ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় নতুন এলওসির আওতায় প্রকল্প আসছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৭ আগস্ট ২০১৫

ভারতীয় নতুন এলওসির আওতায় প্রকল্প আসছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ নতুন ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় প্রকল্প নেয়া শুরু হচ্ছে। সবার আগেই হাতে নেয়া হবে এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্ডিয়ান ইকোনমিক জোন ইন মংলা এ্যান্ড ভেড়ামারা প্রকল্পটি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে হওয়া সমঝোতা চুক্তির ১৩ প্রকল্পের তালিকায় না থাকলেও এ প্রকল্পে নীতিগত অনুমোদন দেয়ার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে শীঘ্রই একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে একনেক সভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ফলে দেশে শিল্প খাতে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। কারিগরি খাতে দক্ষ শ্রমিক গড়ে উঠবে। স্থানীয়দের কাজের সক্ষমতাও বাড়বে। অন্যদিকে নতুন এলওসির ২০০ কোটি ডলারের সুদের হার ও শর্ত চলমান ১০০ কোটি ডলারের (২০ কোটি অনুদান) ঋণের মতোই হবে বলে জানা গেছে। সে হিসাবে নতুন ঋণের সুদহার হবে ১ শতাংশ। শর্ত হিসেবে চলমান ঋণের মতোই নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য অন্তত ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা অবশ্যই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবে (পিডিপিপি) দেখা যায়, শীঘ্রই প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। পিডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ভারতীয় ২০০ কোটি ডলারের ঋণের আওতায় এর অর্থায়ন হবে। গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ১৩ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় এই ঋণের আওতায় মোট ২৩৭ কোটি ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, যার ৩৭ কোটি ডলার বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে। আগের ১৩ প্রকল্পের মধ্যে রেলের উন্নয়নে রয়েছে ৪৯ কোটি ডলার ব্যয়ের তিনটি প্রকল্প। এগুলো হলো- ৩৮ কোটি ডলার ব্যয়ে রেলপথের খুলনা-দর্শনা সেকশনকে ‘ডাবল লাইনে’ উন্নীতকরণ, ১৩ কোটি ডলার ব্যয়ে পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইনকে ডুয়েলগেজে উন্নীতকরণ, ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যয়ে সৈয়দপুর রেল স্টেশনের ওয়ার্কশপ নির্মাণ। নৌপরিবহন খাতে আশুগঞ্জ নদী বন্দরের আধুনিকায়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার। এ খাতের আরেকটি প্রকল্প হলো- আশুগঞ্জ বন্দরের অভ্যন্তরীণ কন্টেনার টার্মিনাল উন্নয়ন প্রকল্প। এর জন্য ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার। ভারতের ঋণের অর্থে ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও দুটি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট উন্নয়ন করা হবে। এর জন্য ৩৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে নতুন করে ১ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। পরিবহন খাতের মধ্যে ৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার ব্যয়ে বিআরটিসির জন্য ৫০০টি ট্রাক সংগ্রহ, ৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার দিয়ে বিআরটিসির জন্য দ্বিতল বাস ক্রয় এবং ৬ কোটি ৯১ লাখ ডলার ব্যয়ে সড়ক ও জনপথের জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানি। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ভারতীয় ঋণে চারটি মেডিক্যাল কলেজ ও একটি জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি ডলার। এছাড়া অন্য প্রকল্পের মধ্যে ১২ জেলায় আইটি হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ১০ লাখ ডলার। সূত্র জানায়, বর্তমান চলমান এলওসির আওতায় প্রকল্পগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে ৭টি প্রকল্প। বাকিগুলো বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। মোট ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে যে ৭টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে সেগুলো হলো- ৮১টি বগি ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, ৫০টি আর্টিকুলেটেড ও ৮৮টি সিঙ্গেল ডেকার এসি বাস সংক্রান্ত, ১০ লোকোমোটিভ সংক্রান্ত প্রকল্প, ১৬৫ ব্রডগেজ (বিজি) ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, প্রকিউরমেন্ট অব ১৬ লোকোমোটিভ প্রকল্পের আওতায় সবগুলো লোকোমোটিভ এসেছে, ১৭০ ফ্লাট ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় ঋণের অর্থে বাস্তবায়নাধীন থার্ড-ফোর্থ লাইন ডুয়েলগেজ সংক্রান্ত প্রকল্পটি কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে। এতে আরও নতুন কম্পোনেন্ট যুক্ত হয়েছে। গত বছরের ১৪ এপ্রিল ভারতের পক্ষ থেকে এটি বাস্তবায়নের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। খুলনা-মংলা পোর্ট সংক্রান্ত প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। ডিটেইল্ড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির কাজ শেষ। দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটির জন্য দুটি আলাদা বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে এবং গত বছরের জানুয়ারি মাসে মূল সেতু বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এর একটি সেতু বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে ২ বছর এবং অন্যটির আড়াই বছর।
×