ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওইসব দেশের সরকার এখন আরও অনুপ্রাণিত হবে- বিশেষজ্ঞ অভিমত

বাংলাদেশ-ভারত ছিট সমস্যার নিষ্পত্তি ৫০ দেশে প্রভাব ফেলবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩ আগস্ট ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত ছিট সমস্যার নিষ্পত্তি ৫০ দেশে প্রভাব ফেলবে

তৌহিদুর রহমান ॥ বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের ওপর বাংলাদেশ-ভারতের ছিটমহল সমস্যা সমাধানের প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের উদাহরণ সামনে রেখে এসব দেশের সরকারও নিজ নিজ দেশের ছিটমহল সমস্যার সমাধানে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এসব দেশও এখন ছিটমহল সমস্যা সমাধানে অনুপ্রাণিত হবে। দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা এমন অভিমত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ-ভারতের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় ৬৮ বছর পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল সমস্যা সমাধানের পর বিশ্বের অন্যান্য দেশও নিজেদের ছিটমহল সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হয়ে উঠবে। বিভিন্ন দেশে এখনও ছিটমহল রয়ে গেছে। সেসব দেশের ছিটমহলের বাসিন্দারাও সমস্যা সমাধানে দাবি জানিয়ে আসছে। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের ছিটমহল সমস্যা সমাধানের পর এসব দেশের সরকার এখন আরো অনুপ্রাণিত হবে। তিনি বলেন, ছিটমহল সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারের মধ্যে আন্তরিক উদ্যোগ থাকায় এই ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। ছিটমহলের বিষয়টি সকল দেশকেই মানবিক বিবেচনায় নেয়া উচিত। বিভিন্ন দেশও মানবিক বিবেচনায় নিয়ে নিজ নিজ দেশের ছিটমহল সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে ছিটমহল সমস্যা রয়েছে। তবে বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কাউন্টার ছিটমহল ছিল। বিশ্বে আর কোন দেশেই এমন কাউন্টার ছিটমহল নেই। তবে বিভিন্ন দেশে এক দেশের মধ্যে অন্য দেশের ভূখ- রয়েছে। এসব দেশের মানুষও ছিটমহলে বসবাস করে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিলুপ্ত ছিটমহলের মতো তাদেরও কোন নাগরিক স্বাধীনতা নেই। বর্তমানে বিশ্বে যেসব দেশে ছিটমহল রয়েছে, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ আর্জেন্টিনা-প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা-উরুগুয়ে, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, অস্ট্রেলিয়া-পাপুয়া নিউগিনি, অস্ট্রিয়া-জার্মানি, বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস, বসনিয়া-সার্বিয়া, কানাডা-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া-নিকারাগুয়া, ক্রোয়েশিয়া-সেøাভেনিয়া, জার্মানি-বেলজিয়াম, ইতালি-সুইজারল্যান্ড, কিরগিজিস্তান-উজবেকিস্তান, মালয়ী-মোজাম্বিক, ওমান-সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া-বেলারুশ, স্পেন-ফ্রান্স, মরক্কো-স্পেন, তাজাকিস্তান-কিরগিজিস্তান। এসব দেশের ছিটমহলের বাসিন্দারাও দীর্ঘদিন ধরে তাদের অধিকারের বিষয়ে দাবি করে আসছে। ফরাসী শব্দ ‘এনক্লেভ’ মানে কোনকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। এটি ফরাসী শব্দ হলেও পরে ইংরেজী শব্দ হিসেবে পরিচিতি পায়। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক দেশের মধ্যে অন্য দেশের ভূখ- বলতে এনক্লেভ শব্দ দিয়েই বোঝানো হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছিটমহল থাকলেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহলের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। এছাড়া তিন স্তরে ছিটের মধ্যে ছিট বিশ্বের আর কোন দেশেই ছিল না। অর্থাৎ বাংলাদেশের মধ্যে ভারতীয় ছিটমহল। আবার সেই ভারতীয় ছিটমহলের মধ্যেই বাংলাদেশের ছিটমহল। এ ধরনের জটিল ছিটমহল শুধু বাংলাদেশ-ভারতের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। এদিকে জানা গেছে, কোন কোন দেশের ছিটমহল সমস্যা শত শত বছর ধরেও সমাধান হয়নি। মরক্কো ও স্পেনের মধ্যে ছিটমহল প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছরের পুরনো। মরক্কোর মধ্যে স্পেনের মেল্লেলা ও চেউটা নামে দুটি ছিটমহল রয়েছে। এছাড়া আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া সীমান্তে ৫টি ছিটমহল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ছিটমহল সমস্যার দাবি জানিয়ে আসছেন সেখানকার জনগণ। পাপুয়া নিউগিনির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সাতটি ছিটমহল রয়েছে। ১৯৮৫ সাল থেকে এই ছিটমহল সমস্যা সমাধান নিয়ে দুই দেশ আলোচনা চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ছিটমহল সমস্যা সমাধান নিয়ে সম্প্রতি প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে ছিটমহল হারিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে, বিশ্বের অন্য ছিটমহলগুলোও বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে। পশ্চিম ইউরোপ ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্তসহ অন্যান্য দেশ থেকেও বেশিরভাগ ছিটমহল বিলীন হয়ে যেতে পারে। উল্লেখ্য, সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী শুক্রবার মধ্যরাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। এই ছিটমহল বিনিময়ের পর সেখানকার প্রায় ৬০ হাজার লোক নাগরিক অধিকার ফিরে পেয়েছেন।
×