ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢামেকে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া মায়ের কোলে আধা ঘণ্টা দুগ্ধ পান করে

অবশেষে ১৪ দিন পর মা-মেয়ের মধুর মিলন

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৬ আগস্ট ২০১৫

অবশেষে ১৪ দিন পর মা-মেয়ের মধুর মিলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৪ দিন পর অবশেষে মায়ের পরশ পেল মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ মাগুরার সেই শিশুটি। মায়ের পরশে থেকে মাতৃদুগ্ধও পান করেছে শিশুটি। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় মায়ের কোলে ছিল শিশু সুরাইয়া। সন্তানকে কোলে তুলে নেয়ার পর আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন মা নাজমা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মেয়েকে কোলে তুলে নিতে পেরেছে মা, এতে যেন তার শরীরের সকল যন্ত্রণা নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। বুধবার দুপুরে শিশুটির মা নাজমা বেগমকে গাইনি ওয়ার্ড থেকে এনআইসিইউতে নেয়া হয়। সেসময় তার শিশুকন্যাকে কাঁচের ঘর থেকে তুলে তার কোলে দেয়া হয়। সন্তান সুরাইয়াকে প্রায় আধাঘণ্টা কোলে আগলে রাখেন নাজমা। এরপর দুগ্ধ পান করান। কিছু সময় পর সুরাইয়া ঘুমিয়ে গেলে তাকে আবারও কাঁচের ঘরে রেখে দেয়া হয়। মা নাজমাকেও ফিরিয়ে আনা হয় গাইনি ওয়ার্ডে। শিশু কন্যাকে কোলে নেয়ার পর নাজমা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। তিনি এতটাই আনন্দিত যে তা কিভাবে বোঝাবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। তখন তিনি বলেন, এতদিন পর আমার সোনামণিকে কোলে নিতে পেরে আমার প্রাণটা জুগিয়ে গেছে। এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম কবে আমার কলিজার টুকরাকে কোলে নিতে পারব। আজ এই অপেক্ষা শেষ হয়েছে। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি দেখতে পান শিশু সুরাইয়াকে কাঁচের ঘরে শুইয়ে রাখা হয়েছে। পরে একজন চিকিৎসক কাঁচের ভিতর থেকে বের করে সুরাইয়াকে তার মায়ের কোলে তুলে দেন। এ সময় একটি মায়ের যে কী অনুভূতি হয় তা বলে বোঝনোর মতো নয় বলে জানান তিনি। নাজমা আরও জানান, সুরাইয়াকে কোলে দেয়ার পর তাকে নিয়ে চেয়ারে বসেন। তখন অনেক সময় মেয়ের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। যখন তিনি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তখন সেও তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। আধাঘণ্টার বেশি সময় তাকে কোলে রাখতে পেরেছিলেন তিনি। এরপর দুগ্ধ পান করান। দুগ্ধ পানের কিছু পরই সুরাইয়া ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও নাজমার কোলে কিছুক্ষণ ছিল সুরাইয়া। পরে চিকিৎসকরা আবার তাকে কাঁচঘরে শুইয়ে দেন। সুরাইয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলী জানান, শিশুটির সুস্থতার জন্যই তার মায়ের কোলে দিয়ে দুধ পান করানো হয়েছে। এতে যেমন শিশুটির অবস্থার উন্নতি হবে তেমনি মাও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে। তাই মাকে শিশুর কাছে নেয়া হয়েছে। শিশুটির অবস্থা আগের থেকে ভাল বলে জানান তিনি। তার খাবারে মায়ের দুধের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। এখন ১৫ এমএল দুধ খাওয়ানো হচ্ছে শিশুটিকে। আগামী শনিবারের মধ্যেই সুরাইয়াকে স্পেশাল কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ) থেকে বের করে সাধারণ ওয়ার্ডে নেয়া যেতে পারে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। গত ২৩ তারিখ জন্মের পর শিশুটির অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তখন মা নাজমা মাগুরাতে ছিলেন। দুদিন পর মাকেও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এ সময় তাকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তখন মা ও মেয়ের দেখা হয়নি। সেসময় সুরাইয়ার শরীরে জন্ডিষের প্রভাব থাকায় তাকে এনআইসিইউতে রাখা হয়। এছাড়া মায়ের শরীরেও ইনফেকশন দেখা দিয়েছিল তাই মাকে শিশুটির কাছে নেয়া হয়নি। এতদিন অপেক্ষার পর এখন দুজনের অবস্থা একটু ভাল হওয়ায় বুধবার দুপুরে মায়ের কোলে তুলে দেয়া হয় শিশু সুরাইয়াকে। এদিকে শিশুটির নাম নিয়ে তার বাবা-মা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ করছি সুরাইয়াকে কেউ বুলেট বেগম বলবেন না তার একটা নাম আছে। ঢাকাতে আসার পরই সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূইয়া তার বড় মেয়ে সুমাইয়ার নামের সঙ্গে মিল রেখে সুরাইয়া রাখেন। এর আগে তার ফুফুরা তার নাম দেয় মরিয়ম। এরপরও অনেকে সুরাইয়াকে বুলেট বেগম বলে ডাকাতে দুঃখ প্রকাশ করেন তারা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ায় সাবেক ছাত্রলীগকর্মী কামরুল ভুঁইয়ার সঙ্গে সাবেক যুবলীগকর্মী মহম্মদ আলী ও আজিবরের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এসময় কামরুলের বড় ভাই বাচ্চু ভূঁইয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা বেগম (৩০) ও প্রতিবেশী মিরাজ হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। কামরুলের চাচা আব্দুল মোমিন ভূঁইয়া গুলিতে নিহত হন। ওই রাতেই মাগুরায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাজমার গুলিবিদ্ধ শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। অবস্থার অবনতি হলে দুই দিন পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
×