ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৭ আগস্ট ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আছ আপন মহিমা লয়ে মোর গগনে রবি...। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন, আছেন। আপন মহিমায় উদ্ভাসিত তিনি। প্রতিবারের মতো এবারও ২২ শ্রাবণ শ্রদ্ধা ভালবাসায় বাঙালী স্মরণ করেছে প্রিয় কবিকে। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন মঞ্চ থেকে কবিতা গান কথায় স্মরণ করা হয় বাংলা সাহিত্যের অমর স্রষ্টাকে। এভাবে গোটা দিনটি হয়ে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথের। বিকেলে রবীন্দ্রনাথ স্মরণে বিশেষ আয়োজন ছিল বাংলা একাডেমিতে। কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘যুদ্ধ ও বিশ্বশান্তি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রভাবনা’ শীর্ষক একক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। কথা শেষে ছিল কবিতা ও সঙ্গীতায়োজন। জনপ্রিয় গায়ক শিবলী মোহম্মদ সুরে সুরে প্রণাম জানান কবিগুরুকে। কবিতায় বলেন, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যান্যের পরিবেশনায়ও ছিলেন শুধু রবীন্দ্রনাথ । সন্ধ্যায় প্রায় একই রকম আয়োজন ছিল শিল্পকলা একাডেমিতে। অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আখতার কামাল। শিমু দে, আজিজুর রহমান তুহিন, তানিয়া মান্নান, এটিএম জাহাঙ্গীর, সোমা রানী রায়, নীলোৎপল সাধ্য, সালমা আকবর, মহাদেব ঘোষ প্রমুখ গানে গানে শ্রদ্ধা জানান কবিগুরুকে। ছিল শিমুল মোস্তফার আবৃত্তি। ধারা বর্ণনা পাঠ করেন কৃষ্টি হেফাজ ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ছিল সমবেত নৃত্য। নৃত্যালেখ্য ‘ষড়ঋতু’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। একই সময় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সমবেত হয়েছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের বড় একটি অংশ। এখানে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা। এভাবে বিভিন্ন আয়োজনে সরব ছিল ২২ শ্রাবণ। এর বাইরে রাজধানীতে চলছে জাতীয় শোকদিবসের অনুষ্ঠানমালা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। সেই শোক এখনও বুকে। কলঙ্ক তিলক এখনও কপালে মেখে আছে বাঙালী। শোকের মাসের নানা আয়োজনে এসব ব্যথা-বেদনার কথা ওঠে আসছে। এরই মাঝে গোটা রাজধানী ছেয়ে গেছে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে। শোকের কালো পতাকা উড়ছে। সপ্তাহের শেষ দিন ৬ আগস্ট ছিল ৭০তম হিরোশিমা দিবস। ১৯৪৫ সালের এই দিনে জাপানের হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরষ্ট্র। লিটল বয় নামের এই পারমাণবিক বোমা হামলায় ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়। আহত হয় অসংখ্য মানুষ। ঠিক তিন দিন পর একই রকম বোমা নিক্ষেপ করা হয় নাগাসাকিতে। এতে ৭৪ হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত বোমা হামলা আজও ভুলতে পারেনি পৃথিবীর মানুষ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কলঙ্কের ইতিহাসটি স্মরণে পৃথিবীর দেশে দেশে আয়োজন করা হয় শোকসভার। বাদ যায়নি রাজধানী ঢাকাও। কালো দিবস স্মরণে বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরীক্ষণ থিয়েটার হলের লবিতে ছিল যুদ্ধবিরোধী পোস্টার আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। একই সময় জাপানী শিশু সাদাকো সাসাকি স্মরণে কাগজের সারস বিতরণ করা হয়। নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘ত্রিংশ শতাব্দী’। বাদল সরকারের মূল রচনা অবলম্বনে নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন।
×