ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটে পাঁচ পরিবার ফতোয়াবাজির শিকার

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৮ আগস্ট ২০১৫

লালমনিরহাটে পাঁচ পরিবার ফতোয়াবাজির শিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ৭ আগস্ট ॥ প্রেমের ফসল কুমারী মাতা তার সন্তানের পিতৃ পরিচয় দাবি করেছে। এই ঘটনায় কুমারী মাতার পরিবারসহ তার স্বজনদের পাঁচটি পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। মসজিদ কমিটির এই অন্যায় সালিশের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের পূর্বদুহুলী গ্রামের হাসমত আলীর ছেলে দুলাল মিয়া ও তার চার ভাইয়ের পরিবারকে মসজিদ কমিটি একঘরে করে রেখেছে। সামাজিকভাবে তাদের সঙ্গে কোন গ্রামবাসী সম্পর্ক রেখে চললে তাদেরও একঘরে করে রাখার হুমকি দিয়েছে সমাজপতিরা। মামলার বিবরণ ও বিলম্বে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের পূর্বদুহুলী গ্রামের দুলাল মিয়ার মেয়ে স্থানীয় কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে একই উপজেলার কাকিনা চাপারতল গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে কাকিনা উত্তর বাংলা ডিগ্রী কলেজের ছাত্র নাঈম ইসলাম বিল্লু (২৫)। বিল্লু কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী। প্রেমের সম্পর্কের ফাঁদ পেতে নাঈম ইসলাম আবাসিক ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে ছাত্রীটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। তখন দুই পরিবারের সম্মতিতে তিন লাখ ১০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ের দিন-তারিখ নির্ধারণ হয়। এরইমধ্যে গ্রামের একশ্রেণীর সমাজপতি এই বিয়েতে বাদ সাধে। প্রেমিক নাঈম ইসলাম বিল্লুকে সমাজপতিরা অন্যত্র আত্মগোপন করে রাখতে সহায়তা করে। তাই শেষ পর্যন্ত বিয়ে ভেঙ্গে যায়। চলতি বছরের ২৩ মে প্রেমিকা ফুটফুটে পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। এই নিয়ে গ্রামে সমাজপতিরা হৈচৈ ফেলে দেয়। পরিবারটিকে গ্রামছাড়া করতে কুমারী মাতা ও তার স্বজনদের ৫টি পরিবারকে একঘরে করে রাখে। এই ঘটনায় দুলাল মিয়া তার মেয়ের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে দাবি করে কুমারী মাতার সন্তানের স্বীকৃতি আদায়ে ১৯ মার্চ লালমনিরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছে। কুমারী মাতার মা হালিমা বেগম জানান, গ্রামের মাস্টারবাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি মোস্তফা রোজার ঈদের নামাজের মাঠে তার পরিবারকে নামাজে অংশ নিতে দেয়নি। সেখানে তাদের একঘরে করে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘটনার পর হতে তার পরিবারকে মসজিদে নামাজ আদায়, দান, খয়রাত করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হালিমার প্রশ্ন, যারা অন্যায় করেছে তারা সমাজে সম্মান নিয়ে থাকছে। তার পরিবার দরিদ্র-দিনমজুর হওয়ায় তাদের সমাজপতিরা ফতোয়াবাজি করে একঘরে করে রেখেছে। এ কেমন বিচার। মাস্টারবাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের ঘটনায় চার্জ গঠন করে পুলিশ আদালতে রিপোর্র্ট দিয়েছে। তবে একঘরে করে রাখার ঘটনায় আইনী সহায়তা চেয়ে আবেদন করা হয়নি। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে আইনী সহায়তা দেবেন বলে জানান।
×