) স্ত্রী আশামনি (২৫)। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নীলের স্ত্রী আশামনি বলেন, দুপুরে নীল বাজারে যায়। বাজার করে বাসায় ফেরে। বাজারের ব্যাগ রাখে। এর পর ল্যাপটপ নিয়ে বসে। তখন দুপুর প্রায় দেড়টা। এ সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। দরজা খুলে দিলে জিন্সপ্যান্ট আর টি শার্ট পরিহিত ২০ থেকে ২৫ বছরের এক যুবক বাড়ি ভাড়া নেয়ার জন্য এসেছে বলে জানায়। এই ঘরটিই দেখতে এসেছে। বাড়িওয়ালা তাকে পাঠিয়েছে। এমন কথা বলতে বলতেই যুবক ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছিল। প্রায় তিন মিনিটের মতো সময় যুবক ঘরে এমনভাব করছিল। যুবককে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললে যুবক বেরুতে গড়িমসি করছিল। আমি নীলকে বলি, যুবককে ঘর থেকে বের করে দিতে। এরই মধ্যে আর তিন যুবক ঘরে ঢুকে। তারা ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। তিন জনের মধ্যে একজনের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। মুখে দাড়ি আছে। সেই প্রথম চাপাতি দিয়ে নীলকে কুপ দেয়। এর পরই তার সঙ্গে আসা দুই যুবক নীলকে বড় বড় চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। কোপানোর সময় আমি চিৎকারে দিলে আমাকে ধাক্কা মেরে বেডরুমের পাশে থাকা বাইরের দিকের বারান্দায় ঠেলে দেয়। আমার মুখে পিস্তল ধরে রাখে। গত বৃহস্পতিবার আমার বোন তন্নী বাড়িতে বেড়াতে আসে। সে তরকারি কাটছিল। নীলের চিৎকারে সেও সেখানে গেলে তাকে রান্নার ঘরের ভেতরে ঠেলে দিয়ে দরজা আটকে দেয়। ঠেলে দেয়ার সময় তাকে মারধর করে। তখন দুপুর দুটা বাজে। নীলকে তিনজন এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। নীল হাত দিয়ে চাপাতির কুপ ফেরানোর চেষ্টা করছিল। চাপাতির কুপে আঙ্গুলগুলো কেটে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে নীল মেঝেয় পড়ে যায়। কোপানোর সময় হত্যাকারীরা নারায়ে তকবীর আল্লাহু আকবর বলে ধ্বনি দিচ্ছিল। মাত্র ৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যেই নীলকে কুপিয়ে হত্যা করে হত্যাকারীরা। এর পর ৫ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যে হত্যাকারীরা দ্রুত নেমে যায়। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। এর পরই তিনি গগন বিদারী আর্তনাদে বলছিলেন, এদেশ আমারও। মুক্ত চিন্তার স্বামীকে কেন হত্যা করা হলো। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। তিনি বলেন, তিন বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এমএ করেন নীল। দুই বছর আগে আশামনিকে বিয়ে করেন নীল। নীল চাকরি করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামালের আরডিসি নামের একটি এনজিওতে। পাশাপাশি ব্লগে লেখালেখি করত। ঢাকায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার পর থেকেই তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা হচ্ছিল। রোজার অনেক আগ থেকেই তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনুসরণ করছিল হত্যকারীরা। বিষয়টি বুঝতে পেরে নীল খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। এনজিওর কাছে আবেদন করে নিরাপদে থাকতে পঞ্চগড়ে প্রায় একমাস চাকরি করেছে। রোজার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে সে পঞ্চগড় থেকে আসে। এর পর তাকে আবার অনুসরণ শুরু করে হত্যাকারীরা। একদিন সন্ধ্যায় বাংলামোটর অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে উত্তর শাহজাহানপুর আমতলা জামে মসজিদের কাছে গিয়ে নীল খুব ভয় পেয়ে যায়। পরে তাকে ফোন দিলে সে স্বামীকে রিক্সায় বাসায় নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে নীল প্রথমে খিলগাঁও থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করতে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল শাহজাহানপুর থানায় বলে জিডি নেয়নি। তাদের শাহজাহানপুর থানায় যেতে বলে। তারা শাহজাহানপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ করলেও থানা জিডি নেয়নি। নিহত নিলের বাড়ি ঝালকাঠিতে। আর আমার বাড়ি নেত্রকোনায়। নীলের স্ত্রী বলছিলেন, গত ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। বাবু হত্যাকা-ের প্রতিবাদে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে। সেই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে নিয়মিত অংশ নিত তার স্বামী। সেখান থেকেই তাকে টার্গেট করে। তারই ধারাবাহিকতায় খুন হতে হলো তার স্বামীকে। পুরনো ধাঁচের বাড়িটিতে ঢোকার রাস্তাটি ৪ থেকে ৫ ফুট প্রশস্ত। বাড়িটি গলির মাথায়। এর পর ছোট ছোট বস্তির মতো ঘর রয়েছে। বাড়ির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাড়ির মূল ফটকে সব সময়ই তালা লাগানো থাকে। কিন্তু সেদিন রহস্যজনক কারণে তালা ছিল না। এজন্য খুনীরা অনায়াসে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আর বাড়ির আশপাশে বস্তির মতো ঘিঞ্জি এলাকা রয়েছে। তাতে ছোট ছোট সরু অসংখ্য গলি। যেকোন অপরাধীই মারাত্মক অপরাধ করার পরও অনায়াসে পালিয়ে যেতে পারবে। গত ১৫ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কার কথা জানিয়ে একটি পোস্টও দেন। তাতে তিনি দুজন মানুষ তাকে অনুসরণ করেছে বলে জানানো হয়। সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ঘটনায় আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান শেষে তাকে অনুসরণ করা হয় বলেও ফেসবুকে দেয়া সেই পোস্টে বলা হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও অজস্র মানুষকে হত্যা করায় মিরপুরের কসাই হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের প্রতিবাদে এবং যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে ব্লগার ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের সমন্বয়ে গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয়। গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ব্লগার ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে (৩৭) ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীর পলাশনগরের নিজ বাড়ির সামনে রাত সাড়ে আটটার দিকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। রাজীবের জানাজা আদায়কারী ইমামকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। হুমকিদাতা ছাত্র শিবিরের স্বক্রিয় কর্মী প্রথমে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর পরে আরেক জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য শফিউর রহমান ফারাবী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। রাজীব হত্যার ঘটনায় ৬ জন গ্রেফতার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। রাজীব হত্যার পর ২০১৩ সালের গত ৯ এপ্রিল দিনদুপুরে বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ব্লগার আরিফ রায়হান দ্বীপকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে হত্যাকারী বুয়েট ছাত্র মেজবাহ উদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। এছাড়া ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন রামকৃষ্ণ (আর কে) মিশন রোডের বাড়িতে জবাই করে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি ও বিশ্ব ত্রাণকর্তা দাবিদার লুৎফোর রহমান ফারুক (৫৫) ও তার ছেলে সানোয়ারুল ইসলাম মনির (৩০), বাড়িতে থাকা মঞ্জুর আলম (২৮), মুজিবুল সরকার (৩২), শাহীন (২৪) ও রাসেলকে (৩৭) গলা কেটে হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাড়িতে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল আই’র শান্তির পথে ও কাফেলা নামক ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুুরুল ইসলাম ফারুকীকে জবাই করে হত্যা করা হয়। এ দুইটি হত্যাকা-ের ঘটনায় আজও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এছাড়া গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লেখক অভিজিৎ রায়কে (৪০) দুই হত্যাকারী কুপিয়ে খুন করে। হত্যাকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা (৩০)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) একটি দল ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশে এসে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে সহায়তা করে। অভিজিৎ হত্যার পর ফেসবুকে হত্যার দায় স্বীকার করে আনসার বাংলা-৭ নামে স্ট্যাটাস দেয়া ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী বর্তমানে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য শফিউর রহমান ফারাবী। পরে ফারাবীকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর গত ৩০ মার্চ রাজধানীর রমনা মডেল থানাধীন হাতিরঝিল বেগুনবাড়িতে দিনেরবেলায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর পালানোর সময় জনতা দুই হত্যাকারীকে আটক করে। আটককৃতরা মাদ্রাসার ছাত্র। তারা ঈমানী দায়িত্ব পালন করতে বাবুকে হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। গ্রেফতারকৃতরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। সর্বশেষ গত ১২ মে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় চার মুখোশধারী ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। অনন্ত বিজয় দাস হত্যার দায় স্বীকার করে আনসার বাংলা-৮ স্ট্যাটাস দেয়। আজও অভিজিৎ ও অনন্তর হত্যাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। এর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেরুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে টিএসসিতে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদকে আহত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদিকে নীল হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখার আনসার আল ইসলামের নামে ই-মেইল পাঠানো হয়েছে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। মুফতি আব্দুল্লাহ আশরাফ নামের এক ব্যক্তিকে প্রেরক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেরককে আনসার আল ইসলামের মুখপাত্র হিসেবে দাবি করা হয়েছে। বার্তায় বলা হয়, ‘আলহামদুল্লিাহ! আনসার-আল-ইসলাম (আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ, বাংলাদেশ শাখা) এর মুজাহিদিনরা হামলা চালিয়ে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসুলের দুশমন নিলয় চৌধুরী নীলকে হত্যা করেছেন।’ শুক্রবার দুুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় ওই অপারেশন সম্পন্ন হয়। বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিকৃষ্টতম দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমরা এদের ও তাদের সাথীদের ধ্বংস করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করব ইনশা আল্লাহ।’ নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করে পাঠানো বার্তার শেষ দিকে বলা হয়েছে, “যদি তোমাদের ‘বাক-স্বাধীনতা’ কোন সীমানা না মানতে প্রস্তুত থাকে, তবে তোমাদের হৃদয় যেন আমাদের ‘চাপাতির স্বাধীনতার’ জন্য উন্মুক্ত থাকে।” নীল হত্যার বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেছেন, নিলয়ের গলা ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এর আগে অন্য ব্লগারদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, নিলয়কেও হত্যা করা হয়েছে একই কায়দায়। এ হত্যাকা-ের সঙ্গে একিউআইএস বা আনসার আল ইসলামের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোন তথ্য নেই তাদের কাছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রাত হত্যাকা-ের ঘটনায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে। এদিকে ব্লগার নীল হত্যাকা-ের ঘটনায় নিন্দা ও শোক জানিয়েছে জাতিসংঘ। খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথাও বলা হয়েছে জাতিসংঘের তরফ থেকে। এছাড়া নীলের খুনীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস এ্যানিলে। তিনি এক টুইট বার্তায় এ দাবি জানান।
×