ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

১ টাকায় হিসাব খোলা যাবে;###;কৃষি ও এসএমই ঋণের ব্যবস্থা

নতুন বাংলাদেশীরা ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসছে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৫ আগস্ট ২০১৫

নতুন বাংলাদেশীরা ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসছে

রহিম শেখ ॥ নতুন বাংলাদেশী নাগরিকদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যাতে অন্য বাংলাদেশীর মতো সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা পায় সাবেক ছিটমহলবাসী। সেই সঙ্গে যে প্রত্যাশা নিয়ে এই মানুষগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তা পূরণ হতে পারে। এর অংশ হিসেবে সদ্য সাবেক হওয়া ছিটমহলবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক হিসাব খোলা, টাকা জমানো ও ঋণ গ্রহণের সুবিধা পাবেন সাবেক ছিটমহলবাসী। এরমধ্যে হতদরিদ্র কৃষক, জেলে, কামার বা অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ পাচ্ছেন। কৃষিনির্ভর এসব মানুষের আর্থিক উন্নতির জন্য কৃষিঋণ বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উন্নয়নেও ঋণ পাবেন এ অঞ্চলের মানুষ। সিএসআর তহবিলসহ জীবনমান ও অন্যান্য খাতভিত্তিক উন্নয়নের জন্য গঠিত তহবিল থেকেও ঋণ সহায়তা পাবেন তারা। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করে তাদের চাহিদা অনুসারে ঋণ সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে যথাশীঘ্র। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয় ১ আগস্ট। এতে ভারতের মধ্যে থাকা ১১১টি ছিটমহলের প্রায় ৫০ হাজার ৫৮০ জন বাংলাদেশের মূল ভূখ-ের নাগরিক হতে পেরেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও মূল ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবার মতো ব্যাংকিং সেবা থেকেও তারা বঞ্চিত হন। এখন মূল ভূখ-ের নাগরিক হওয়ায় স্বাধীনতার ৬৮ বছর পর রাষ্ট্রীয় সব ধরনের অধিকার লাভের সুযোগ পেল। সূত্র জানায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে সাবেক ছিটমহলবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ অর্থ দিয়ে নতুন বাংলাদেশীদের জন্য সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সেবা, সড়ক অবকাঠামো তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সদ্য নাগরিকত্ব পাওয়া এসব মানুষ যেন সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা পায় সেজন্য ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড, গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নতুন বাংলাদেশীদের জীবনমান উন্নয়নে এখন অনেক কাজ করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম এইসব নাগরিকদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা। যদিও গ্রামের মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসতে চায় না। খুব সহজে ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব নাগরিকের আগে প্রয়োজন অর্থ সহায়তা। একই সঙ্গে অবশ্যই সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ করতে হবে। ঋণ নিতে গিয়ে ভোগান্তি যাতে না হয় সেদিক খেয়াল রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সদ্য নাগরিকত্ব পাওয়ার এসব মানুষ যেন সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা পায় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে একাধিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কৃষিনির্ভর এসব মানুষের আর্থিক উন্নতির জন্য কৃষিঋণ বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চালু করা পুনর্অর্থায়ন তহবিল থেকে সহায়তা দিতে বলা হয়েছে। কৃষিশিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উন্নয়নেও ঋণ পাবেন এ অঞ্চলের মানুষ। হতদরিদ্র কৃষক, জেলে, কামার বা অন্যান্য প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য করপোরেট-সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিল থেকে সহায়তা দিতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশকে ভালবেসে এবং এদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর আস্থা রেখে ছিটমহলবাসী স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তারা যেন হতাশ না হন সেজন্য যাবতীয় আর্থিক কার্যক্রম চালাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। তাদের মাঝে কৃষি, এসএমই ঋণ, ১০ টাকায় হিসাব খোলার সুযোগ দিয়ে পুনর্অর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণ এবং সিএসআর তহবিল থেকে অর্থ দেয়া হবে। খুব শীঘ্র বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ে ওইসব অঞ্চল পরিদর্শন করা হবে। তাদের কী ধরনের সমস্যা আছে তা দেখে সে অনুযায়ী খাতভিত্তিক ঋণ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসব মানুষের মাঝে কৃষিঋণ বিতরণ করতে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ। সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তিটি বাস্তবায়িত হওয়ায় নতুন করে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ১১১টি ছিটমহল বর্তমানে বাংলাদেশ ভূখ-ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ অঞ্চলের মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো তাদের অধিকার সুনিশ্চিত এবং সর্বোপরি ওই অঞ্চলের কৃষি কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তাদের মাঝে কৃষিঋণ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাই কৃষি ও পল্লিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচী অনুযায়ী তাদের মাঝে ঋণ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। গত রবিবার সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে সার্কুলার জারি করে সিএসআর তহবিল থেকে এসব মানুষের সহায়তা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচীর আওতায় এসব মানুষ ১০ টাকার বিনিময়ে হিসাব খোলার সুযোগ পাবেন। নিকটবর্তী যে কোন ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে তারা হিসাব খোলা ও পরিচালনার জন্য কোন চার্জ ছাড়াই ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন। এছাড়া ১০ টাকার হিসাবধারীদের ঋণ সহায়তা দিতে গঠিত ২০০ কোটি টাকার তহবিল থেকেও ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন নতুন নাগরিকরা। এসব হিসাবগুলোকে ‘পূর্বতন ছিটমহলবাসীর হিসাব’ নামে নির্ধারিত ছকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রিপোর্ট করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের মানচিত্রে সদ্য যুক্ত হওয়া সাবেক ছিটমহলগুলোকে এসএমই ঋণ বিতরণ আওতায় আনতে সকল তফসিলী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পক্ষ থেকে জারিকৃত সার্কুলারে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, দেশের মানচিত্রে সদ্য যুক্ত হওয়া ১১১টি ছিটমহলে বসবাসকারী মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অধিকার সুনিশ্চিত করা এবং এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ঋণ ঋণ নীতিমালা এবং কর্মসূচীর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া জন্য সকল তফসিলী ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে।
×