ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৫ আগস্ট ২০১৫

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘...হাজার বছর ধরে নিরন্তর প্রতীক্ষার পর শোনা যায় সেই কণ্ঠস্বর। বজ্রকণ্ঠ। বীজমন্ত্র। নক্ষত্রমানব। মন্ত্রবীজ তর্জনীরেখায়। ভেঙ্গে যায় বরফের ঘুম। ভাঙ্গে প্রাচীন শৃঙ্খল। ছুটে আসে সমুদ্রগর্জন। আছাড়িপিছাড়ি ঢেউ মাথা ঠোকে বোধের জমিনে। হাজার আগ্নেয়গিরি ফুঁসে ওঠে সহস্র শিখায়। শিখা চিরন্তন। স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল, দাবানল থেকে বাংলাদেশ।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বর্জ্রনির্ঘোষ ভাষণ নিয়ে কবি আবু হাসান শাহরিয়ার তাঁর ‘নক্ষত্রমানব’ কবিতায় এমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম উচ্চতা তুলে ধরেছেন নিখুঁতভাবে। বাঙালী জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস আগস্টের আজ পঞ্চম দিন। সর্বত্রই শোকের আবহ। নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন পতাকা। পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার দীর্ঘ ২১৪ বছর পর ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। দাতত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বাঙালী জাতি যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনেন লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঘাতকরা চেয়েছিল ইতিহাসের চাকাকে পেছনে ঘোরাতে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বর্বরোচিত হত্যাকা-ের বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল পাস করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে পারেনি। বরং তারাই নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনীরা আস্ফালন করে বলেছিল, পৃথিবীতে তাদের বিচার করার কারও সাধ্য নেই। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘাতকদের বাংলার মাটিতে বিচারে ফাঁসি হয়েছে। ফাঁসির রায়ও কার্যকরের মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। বছর ঘুরে বাঙালীর সামনে আবার এসেছে শোকাবহ আগস্ট। শোকের নানা অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধানবত চিত্তে স্মরণ করছেন সেই বাংলাদেশ নামক দেশের স্বাপ্নিক স্থপতি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে । পুরো শোকের মাস বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে, কালো পতাকা উত্তোলন এবং নানা অনুষ্ঠানে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর খুনী নরপিশাচ একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের। দিন যতই এগোচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীসহ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মদদদাতাদেরও বিচারের দাবি ততই তীব্র হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে সাঁটানো পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুনেও শোভা পাচ্ছে এই একই দাবি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শহর-নগর-বন্দরে কালো ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে, নানা অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে জাতির জনককে। শোকাবহ আগস্টের পঞ্চম দিনে আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচীর ধারাবাহিকতায় আজ বুধবারও রয়েছে আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে আওয়ামী যুবলীগ আয়োজিত মাসব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীতে প্রতিদিনই চলছে নানা অনুষ্ঠানমালা। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জয়বাংলা একাত্তর লীগ শোক সমাবেশ ও র‌্যালি করেছে। সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায় বলেন, জাতীয় শোক দিবসে যারা মিথ্যা জন্মদিন পালন করে তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ও ’৭৫-এর ঘাতকদের সহযোগী। দেশবাসী আশা করে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া শোক দিবসে তাঁর ভুয়া জন্মদিন পালন বন্ধ করবেন। সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, অরুণ সরকার রানা, অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, আসাদুজ্জামান দুর্জয়, এমএ করিম, সুরুজ আলম সুরুজ, রোকনউদ্দিন পাঠান, শেখ নওশের আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
×