ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পিনাক-৬ ট্র্যাজেডির এক বছর দোষীরা সাজা পায়নি

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৪ আগস্ট ২০১৫

পিনাক-৬ ট্র্যাজেডির এক বছর দোষীরা সাজা পায়নি

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট পদ্মা নদীর মাঝে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ লঞ্চ। নাম শুনলে এখনও আতঙ্কে কাঁপে স্বজনহারাদের বুক। সেদিন মুহূর্তের মধ্যে আনন্দের ঈদ বিষাদে পরিণত হয়ে যায়। পিনাক-৬ দুর্ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও দোষীরা আজও সাজা পায়নি। আর পাবেও না কোনদিন। শুধু চোখের পানিতে বুক ভাসাবে স্বজনহারা মানুষ! এবার তাদের ঈদ কেটেছে চোখের জলে। গত বছরের এই দিনে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায় পিনাক-৬। ওভারলোডিংয়ের কারণে পদ্মায় ডুবে যায় লঞ্চটি। সরকারীভাবে ওই দুর্ঘটনায় ৪৯ এবং বেসরকারী হিসেবে ৮৬ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৫৩ জন, যাদের হদিস আজও মেলেনি। এ সময় পদ্মার তীরে স্বজনহারাদের আহাজারি আর বুকফাটা আর্তনাদে ম্লান করে দেয় ঈদের আনন্দ। এ দুর্ঘটনায় বহু মূল্যবান ও সম্ভাবনাময় জীবনের সলিল সমাধি হয়। তাতে লঞ্চ মালিকদের কিছু যায় আসে না। ওভারলোডিং থামেনিÑ লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে কয়েকগুণ। শুধু তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। ছাড়া পেয়ে গেছে লঞ্চ মালিক। বিচার আদৌ পাবে এমন আশাজাগানিয়া সংবাদ নেই। তাই এদের কাছে বিচারের প্রত্যাশা অর্থহীন। সে বছর পিনাক ট্র্যাজেটির পর উভয় ঘাট থেকে প্রতিটি লঞ্চ ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। এ কাজের সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে তদারকি অব্যাহত রেখেছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্থানীয় প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ ও পুলিশ প্রশাসন। এ নৌ-রুটে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। কয়েক মাস লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী দেখা যায়নি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা আবার ফিরে যায় পুরনো স্বভাবে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দেয়ার প্রবণতা শুরু হয়ে যায়। এখন আর পদ্মা উত্তাল থাকলেও যাত্রী পারাপারে নেই কর্তৃপক্ষের তদারকি। নেই প্রশাসন ও পুলিশি তদারকিতে লঞ্চে গুনে গুনে যাত্রী তুলে দেয়ার সেই আগের চিত্র। মন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারিও কোন কাজে আসছে না। এ সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে, তাদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে অনন্তকাল ধরে। তাই মানুষের জীবন তাদের কাছে তুচ্ছ। তাদের চাই অর্থ। মাদারীপুর জেলার শিবচরে স্বজন হারানো কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে দেখা যায়, নীরব-নিস্তব্ধ বাড়ির চারপাশজুড়ে বিষাদের ছায়া। ঈদ করতে গ্রামে এসে স্বজন হারানো পরিবারের মাঝে আর আনন্দ বয়ে আনে না। তাদের কাছে ঈদ মানেই এখন স্বজন হারানোর কষ্ট। শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচরে পিনাক-৬ ডুবিতে নিহত মিজানুর হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বিষাদের ছায়া। ঈদ নিয়ে এসেছে নতুন করে ব্যথার খোঁচা। বৃদ্ধ মায়ের ঘোলাটে চোখে শুধু লোনা পানি। ঈদ এলেই বৃদ্ধ মায়ের বুক ব্যথায় ভারি হয়ে ওঠে। নিহত মিজানুরের চাচাত ভাই বিল্লাল বলেন, ‘এবার ঈদের কয়েক দিন চাচির মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা গেছে। ছেলে মিজানুর এবং তার স্ত্রী রোকসানা ও দুই সন্তান মিলি ও মইনের ব্যবহƒত জামাকাপড় যত্ম করে গোছাচ্ছে তার মা। নেড়েচেড়ে দেখছেন আর কাঁদছেন। দুই দিন হলো সারাদিন শুধুই কাঁদেন। এই ঈদ করেই ঢাকা যাওয়ার সময় মিজান পরিবারসহ মারা যায় লঞ্চডুবিতে।’
×