ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ের চর বাগডাঙ্গাতে অবৈধ করিডর

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৬ আগস্ট ২০১৫

চাঁপাইয়ের চর বাগডাঙ্গাতে অবৈধ করিডর

ডি এম তালেবুন নবী, চরবাগডাঙ্গা ঘুরে এসে ॥ গড়ে উঠেছে একটি অবৈধ অনুমোদনহীন করিডর। শত শত খালি ট্রাক আর তিন চাকার স্যালো ইঞ্জিনের ভটভটি বা নসিমন। এ সব ভটভটি বা নসিমনের পেছন দিক ট্রাকের মতো ফাঁকা। গরু-মহিষ বহনকারী। প্রায় কোয়ার্টার কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার দুই ধারে গিজগিজ করা মানুষ। তার মধ্যে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা গরু-মহিষের লম্বা লাইনে ভর্তি এলাকাটি। একাধিক স্থানে উঁচু ঢিবি নজরে আসলো। এ সব উঁচু মাটির গড়া ঢিবি দিয়ে গরু-মহিষ ভর্তি হচ্ছে যান্ত্রিক যানবাহনে। গড়ে উঠেছে গরু-মহিষের হোটেল। পাশাপাশি একাধিক অস্থায়ী পাকা দোকানের মতো অবকাঠামো। এগুলো অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ সবের মধ্যে শতাধিক বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন। কেউ অফিস পোশাকে কেউ আবার সাদা পোশাকে। কয়েক হাজার দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল। আবার এর মধ্যেই বিশেষ একটি বাহিনীর টহল জিপগাড়ি। এ সবের মধ্যেই রয়েছে বিজিবির স্থায়ী ক্যাম্প বা বিওপি। নাম রাখের আলী। এলাকাটি যেতে ব্যবহার করা হয় পদ্মা নদী ভাঙ্গন ঠেকানো বাঁধের পাকা সড়ক। বাঁধের ডানে ভয়াল পদ্মা নদী আর বামে ফসলের জমি, আমের বাগান ও বড় বড় বাঁশঝাড়। বাঁধের পাকা সড়কটি এখানেই শেষ হয়েছে। তারপরে আর যাওয়ার পথ নেই। এখানেই বৈধ করিডর আদলে গড়ে উঠেছে গোপন করিডর। পদ্মার ওপারে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলা। এখনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে অবাধে ভারতের সঙ্গে কথা বলা যায়। বর্ণনা মতে, এখানেই গড়ে উঠেছে অঘোষিত অবৈধ একটি করিড়র। শতাধিকের ওপর অন্তত ১০টি স্থানে মহিষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। গবাদিপশু আসা বন্ধ হওয়ার পর জেলার দুই বৈধ করিডর কানসাট ও ভোলাহাট বন্ধ হওয়ার মুখে পড়েছে। জেলা লাগুয়া ৮ কিলোর মধ্যে অবস্থিত গোদাগাড়ির সুলতানগঞ্জ করিডর কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে। তবে সীমান্ত লাগুয়া চর বাগডাঙ্গার পদ্মা তীরের বাখের আলী বিওপি ক্যাম্প সংলগ্ন অঘোষিত অনুমোদনহীন অবৈধ করিডরটিকে মহিষ করিডর বললে ভুল হবে না। এখানে গরুর পরিমাণ খুবই কম। ১০টি মহিষের বিপরীতে একটি বা দুটো গরু আসছে। তবে মহিষ আসে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশী যান্ত্রিক টলারে। সময় নিচ্ছে আসতে মাত্র ২০ মিনিট আর অবৈধ করিডর বলে আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার শতাধিক সদস্য চাঁদা ওঠাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। প্রতি সপ্তাহে এ করিডর হতে শুধু অবৈধ চাঁদা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থাকে ১০ লাখের অধিক। অর্থাৎ মাসে ৪০ লাখ টাকা। আর লোক দেখানো রাজশাহীর পরিত্যক্ত সুলতানগঞ্জ করিডরের রাজস্ব পরিশোধের কাগজপত্র দেয়া হচ্ছে কিছু কিছু গরু-মহিষের বিপরীতে। সুলতানগঞ্জ করিডোর বাগডাঙ্গা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। মহানন্দা নদীর ওপারে। সুলতানগঞ্জ করিডর ১৯৯৪ সালে চালুর পর গবাদিপশু আসতো ভারতের লালগোলা ও ভগবানগোলা থেকে। এ সব এলাকার গবাদিপশু এখন আসছে চর বাগডাঙ্গার বাখের আলীর অবৈধ অনুমোদনহীন করিডরে। বাখের আলী সীমান্তের বিপরীতে পদ্মার ওপারের ভারতীয় বিএসএফ ক্যাম্প নাড়োখাদি। বিএসএফ ক্যাম্পটির অবস্থান মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর থানার অধীন। এই ভারতীয় ক্যাম্পের কাছাকাছি দুটি গবাদিপশুর বড় আকারের হাট রয়েছে। তবে মূলত এ সব হাটে অধিক পরিমাণে মহিষের আমদানি ও কেনাবেচা হয়ে থাকে। ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিষের আমদানি হয়ে থাকে। অনেকে মহিষের হাট বলে থাকে। হাট দুটির একটি ইলিমবাজার ও অপরটি সাগরদীঘিতে ভারতের এ সব হাটের মহিষ পট্টির সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে চর বাগডাঙ্গার বাখের আলীতে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ করিডরের। গত তিন মাস ধরে জমজমাট করে রেখেছে অবৈধ করিডরটি একটি সিন্ডিকেট। এরা ভারতীয় সহযোগিতায় নাড়োখাদি বিএসএফ ক্যাম্পকে নিয়ন্ত্রণে বা পকেটে পুরে প্রতিদিন শত শত মহিষ নিয়ে আসছে এ অবৈধ করিডরে। একইভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ করিডর ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে। ফাঁকি দিচ্ছে সরকারী রাজস্ব। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে এ অবৈধ করিডর পরিচালনায় রয়েছে আজিজুর, রফিক, মহশিন ও ইসমাইলসহ একাধিক ব্যক্তির একটি সিন্ডিকেট। এদের রাজনৈতিকভাবে মদদ দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল ও ব্যক্তি। ৯ বিজিবিসহ অধিনায়ক মেজর নাজমুলের দৃষ্টি আকর্ষণ (০১৭৬৯-৬০২১২১) করলে তিনি জানান এ ধরনের করিডরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তার জানা নেই। তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। চাঁপাই জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর কবির জানান চরবাগডাঙ্গায় কোন ধরনের গবাদিপশুর করিডর অনুমোদন এখন পর্যন্ত নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে বৈধ করিডর না হওয়ার পরেও এখানকার মহিষ ও গরু অবাধে শহরের শহীদ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ সেতু পেরিয়ে দেশের অভ্যান্তরে চলে যাচ্ছে। সেতুর ওপর বিজিবির একটি অস্থায়ী তল্লাসি ফাঁড়িও রয়েছে। তারপরেও মাঝে মধ্যেই এখানে যৌথ অভিযান চলে থাকে। প্রশ্ন একটাই বৈধ করিডর চরবাগডাঙ্গা না হওয়ার পরেও এখানকার মহিষ ও গরু কি ধরনের ম্যানেজের মাধ্যমে অভ্যন্তর ভাগে যাচ্ছে? আর সরকার হারাচ্ছে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
×