ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ কেমন বর্বরতা- সারাদেশে তোলপাড় ॥ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান

গণধর্ষণ, পৈশাচিক নির্যাতনে শিশু হত্যা ॥ মাদকের ছোবল, অপসংস্কৃতিতে সমাজে অস্

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৭ আগস্ট ২০১৫

গণধর্ষণ, পৈশাচিক নির্যাতনে শিশু হত্যা ॥ মাদকের ছোবল, অপসংস্কৃতিতে সমাজে অস্

গাফফার খান চৌধুরী ॥ গণধর্ষণ ছাড়াও পৈশাচিক নির্যাতনের পর শিশু হত্যার মূল কারণ নৈতিকতার চরম অবক্ষয়। এখন পর্যন্ত গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই কিশোর ও যুবক। এদের মধ্যে অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত যুবকের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ। যাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের আবার অধিকাংশই মাদকাসক্ত। বিশেষ করে ইয়াবায় আসক্ত। যদিও দু’একটি ঘটনায় এর ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা গেছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং ঘটনা তদন্তে এ সবের সঙ্গে মাদক ছাড়াও বেকারত্ব, প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিকৃত রুচিবোধ, সামাজিক অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি, পর্নছবি ও বিভিন্ন সিরিয়ালে প্রচারিত ঘটনার যোগসূত্র থাকার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গণধর্ষণ ও পৈশাচিক নির্যাতনের পর শিশু হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এবং সামাজিক সচেতনতাই কেবল সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের ১৯ মে রাত ৯টার দিকে গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ এক গারো তরুণীকে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে গণধর্ষণের ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পাচ ধর্ষক তরুণীকে ধর্ষণের পর রাজধানীর উত্তরার কবি জসীম উদ্দীন সড়কে ফেলে পালিয়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। এ বিষয়ে দায়েরকৃত মামলা বিচারাধীন। চলতি বছরের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর উত্তরায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে এক তরুণী বিক্রয়কর্মী গণধর্ষণের শিকার হন। ঘটনাটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় চলে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ। আর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ এ ঘটনায় সাদিকুল ইসলাম বাবু ও আসলাম উদ্দিনসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। পরে চারজনের মধ্যে দুই ধর্ষককে শনাক্ত করেন ওই তরুণী। অপর দুই তরুণকে ধর্ষণের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেয় পুলিশ। গত ১ আগস্ট রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগে এক শিশুকে ফুঁসলিয়ে ধর্ষণ করে রাসেল নামের পঁচিশ বছর বয়সী এক যুবক। রাসেল পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। একই দিন হাজারীবাগে আরেক শিশু ধর্ষণের ঘটে। শিশুর চিৎকারে ধর্ষক খোকনকে (৩৫) জনতা হাতেনাতে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। গত ৪ আগস্ট রাজধানীর ভাটারার ১২ বছরের গারো শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পাশের বাড়ির পঁচিশ বছর বয়সী এক যুবক শিশুটিকে ফুঁসলিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুর চিৎকারে স্থানীয়রা সেখানে হাজির হলে ওই যুবক পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একইদিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক কলেকছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার সলিমুল্লাহ কলেজের ছাত্র শাহাদত, ফয়সাল, বাবু, রবিন ও সুমিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। চার যুবককে ৩ দিনের এবং একমাত্র নারী আসামিকে ১ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত যুবকদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা যোগাড় করতে তারা ওই তরুণীর স্বর্ণালঙ্কার লুট করে বলে স্বীকার করেছে। তবে স্বর্ণালঙ্কার লুটের পর তরুণীকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেনি। একইদিন গাজীপুরের শ্রীপুরে এক গৃহিনী এবং মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৬ বছরের এক শিশু ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এ দুইটি ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ সব ঘটনার শিকার হওয়া প্রত্যেকেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার বা ওসিসিতে ভর্তি। ওসিসির সমন্বয়কারী ডাঃ বিলকিস বেগম জানিয়েছেন এদের ধর্ষিত হওয়ার আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় চলছে। ধর্ষণের ঘটনার পাশাপাশি পৈশাচিক নির্যাতনের পর শিশু হত্যার ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। সিলেটে রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। আর খুলনায় রাকীবকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পায়ুপথে গাড়ির চাকায় হাওয়া দেয়ার মেশিন দিয়ে পেটে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এমন ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই চাঁদপুরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তিন বছরের শিশুকন্যা হত্যা ও বরগুনায় শাবল দিয়ে আঘাত করে চোখ উপড়ে ফেলে এক ছেলে শিশু হত্যা এবং নাটোরে গাছের সঙ্গে বেঁধে দুই শিশুকে নির্যাতনের ঘটনা নতুন করে সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গত ৪ আগস্ট চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মেহের (উত্তর) ইউনিয়নের তারাপুর কামারবাড়ি থেকে সুমাইয়া নামের তিন বছরের শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় নিহত শিশুর মা আমেনা বেগম ও বাবা এমরান হোসেনকে। পুলিশ জানায়, এলাকার কয়েকটি এনজিও থেকে সুমাইয়ার মা আমেনা বেগম ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আমেনা বেগম স্বামীর সঙ্গে যোগসাজশ করে ‘কবিরাজি’র মাধ্যমে টাকা আয়ের পরিকল্পনা করেন। এমন পরিকল্পনা মোতাবেক আমেনা বেগমকে ‘জ্বীনে’ ধরেছে এবং সে অলৌকিক ক্ষমতা লাভ করেছে বলে এলাকায় প্রচার করায়। আর তার সঙ্গে থাকা জ্বীনের এমন ক্ষমতা যে, কোন শিশুকে পেটালেও সেই শিশু কাঁদবে না। এমন প্রচার চালায়। সেই প্রচারের সত্যতার জানান দিতে এবং মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করতে আমেনা ও তার স্বামী এমরান হোসেন তাদের তিন বছরের শিশুকন্যা সুমাইয়াকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। ৬ দিন ধরে সুমাইয়াকে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে। গত ৪ আগস্ট ভোর পাঁচটার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়। এছাড়া ৫ আগস্ট সকালে বরগুনার তালতলী উপজেলার আমখোলা গ্রামের খালপাড় থেকে রবিউল আউয়াল (১১) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রবিউল স্থানীয় ফরাজী বাড়ি দাখিল মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। জালসহ মাছ চুরির অভিযোগে শাবল দিয়ে নির্মমভাবে অসংখ্য আঘাত করে ও কুপিয়ে রবিউলকে হত্যা করা হয়। রবিউলের ডানচোখ শাবল দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা দুলাল মৃধা বাদী হয়ে তালতলী থানায় একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মিরাজকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মিরাজকে বুধবারই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিউলের পিতা জানান, তাদের বাড়ির পাশের লুতরার খালে জাল পেতে মাছ ধরতো প্রতিবেশী মিরাজ (২৫)। দু’দিন আগে মিরাজের জালসহ মাছ চুরি হয়। এর জন্য রবিউলকে সন্দেহ করে মিরাজ। গত সোমবার সন্ধ্যায় রবিউল বাড়ির বাইরে যাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে আমখোলা খালপাড়ে রবিউলের ডান চোখ উপড়ানো লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। রবিউলের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া নাটোরের বড়াইগ্রামের দক্ষিণ মালিপাড়া গ্রামে দোকান থেকে চুরির দায়ে দুই কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও চিত্র প্রকাশ পায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসুবকসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে। মোবাইল ফোনে ধারণকৃত এমন দৃশ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হলে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই ওই গ্রামের বুলবুল হোসেনের মুদির দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার দু’দিন পর সন্দেহমূলকভাবে ওই গ্রামেরই দিনমজুর আবু সামা ও শাকিল নামে এক কিশোরকে ধরে চুরি হওয়া দোকানের সামনে সুপারি গাছের সঙ্গে অমানবিকভাব পেটানো হয়। আবু সামার স্ত্রী মাবিয়া বেগম ও শাকিলের মা হাসিনা বেগমের দাবি, চুরি হওয়া মালামাল অন্য বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে। তবে দোকান মালিক বুলবুল হোসেনের দাবি, দুই কিশোর চুরি করার কথা স্বীকার করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সাবেক মেম্বার আবদুস সোবহান জানান, সামাজিকভাবে সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে দুই কিশোরের বিচার করা হয়েছে। যদিও নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী জানান, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তারপরেও বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাম্প্রতিককালে এ সব ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য আর মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ধর্ষক ও শিশু নির্যাতনকারীসহ খুনীদের গ্রেফতারে মানববন্ধনসহ সারাদেশে নানা কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘চাইল্ড রাইটস এ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ আয়োজিত’ এক সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিককালে শিশু খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দেশে শিশু নির্যাতন ও হত্যাকা- বাড়ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। তিনি এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সিলেটে শিশু রাজন ও খুলনায় রাকীব হত্যা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ সব ঘটনা বারবার সমাজে মানবিক অবক্ষয়ের সংকেত দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ১৯১ শিশু খুন এবং ২৮০ শিশু ধর্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসেই খুন হয়েছে ৩৭ শিশু। আর ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫০টি। সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্যা চিলড্রেনের দেশী-বিদেশী উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারাও সুলতানা কামালের মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। সাম্প্রতিককালে আলোচিত এ সব ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, অতীতেও সমাজে এ ধরনের সমস্যা ছিল। এখনও আছে। এমন সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশেও রয়েছে। আজকের বিশ্বের উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত, অনেক দেশেও এ ধরনের সমস্যা ছিল। দেশ উন্নত হলে, সবদিকেই উন্নত হয়। তখন সমাজ থেকে এ ধরনের সমস্যা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। যে কোন দেশ যখন উন্নত হয়, তখন সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতির দিকে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি বিভাগে দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে। এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রেও দ্রুত উন্নয়ন ঘটবে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই সমাজে এ ধরনের সমস্যা কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে মানুষের ব্যক্তিগত রোজগার বাড়ছে। ফলে স্বাভাবিক কারণেই মানুষের মধ্যে রুচিবোধ বাড়ছে। বাড়ছে শিক্ষা। শিক্ষা বাড়ার কারণে মানুষের ব্যক্তিগত মূল্যবোধও বাড়ছে। বাড়ছে সামাজিক সচেতনতা। আগের তুলনায় এ সব ক্ষেত্রে মানুষ অনেক বেশি সচেতন। এখন মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিবাদী। পাশাপাশি গণমাধ্যম বিষয়গুলোকে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তুলে ধরছে। সবদিক দিয়েই প্রতিবাদের ঝড় বইছে। প্রতিবাদের পাশাপাশি এ সব ক্ষেত্রে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দ্রুত সমাজ থেকে এ ধরনের সমস্যা চলে যেতে বাধ্য। নানা সামাজিক কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম শিক্ষা। অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত বিকৃত রুচিবোধ সম্পন্ন যুবক বা কিশোররা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে। এর সঙ্গে মাদকের একটি যোগসূত্র থাকে। সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হলে অনেক অপরাধ স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। মাদকের পাশাপাশি জড়িতদের অনেকেই ফেসবুক, ইন্টারনেট বা আকাশ সংস্কৃতির খারাপ প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এ সব অপকর্মের ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময় এ সব অপসংস্কৃতি সমাজ থেকে দূর হয়ে যাবে। সারাদেশে যেভাবে প্রতিরোধ আর প্রতিবাদ হচ্ছে, আশা করছি এক সময় এ সব অপকর্ম সমাজ থেকে নির্মূল হতে বাধ্য। এমন আশার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলামও। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। নৈতিকতার অবক্ষয়ই ধর্ষণের মূল কারণ। আর নৈতিকতার অবক্ষয়ের পেছনে বেকারত্ব, প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিকৃত রুচিবোধ, সামাজিক অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি, যত্রতত্র পর্নছবির সহজলভ্যতাসহ বিদেশী চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন সিরিয়ালে প্রচারিত এ ধরনের ঘটনার একটি যোগসূত্র রয়েছে। বিশেষ করে গণধর্ষণের সঙ্গে মাদকের যোগসূত্র সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ইয়াবার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। গণধর্ষণের গ্রেফতারকৃতদের প্রায় শতভাগ কিশোর বা যুবক। এ সব যুবকদের অধিকাংশই স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে গণধর্ষণের সঙ্গে ইয়াবার মতো মাদকের যোগসূত্র বেশি বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ধরনের পৈশাচিক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশী তৎপরতার পাশাপাশি গণধর্ষণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন নিশ্চিত করা এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরী। তবেই সমাজে এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে।
×