ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন বিভাজন হতে পারে না ॥ সৈয়দ আশরাফ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৫ আগস্ট ২০১৫

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন বিভাজন হতে পারে না ॥ সৈয়দ আশরাফ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে খুনীরা বাংলাদেশকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশকে স্বাধীন করাই ছিল যেন বঙ্গবন্ধুর মহাপাপ। কিন্তু খুনীদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে আমরা জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে পেরেছি। আর আওয়ামী লীগ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায়। তাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন বিভাজন হতে পারে না। কারণ বঙ্গবন্ধু মানেই বঙ্গবন্ধু। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করা হলেও হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকের ভিড়ে এক পর্যায়ে তা রীতিমতো জনসভায় রূপ নেয়। ১৫ আগস্ট মিথ্যা জন্মদিন পালন করায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, দেশবাসীও জানে যে ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন নয়। আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আমরা সবাই মিলে সর্বজনীনভাবে জাতির পিতার জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন করতে চাই। তাই খালেদা জিয়াকে বলেছিলাম আপনি দয়া করে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন না করে ১৬ আগস্ট করেন। কিন্তু আপনি (খালেদা জিয়া) ইচ্ছাকৃতভাবে রক্তাক্ত-শোকাবহ ১৫ আগস্টকে বেছে নিয়েছেন আপনার জন্মদিন হিসেবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ৪০ বছর হয়েছে, আর কত! এভাবে তো দেশ-রাষ্ট্র চলতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তর্ক-বিতর্ক দেখতে চাই না। যে যার যোগ্য সেই আসন তার প্রাপ্য। বঙ্গবন্ধুর একমাত্র প্রাপ্য এ বাংলাদেশ। তাই আসুন সর্বজনীনভাবে জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী পালন করি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের উন্নয়ন তাদের ভাল লাগে না। এ কারণেই তারা নির্বাচনের ধুয়া তোলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ গণতান্ত্রিক পন্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। সাংবিধানিকভাবেই এই দেশ পরিচালিত হবে, এগিয়ে যাবে। কোন অপশক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের এই অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনী মোশতাক মীরজাফরের ভূমিকা পালন করেছে। তেমনি জিয়াউর রহমান লর্ড ক্লাইভের ভূমিকা পালন করেন। জিয়াউর রহমান আড়াই মাস মোশতাককে ক্ষমতায় রেখে আওয়ামী লীগকে বোঝাতে চেয়েছিল। মোশতাককে লোভ দেখিয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিল। জিয়াউর রহমান এই দেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য সকল পথ খুলে দিয়েছিল। শিল্পীমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টে কেক কাটার অর্থ এই তিনি ১৫ আগস্ট ধারণ করেন। যারা হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত তিনি (খালেদা) তাদেরকে বোঝাতে চান আজকেও আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। হত্যাকারীদের সঙ্গে মিলে আন্দোলন করে, জোট গঠন করে ও সরকার গঠন করে তিনি তাই প্রমাণ করেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্যে রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আনিসুল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি এমপি, সুজিত রায় নন্দী, মুন্নুজান সুফিয়ান, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। তবে অনুষ্ঠানে সামনে বসাকে কেন্দ্র করে ক’জন নেতাকর্মী নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও চেয়ার ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হলে কেন্দ্রীয় নেতা এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে তা নিরসন হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে জেনারেল জিয়াÑহানিফ ॥ রাজধানীর মতিঝিলের ওয়াপদা ভবনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক-কর্মচারী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে দেশী-বিদেশী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। একাত্তরে পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হয়ে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, মেজর জিয়া ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তিনি জানতেন। নিজের পেশাগত দায়িত্বে থেকেও তিনি খুনীদের বাধা না দিয়ে বরং উস্কানি দিয়েছিলেন। কারণ তিনিও চেয়েছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে। সরাসরি হত্যার মিশনে অংশ না নিলেও খুনীদের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। আর মেজর জিয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলেই দেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মোল্লা আবুল কালাম আজাদ। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এতে বক্তব্য রাখেন।
×