ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩ আগস্ট ২০১৫

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরও বড়ো/ করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন/ জাতির জনক যিনি অতর্কিতে তাঁরেই নিধন/ নিধন সর্বাংশে হয়ে সেই পাপ আরও গুরুতর/...বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো নাকো নীরব দর্শক/ ধিক্কারে মুখর হও/ হাত ধুয়ে এড়াও নরক।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ট্র্যাজিক মৃত্যুর অব্যবহিত পরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে’ শিরোনামে এই কবিতাটি লিখেন প্রখ্যাত কবি অন্নদাশঙ্কর রায়। বাঙালী জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস আগস্টের আজ তৃতীয় দিন। সর্বত্রই শোকের আবহ। রাজধানীসহ সারাদেশেই বিশাল বিশাল কালো পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাতে নানা সেøাগান-কবিতা শোভা পাচ্ছে। শোকের মাসে বাঙালী জাতি এবার পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি এবং খুনীদের দোসর-মদদদাতাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। আগস্ট বাঙালীর জীবনে শুধু শোকের নয় একটি অভিশপ্ত মাসও বটে। এ মাসেই ঘটেছিল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতকদের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দেশে থাকলে তাদেরও জীবন দিতে হতো নরহন্তারক কারপুরুষদের হাতে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আজও হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ১৯৮১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর পিছু ছাড়ে না। বারবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা চলতে থাকে। চলে একের পর এক নগ্ন হামলা। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে শেখ হাসিনার এক সমাবেশে চলে আরেকটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। মূলত শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ঘাতকরা ওই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। কিন্তু গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি আবারও মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে রক্ষা পান। তবে নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড প্রাণসংহার করে আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীর। তাই বর্ষ পরিক্রমায় আগস্ট এলেই সেই রক্তাক্ত স্মৃতিগুলো দেশবাসীর মনে ভেসে ওঠে। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শোকাতুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শোকের নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ’৭৫-এ ইতিহাসের নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম এই হত্যাযজ্ঞের পর থেকে বাঙালী ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং পুরো মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবস এবং ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলা দিবসের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাৎবার্ষিকী হওয়ায় এবার ৪০ দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। শনিবার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে এ কর্মসূচী শুরু হয়। ৪০ দিনের এসব কর্মসূচী সফল করতে রবিবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে যথাযোগ্য মর্যাদায় সকল কর্মসূচী সফল করার ব্যাপারে মহানগর নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়। ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রবিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের খুঁজে এনে রায় কার্যকরের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
×