ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আট লক্ষ্যের সাতটিতেই সফলতা ;###;যদিও প্রতিশ্রুত সহায়তা দেয়নি উন্নত দেশগুলো

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ॥ এগোচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৭ আগস্ট ২০১৫

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ॥ এগোচ্ছে বাংলাদেশ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বহুল আলোচিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) লক্ষ্য পূরণে অগ্রগতি দেখিয়েছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেও আটটি লক্ষ্যের মধ্যে সাতটিতেই এসেছে সফলতা। এগুলো হচ্ছে দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের গভীরতা কমানো, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, শিশু মৃত্যু কমানো, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইড এবং অন্যান্য রোগব্যাধি দমন এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। তবে খারাপ অবস্থায় রয়েছে সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। গত জুন মাস পর্যন্ত করা এমডিজির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০১৫ সালেই শেষ হয়ে যাচ্ছে এটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ বিষয়ে সংস্থাটির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে বাংলাদেশ ছিল সর্বদা আন্তরিকভাবে সচেষ্ট। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে দেশ। তিনি জানান, ২০০০ সালে মানবজাতি অবলোকন করেছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের বিরল উদ্ভাবনী ঐক্যতান সহস্রাব্দ ঘোষণা। ক্ষুধা-দারিদ্র্য, অশিক্ষা-অসাম্য, রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে সূচিত হয়েছিল এক একীভূত যুদ্ধ। রচিত হয়েছিল সমৃদ্ধ ধরিত্রীর দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন রূপকল্প। এরই ধারাবাহিকতায় আটটি বৃহৎ অভীষ্ট লক্ষ্য, একুশটি লক্ষ্যমাত্রা এবং ষাটটি সূচক মালায় গ্রন্থিত হয় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদনে আটটি বৃহৎ লক্ষ্যের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলকরণ ॥ এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূলে প্রশংসনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। গত কয়েক বছর যাবৎ দেশ নিয়মিতভাবেই ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, যা দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির কারণে ১৯৯১-৯২ সালের ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। গত দশকের চেয়ে বর্তমান দশকে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল দ্রুততর। সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০০০-২০১০ মেয়াদে গড়ে প্রতি বছর দারিদ্র্য কমেছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে, যদিও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একই সময়ে প্রয়োজন ছিল গড়ে প্রতিবছর ১ দশমিক ২০ শতাংশ হারে দারিদ্র্য হ্রাস। ২০১৫ সালের মাথাগুনতি দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে। বাংলাদেশ ২০১০ সালেই দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের গভীরতা কমানো শীর্ষক অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের গভীরতার (ক্ষিপ্রতা) ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ শতাংশ, এই হার নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। যে হারে দারিদ্র্য কমছে এতে প্রাক্কলিত হিসেবে ২০১২ সালেই বাংলাদেশ ভিত্তিবছরের তুলনায় দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ক্ষুধা নিরসনেও বাংলাদেশ ভাল অগ্রগতি সাধন করেছে। খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১০ অনুসারে দেশে মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কিনা ২০০৫ সালে ছিল দুই হাজার ২৩৮ কিলোক্যালরি এবং ২০১০ সালে হয়েছে দুই হাজার ৩১৮ কিলোক্যালরী। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা ২০১৪ অনুযায়ী পাঁচ বছরের কম বয়সী রুদ্ধ-বিকাশ শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, যা ২০০৪ সালে ছিল ৫১ শতাংশ, সেটি কমে ২০১০ সালে হয়েছে ৩৬ শতাংশ। এ বিষয়ে ড. শামসুল আলম বলেন, টেকসই উন্নয়ন ও সুষম প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে এই সাফল্য দেখিয়েছে। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন ॥ সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে অবাক করা সাফল্য। শিক্ষায় ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার (প্রাথমিক শিক্ষায় নিটভর্তি হার ৯৭.৭ শতাংশ, বালকদের ক্ষেত্রে এই হার ৯৬.৬ ও বালিকাদের ক্ষেত্রে ৯৮.৮ শতাংশ), ঝড়ে পড়ার হার কমানো, শিক্ষা চক্র সমাপ্তির ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন এবং প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি কারণে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ছোট্ট শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রি-প্রাইমারি স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির হার ১৯৯১ সালে ৪৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪ সালে ৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ৭৪ শতাংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ৭৭ শতাংশ। ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার শিক্ষার হার ১৯৯০ সালে ছিল ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ, সেটি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে ড. শামসুল আলম বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে এমডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকার সার্বিকভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন করছে। নবম শ্রেণী পর্যন্ত সকল শিশুদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও জুনিয়র শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু, সময় মতো পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশ, শিক্ষা ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটছে। এসব এই লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ১ ও ২ প্রণয়ন ও সকল প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণের উদ্যোগ সরকারের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম। জেন্ডার সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন ॥ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জেন্ডার সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন শীর্ষক লক্ষ্যটি অর্জন করেছে। অর্থাৎ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ডিপিই এর তথ্য ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলে ও মেয়ের অনুপাত ১.