জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা, স্থানীয়সহ সব সংস্থার অধীন বাংলাদেশে আড়াই লাখ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ৫৭০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক। সরকার সম্প্রতি মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। জাতীয় মহাসড়ক বাদে অন্যসব সড়কেই তিন চাকার যান চলায় অবশ্য অসুবিধে নেই। তবে বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করে দেশের জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার অটোরিক্সা এবং সব ধরনের অযান্ত্রিক যান চলাচল নিষিদ্ধ করায় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিরই সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এসব অটো-টেম্পোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মালিক, চালক ও শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা। এ নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন মহাসড়ক অশান্ত হয়ে উঠেছে। চলছে ভাংচুর, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বাধছে সংঘর্ষ, ফলে যানশ্রমিকসহ প্রতিবাদকারীদের ভেতর আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। একই সঙ্গে এটাও অনস্বীকার্য যে হঠাৎ করে এ নিষেধাজ্ঞা আসায় যাত্রীদেরও অনেক অসুবিধা হচ্ছে।
এটা সত্য যে, মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন দুর্ঘটনা ডেকে আনে। এবার ঈদের আগে-পরের কয়েক দিনে বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২৫০ জনের মৃত্যু ও কয়েক শ’ যাত্রী আহত হওয়ার পর সড়ক পরিবহনে নিরাপত্তার প্রশ্নটি বড় হয়ে ওঠে। মহাসড়কে তিন চাকার যানই শুধু নয়, ভটভটি, নছিমন-করিমন ও এ জাতীয় ধীরগতির যান এবং অযান্ত্রিক যান কার্যত দখল করে হাটবাজার বসানোসহ আরও নানা ধরনের উপদ্রব বড় ঝুঁকি হয়ে উঠেছে। তাই অটো, টেম্পো এবং এ ধরনের কম গতিসম্পন্ন বাহন মহাসড়কে নিষিদ্ধ করার পেছনে কর্তৃপক্ষের যে যুক্তি, তা অগ্রাহ্য করা যাবে না। মহাসড়কে দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হলো এসব যানবাহন। হাইওয়েসমূহ প্রধানত দূরপাল্লার ভারি যানবাহন যেমন- কোচ, মালবোঝাই ট্রাক চলার জন্যই নির্ধারিত। স্বল্পগতির কোন বাহনকে ওভারটেক করতে গিয়েও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। পক্ষান্তরে বিভিন্ন মহাসড়কের নিকটবর্তী গ্রামগঞ্জের মানুষ কম দূরত্বের গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য অনেক ক্ষেত্রে অটো ও টেম্পোর ওপরই ভরসা করে থাকে।
আজকাল দেশের প্রায় সব এলাকায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট পাকা হয়ে গেছে। সেসব রাস্তায় অটো-টেম্পো চলায় কোন বাধা নেই। যাত্রীরও অভাব নেই। মহাসড়কে স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য লোকাল বাস সার্ভিস থাকাই সমীচীন। বহু স্থানে তা রয়েছেও বটে! তবে নিতান্তই সংখ্যায় অপ্রতুল। যেসব এলাকায় লোকাল সার্ভিস নেই, সেখানেও টেম্পো-অটো বন্ধ হয়ে গেলে প্রয়োজনের তাগিদেই লোকাল বাস সার্ভিস চালু হয়ে যাবে। সময়মতো পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থী, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া রোগী এবং এ ধরনের জরুরী প্রয়োজনের সময়ে চাহিদা মেটানোর জন্য অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্বল্প দূরত্বে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্য ট্রাক-বাসের সংখ্যা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। নির্দিষ্ট দূরত্বে জনপ্রতি নির্দিষ্ট ভাড়ায় ট্যাক্সিতে যাত্রী পরিবহনের নিয়মও চালু করা দরকার। এ ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে মহাসড়কে অটোরিক্সার চাহিদা থাকবে না, সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমবে। খুব ভাল হতো যদি বিকল্প ব্যবস্থা চালু করার পর মহাসড়কে নিরাপত্তার স্বার্থে অটো-টেম্পো নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটি আসত। যদিও সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ মহাসড়কে বন্ধ থাকছে অটোরিক্সা। আমরা আশা করব সবপক্ষ সহনশীলতার পরিচয় রেখে মহাসড়ক সচল রাখায় উদ্যোগী হবে, ফিরিয়ে আনবে শৃঙ্খলা।
শীর্ষ সংবাদ: