ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিতর্কিত পরিপত্র বাতিল ॥ নতুন আদেশ জারি

টেস্টে পাস করেই পাবলিক পরীক্ষায় আসতে হবে শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ আগস্ট ২০১৫

টেস্টে পাস করেই পাবলিক পরীক্ষায় আসতে হবে শিক্ষার্থীদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমালোচনার মুখে অবশেষে পাবলিক পরীক্ষার যোগ্যতা যাচাই নিয়ে জারি করা সেই বিতর্কিত পরিপত্র বাতিল করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ ক্লাস উপস্থিতির ভিত্তিতে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সম্পর্কিত এ পরিপত্র বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক আদেশ জারি করেছে। নতুন আদেশে বলা হয়েছে, শুধু ৭০ শতাংশ ক্লাস হাজিরার ভিত্তিতে টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হলে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় মনোযোগ নষ্ট হবে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার গুরুত্বও হ্রাস পাবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে। তাই এখন থেকে আগের মতো অর্থাৎ টেস্ট পরীক্ষায় পাস করেই পাবলিক পরীক্ষায় আসতে হবে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয় একই সঙ্গে জানিয়েছে, অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি কারণে কোন শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অসমর্থ হলে তার পূর্ব একাডেমিক রেকর্ড ও ক্লাস কার্যক্রমের ভিত্তিতে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয় প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্তৃক বিবেচনার প্রচলন রয়েছে। সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। জানা গেছে, শিক্ষাবিদসহ নানা মহলের ব্যাপক সমালোচনার কারণেই শেষ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। দ্রুত আলোচনা শেষে সোমবার দুপুরে পাবলিক পরীক্ষার যোগ্যতা যাচাই নিয়ে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের জারি করা সেই বিতর্কিত পরিপত্র বাতিল করা হয়। এর আগে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা না করে গত ১ মার্চ শিক্ষা সচিব যে আদেশ জারি করেছিলেন তাতে রীতিমতো নির্বাচনী পরীক্ষা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল। নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় ফেল করলেও সমস্যা নেই, ক্লাসে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি থাকলেই দেয়া যাবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা- মন্ত্রণালয়ের সেই ঘোষণায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দেন অভিভাবকরাও। শিক্ষার মানের সঙ্কটের মধ্যেই এমন ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। একে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত অভিহিত করে অবিলম্বে এটি বাতিলের দাবি জানিয়ে তারা বলেছিলেন, মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত পড়ালেখা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে ঠেলে দেবে। পড়ালেখা বাদ দিয়ে কোন মতে ক্লাস উপস্থিতিতেই মনোযোগী হবে শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনী পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে পাবলিক পরীক্ষার সামগ্রিক ফল খারাপ হতে বাধ্য। এ ছাড়া এই সিদ্ধান্তের ফলে পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী পরীক্ষা পুরোপুরি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের পরিপত্র বাতিল করে জারি করা নতুন আদেশেও শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতামতের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব অসীম কুমার কর্মকারের স্বাক্ষরে নতুন আদেশে বলা হয়েছে, আগের সেই পরিপত্র জারির পর শিক্ষক-অভিভাবক, শিক্ষার্থী-শিক্ষাবিদ এবং সুশীল সমাজের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হওয়ায় তা বাতিল করা করা হলো। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস না করলে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য পাঠানো মোটেই কাম্য নয়। আদেশে বলা হয়েছে, ‘যোগ্যতাবিহীন’ শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় পাঠানো হলে নিয়মিত ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ জন্যই পাবলিক পরীক্ষার আগে নির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজনের ধারাটি প্রচলিত হয়েছে। এদিকে কেবল এ পরিপত্র নিয়েই নয়, দেশজুড়ে আপত্তি উঠেছে মন্ত্রণালয়ের গত কয়েক মাসে জারি করা আরও কয়েকটি পরিপত্র ও শিক্ষা ক্যাডারে থাকা প্রগতিশীল শিক্ষকদের ঢাকার বাইরে বদলি নিয়েও। অভিযোগ উঠেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আকর্ষণীয় পদে পদায়নের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটনার জন্য আপত্তি উঠেছে সচিব ও শিক্ষা প্রশাসনের আরেক প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সোমবারও মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদফতরে এসে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। সাবেক ছাত্র লীগ নেতারা ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এমন অভিযোগ দেয়ায় মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কয়েকজনকে ঢাকায় আনা হয়েছে। যদিও এখনো হয়রানির শিকার হয়ে আছেন অনেকেই। অন্যদিকে শিক্ষা অধিদফতরসহ বিভিন্ন প্রকল্প ও রাজধানীর বড় বড় কলেজে পদায়ন করা হয়েছে সাবেক ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের অনেক নেতাকর্মীকে। পরিপত্র বাতিলে অভিনন্দন ॥ আগের পরিপত্র জারির পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছিল ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শিক্ষার্থীরাই ছিল এখানে সোচ্চার। পরিপত্র বাতিল করার পর সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে তারা। আবির তার ফেসবুক ওয়ালে বলেছে, অবশেষে মন্ত্রণালয় ঠিক পথে আসলো। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী আবির আরও লিখেছে, টেস্ট পরীক্ষায় পাস করা যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে ক্লাসের উপস্থিতিকে বিবেচনা করারও প্রয়োজন আছে বলে মনি করি না। এটা আরেকটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। আকরাম খান লিখেছে, ‘যারা এটা করেছিলেন তারা কদিন পরে বলতেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই এ+ দেয়া হবে। শুধুই পাস থাকবে, ফেল বলে কোন শব্দ থাকবে না।’
×