০৩, যা ১৯৯০ সালে ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৮। মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এ হার ১৯৯০ সালের শূন্য দশমিক ৫২ থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশে। একই সূত্র মতে এ সময়ের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এ হার শূন্য দশমিক ৩৭ থেকে বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ (অর্থাৎ ১০০ ছাত্রের বিপরীতে ৬৭ জন ছাত্রী)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই অর্জনের পেছনে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সরকারী কর্মসূচী। যেমন গ্রামীণ অঞ্চলে উপবৃত্তি ও মেয়েদের বিনা বেতনে পড়ালেখার সুযোগ এবং মাধ্যমিক স্থরে মেয়েদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা। শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১২ জাতীয় সংসদে পাস করে সুবিধা বঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নের প্রচষ্টায় সরকার প্রথমবারের মতো স্নাতক বা সমমানের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই তহবিল থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকে সরকার ১ লাখ ৩৩ হাজার নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা বিতরণ করবে। ঋপ্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে বাংলাদেশের জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ॥ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নেও বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমএমইআইজি ২০১৩ অনুযায়ী ১৯৯০ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল বছরে ৫৭৪ জন যা ২০১৩ সালে হয়েছে ১৭০ জন। জরিপের বিভিন্ন সালের উপাত্ত হতে প্রতীয়মান হয় যে, সামগ্রিকভাবে প্রজনন বয়সের নারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর নিকট সেবা গ্রহণের হার গত দুই দশকে প্রায় আট গুণ বেড়েছে। ১৯৯১ সালে এ হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ, যা ২০১৪ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। একই সময়ে প্রসব পরবর্তী যতেœর আওতা বেড়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ। স্বাস্থ্যকর্মীর কমপক্ষে একবার পরিদর্শন ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। কম পক্ষে চারবার পরিদর্শন ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৩১ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনার অপূরণকৃত চাহিদার পরিমাণ ২২ শতাংশ থেকে কমে ১২ শতাংশে এসেছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার ভিত্তিবছর (১০৯০ সাল) ৪০ শতাংশ থেকে বর্তমানে ৬২ শতাংশ হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার ১২ হাজার ২১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উদ্ভাবনী ব্যবহার বৈশ্বিক পরিম-লে প্রশংসিত হয়েছে। শিশুমৃত্যু হার কমানো ॥ বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হার কমানো বিষয়ক সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের বিভিন্ন নির্দেশক যথা ৫ বছরের কম বয়সের শিশুমৃত্যু হার, ১ বছরের কম বয়সের শিশুমৃত্যুর হার ও হামের টিকা প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে। ১০৯০ সালে ৫ বছরের কম বয়সের শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি এক হাজার জীবিত জনে ১৬৪ জন, যা ২০১৩ সালে নেমে এসেছে ৪৬ জন এ। অর্থাৎ এই সূচকের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য ছিল ২০১৫ সালে ৪৮ জন। একইভাবে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে ৯২ জন থেকে কমে ২০১৩ সালে ৩২ জনে নেমে এসেছে। ২০১৫ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ জনে। একবছর বয়সী শিশুর হামের টিকা গ্রহণের অনুপাত ১৯৯০ সালে ছিল ৫৪ শতাংশ, সেটি কমে ২০১৪ সালে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিশুমৃত্যু হার হ্রাসের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রভাবের সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচী, ডায়রিয়া নিরাময় ও সম্পূরক ভিটামিন-এ সরবরাহ কর্মসূচী প্রভূত অবদান রেখেছে। এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগ ব্যাধি দমন ॥ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। দেশে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব এখনও অনেক কম (শতকরা শূন্য দশমিক ১ ভাগেরও কম), যা মহামারী সীমার নিচেই রয়েছে। জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচীর সূত্র মতে ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কনডম ব্যবহারের হার ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালে ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৩ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি/ এইডস সম্পর্কে সঠিক ও স্পষ্ট ধারণা রাখে এমন লোকের অনুপাত ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কারণে বিগত বছরগুলোতে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ২০০৫ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতো প্রতি এক লাখে ৪৪১ জন, সেটি কমে ২০১৪ সালে হয়েছে ৪৩৪ জনে। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০৮ সালে প্রতি লাখে ১ দশমিক ৪ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৩৪ এ নেমে এসেছে। ১৯৯০ সালে যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রতি লাখে ৮০ জন, ২০১৪ সালে এসে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ জনে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এই লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথেই রয়েছে বাংলাদেশ। পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ ॥ এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ খারাপ অবস্থায় নেই। ১৯৯০ সালে দেশে বনাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ ছিল ৯ শতাংশ, যা ২০১৪ সালে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে ওজন ক্ষয়কারী পদার্থের পরিমাণ ২০২ টন থেকে হ্রাস পেয়ে ৬৪ দশমিক ৮৮ হয়েছে। সংরক্ষিত ভূমি ও জলাশয়ের পরিমাণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১৯৯০ সালে জনসংখ্যার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বস্তিতে বসবাস করত, যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে। সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা ॥ গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে গড় বার্ষিক বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার পরিমাণ ১৯৯০-৯১ এর ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এই সময়ে মাথাপিছু বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা অবমুক্তির পরিমাণ ১৯ দশমিক ৭৯ মার্কিন ডলার থেকে ৭ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। ১৯৯০-৯১ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার গড় বার্ষিক পরিমাণ ছিল ঋণ ও অনুদান মিলে যথাক্রমে ৬৩৫ মিলিয়ন ও ১ হাজার ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট ৩৪টি ওইসিডি দেশের মধ্যে মাত্র ৯টি দেশ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশকে ৭৪৮ দশমিক শূন্য ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করেছে। এটি ওই বছরের মোট বৈদেশিক সহায়তার মাত্র ২২ দশমিকক ২৩ ভাগ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে এসব সহায়তার পরিমাণ ছিল চরমভাবে অপ্রতুল এবং উন্নত দেশগুলোর অধিকাংশই সহায়তাদানে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।
×