ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পানিবন্দী মানুষের দুর্দশা

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৫ আগস্ট ২০১৫

পানিবন্দী মানুষের দুর্দশা

পূর্ণিমা এবং ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে সারাদেশে ভারি বর্ষণ এবং জোয়ারের পানির তোড়ে বহু স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে লোকালয় ও ফসলি জমি। উপকূলে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের দুর্দশা সীমাহীন। সংবাদদাতাদের কাছ থেকে প্লাবনের যেসব খবর আসছে তাতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়তে হয়। ইতোমধ্যে পাঁচ জেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ। চট্টগ্রামে ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। আশ্রয়কেন্দ্রে সবার ঠাঁই হচ্ছে না। পানিবন্দী অবস্থায় কেবল মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, গবাদিপশু, মৎস্যসম্পদ এবং ফসলেরও ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। সড়ক, ঘরবাড়ি এবং নানা অবকাঠামোরও ক্ষতি সাধিত হয়। সব মিলিয়ে একে বিপুল মানবিক বিপর্যয় বলতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। উজানের পানি প্রবেশের পাশাপাশি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ দূর হতে আরও সময় লাগবে। ভাটির দেশ হিসেবে উজান থেকে আসা পানি নামবে এটাই বাস্তবতা। এ কারণে উজানে কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে তার ওপর এখানকার বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করে। তাই সেখানকার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখলে বাংলাদেশে বন্যার আগাম পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে নদীর পানির ওঠানামা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বা এ জাতীয় তথ্য বিনিময়ের আনুষ্ঠানিক কোন ব্যবস্থা কার্যকর নেই। দেশগুলোর মধ্যে এ ধরনের তথ্য বিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে বন্যার পূর্বাভাস বা আগাম প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। তবে ইন্টারনেটের যুগে এসব তথ্য পাওয়া কঠিন নয়। অপরদিকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবন সুদূর অতীত থেকেই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটিই বেড়েছে। উপকূলীয় মানুষকে রক্ষা করতে হলে তাদের ঘরবাড়ির মানোন্নয়ন, পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, গবাদিপশু রক্ষায় উঁচু ঢিবি নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অনেক কিছুই করা প্রয়োজন। আর সেগুলো করতে হবে একটি মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে, বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ খুব বেশি ফল দেয় না। পানিবন্দী মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছে দেয়াই এখন প্রধান জরুরী কাজ। জেলা প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যেই পানিবন্দী মানুষের কাছে চাল ও নগদ টাকা পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বেসরকারী সাহায্য সংস্থাসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানেরও সক্রিয়তা জরুরী। বিশেষ করে শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবার এবং পানীয় জলের সরবরাহ সচল রাখা জরুরী। শিশুদের কথাও স্মরণে রাখা চাই। এ সময় ডায়রিয়াসহ নান রোগব্যাধির প্রকোপও বেড়ে যায়। তাই ওষুধের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। মানুষ মানুষের জন্য। আমরা আশা করব পানিবন্দী মানুষের দুর্দশা লাঘবে সব পক্ষ সর্বোতভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসবে।
×