ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ১১ দফা দাবি;###;বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ অবরোধসহ নানা কর্মসূচী

রাজধানীতে ফিটনেস ছাড়া পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৬ আগস্ট ২০১৫

রাজধানীতে ফিটনেস ছাড়া পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ তিন চাকার পরিবহন চলাচল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের কাছে ১১ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অটোরিক্সা-অটোটেম্পো সংগ্রাম পরিষদ। একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচী হয়েছে। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অটোরিক্সা বন্ধে কোন আপোস নয়। এদিকে রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। প্রথম দিনের অভিযানের কারণে রাজধানীতে অটোরিক্সাসহ গণপরিবহন কম চলতে দেখা গেছে। রাজধানীতে অভিযান ॥ ফিটনেসবিহীন গণপরিবহনের বিরুদ্ধে রাজধানীতে দিনভর অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুুলিশ। অভিযানের কারণে নগরীতে অটোরিক্সাসহ গণপরিবহন চলাচল কমে যায়। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ মশিউর রহমান বলেন, আমরা ব্যক্তিগত গাড়িও আটক করব। যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি দেখছি। তাঁদের ভাড়া ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করছি। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সহনশীল না হওয়া পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন যানবাহন আটকের অভিযান চলবে। তিনি জানান, ফিটনেস না থাকায় ৯টি বাস জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। এই গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া একটি কাভার্ডভ্যানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, গিয়ার, ধোঁয়া বেরোনোর পাইপ, গ্যাস সিলিন্ডার, লুকিং প্লাস না থাকা, সামনের গ্লাস চূর্ণ-বিচূর্ণ, জানালার গ্লাস না থাকায় এসব গাড়িকে অনেক আগেই বিআরটিএ অফিস থেকে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। গত সোমবার মোটর ভেহিকেল অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৩ আইনের আওতায় পড়ে না, কিন্তু মোটরযান হিসেবে চলাচল করে, এমন সব যানও বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। ৩০ দিনের মধ্যে আদালতের এ আদেশ পালন করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আদালত রুলও জারি করেছেন। রুলে ভুয়া লাইসেন্সের বিষয়টি জানার পর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন আদালত। ওই দিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সড়ক পরিবহন (যোগাযোগ সচিব) সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ১১ দফা দাবি ॥ চালক-মালিক-যাত্রীর কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে ১১ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অটোরিক্সা-অটোটেম্পো সংগ্রাম পরিষদ। সরকারী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, ১৯৫৬ সাল থেকে অটোরিক্সা যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে দেশে প্রায় দুই লাখের বেশি অটোরিক্সা-অটোট্যাম্পো চলাচল করছে। চালকের সংখ্যা ৩ লক্ষাধিক। মালিকের সংখ্যা কয়েক হাজার। চালক-মালিকের সঙ্গে হুডবডি ইঞ্জিন মিস্ত্রিদের পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ পরিবার এ পেশায় জড়িত। এসব গাড়ি থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ গোলাম ফারুক। বক্তারা বলেন, আমরা মনে করি লেন পদ্ধতি চালু করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে এবং গাড়ি চলাচলেও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সিএনজি ও পেট্রোল চালিত অটোরিক্সা-অটোটেম্পো মহাসড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ দূর করুন। সে ক্ষেত্রে অটোরিক্সা-অটোটেম্পো চালক-মালিকগণ সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে, সড়ক ও মহাসড়কে ডিভাইডার নির্মাণ, আলাদা লেন তৈরিসহ মহাসড়কে অটোরিক্সা-অটোটেম্পো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে, ঢাকা মহানগরে চালকদের নামে বরাদ্দকৃত পাঁচ হাজার অটোরিক্সা অনতিবিলম্বে রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে, সরকার নির্ধারিত জমা গ্রহণে মালিকদের বাধ্য করা, পুলিশ ও রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, গাড়ি ছিনতাই ও শ্রমিক হত্যা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া প্রভৃতি। ভোলায় বিক্ষোভ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ভোলায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলাচলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রিক্সা মালিক ও শ্রমিকরা। বুধবার সকালে রিক্সা মালিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ শহরের নতুন বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে পৌর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। বক্তারা সড়কে তাদের ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচলের অনুমতিসহ নিবন্ধনের দাবি জানান। কুড়িগ্রামে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার সকাল থেকে তারা ইজি বাইক চলাচল বন্ধ করে কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়কে বিক্ষাভ শুরু করে। তারা দাবি করে আমদানি নিষিদ্ধ না করে হঠাৎ করে রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। এতে হাজার হাজার ইজি বাইক চালক বেকার হবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। হবিগঞ্জে সমাবেশ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা মহাসড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে হবিগঞ্জের উপজেলা বাহুবলের পুটিজুরী বাজারে শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে। বুধবার বিকেলে ওই স্থানে এই কর্মসূচীর ডাক দেন হবিগঞ্জ জেলা অটো রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন। শাহ মাজিদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন সংশ্লিষ্ট অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি শাহ আশরাফ উদ্দিন শামীম। এতে যোগ দিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক ও মালিক। এই সমাবেশ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে ওই রকম যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদ জানিয়ে সেøাগান দেয়। বক্তারা বলেন, অবিলম্বে ওই হটকারী সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে পরিবহন মালিকরা। এসব মালিকের সবাই মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচলে দীর্ঘদিন থেকেই বিরোধিতা করে আসছেন।
×