ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রিভিউয়ে এই প্রথম ফাঁসির আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৪ আগস্ট ২০১৫

রিভিউয়ে এই প্রথম ফাঁসির আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফাঁসির দণ্ড থেকে রেহাই পেলেন সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে ১৪ বছর আগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া শুক্কুর আলী। ফাঁসির আসামি শুক্কুর আলীর রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদনে মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আপীল বিভাগ। মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার শিবরামপুর গ্রামের তরুণ শুক্কুর আলীকে এখন মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে। সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ রিভিউ আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দেন। শুক্কুর আলীর পক্ষে ছিলেন এম কে রহমান । অন্য দিকে সরকার পক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদেশের পর এম কে রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার পর দণ্ড কমানোর ঘটনা ‘তার জানামতে’ এই প্রথম। শুক্কুর এখন রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা (মার্সি) চাইবেন জানিয়ে তার আরেক আইনজীবী নাজনীন নাহার দীপু বলেন, ‘আশা করি সেখানে প্রতিকার পাব।’ ১৯৯৬ সালের ১১ জুন মানিকগঞ্জের শিবরামপুর গ্রামে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ১৯৯৯ সালে ১৪ বছর বয়সী কিশোর শুক্কুর আলীর বিচার শুরু হয়। ২০০১ সালের ১২ জুলাই মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শুক্কুরকে আলীকে মৃত্যুদ- দেয়। শুক্কুর আলীর পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট ) হাইকোর্টে গেলে ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সেখানেও মৃত্যুদ- বহাল থাকে। পরের বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি আপীল বিভাগেও শুক্কুরের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে। শুক্কুর আলী রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে ওই বছরের ৪ মে তাও খারিজ করে দেয় আপীল বিভাগ। এদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের এক বছর আগে ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করে সরকার। নতুন আইনে ধর্ষণ করে হত্যার ক্ষেত্রে মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান রাখা হয়। অথচ আগের আইনে ধর্ষণ করে হত্যার দায়ে কেবল মৃত্যুদ-ের বিধান ছিল, যা প্রযোজ্য হয়েছিল শুক্কুরের ক্ষেত্রে। এ বিষয়টি তুলে ধরে শুক্কুর আলী ও ব্লাস্ট ২০০৫ সালের নবেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ২০১০ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট ওই ধারা সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে। তবে আপীল বিভাগে শুক্কুর আলীর মৃত্যুদ- বহাল থাকায় হাইকোর্ট তাতে কোন হস্তক্ষেপ করেনি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল আবারও আপীল বিভাগে আসেন শুক্কুর ও ব্লাস্ট । এছাড়া ওই আইনে সাজাপ্রাপ্ত আরও ১১টি আবেদনও শুনানির জন্য আসে। শুনানি শেষে গত পাঁচ মে আপীল বিভাগের রায়ে বলা হয়, ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদ- ছাড়া বিকল্প শাস্তির বিধান না রেখে প্রণীত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন সংশোধনের পর আগের মামলাগুলো পুরনো আইনে চালানোর বৈধতা দিয়ে ২০০০ সালের আইনে যুক্ত একটি ধারা (৩৪-এর ২) সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একইসঙ্গে ধর্ষণের শাস্তি সংক্রান্ত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনের ৬ (২), ( ৩) ও (৪) ধারাও শাসনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শুক্কুরের দ- বহাল থাকায় তিনি আপীল বিভাগে আবারও রিভিউ আবেদন করেন। তার নিষ্পত্তি করে সর্বোচ্চ আদালত সোমবার সাজা কমানোর আদেশ দিল।
×