ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দাম বেশি নেয়ার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা

মূল্য নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের ১২ আমদানিকারক নজরদারিতে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ আগস্ট ২০১৫

মূল্য নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের ১২ আমদানিকারক নজরদারিতে

এম শাহজাহান ॥ মূল্য নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের ১২ জন আমদানিকারককে নজরদারির মধ্যে আনা হচ্ছে। দাম বেশি নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। এই ১২ জন ব্যবসায়ীর নামের তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই তালিকা এখন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। সরকার আশঙ্কা করছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতা বেড়ে যেতে পারে। দাম নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে এই তালিকা করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগ ঢাকার মৌলভী বাজার, শ্যামবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং বেনাপোল, হিলি, ভোমড়া ও কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, অতি বৃষ্টি ও মৌসুমি বায়ু অনুকূলে না থাকায় গত এক মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করেছে পেঁয়াজের প্রধান উৎস ভারত। দাম বৃদ্ধির এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারেও বেড়ে গেছে মসলা জাতীয় এ পণ্যটির দাম। এতে আমদানিকারক, পাইকার ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের এখন পোয়াবারো। পেঁয়াজের অতিরিক্ত দাম নেয়া শুরু হয়েছে। আর এ কারণে বিষয়টি নজরে এনেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যাতে কোন ব্যবসায়ী বেশি দাম না নেয় সেজন্য একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব ব্যবসায়ী এখন সরকারের নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দাম নির্ধারিত হওয়া উচিত। তবে সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে দেশের কোথাও কোথাও অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। ভোমড়ার দু’জন আমদানিকারকের নাম উল্লেখ না করে তিনি জানান, ভারত থেকে ২৫ টাকা মূল্যে পেঁয়াজ কিনে তারা দেশে ৪০ টাকা দেখিয়েছেন। এভাবে বাড়তি দাম দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে। আর এতে সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বাণিজ্য সচিব বলেন, এখন বর্ষাকাল। তাই দেশীয় মজুদকৃত পেঁয়াজের সরবরাহ বাজারে বেড়েছে। এটি একটি পচনশীল পণ্য। তাই অনেকেই মজুদকৃত পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসছেন। এটাই স্বস্তির খবর। জাত ও মানভেদে দেশে এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকায়। কোথাও এর চেয়ে আরও ৫ টাকা বেশি ধরে দাম নেয়া হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দাম আরও বাড়বে। ইতোপূর্বে ১০০-১৫০ টাকায় পেঁয়াজ কেনার অভিজ্ঞতা ভোক্তাদের রয়েছে। আমদানি ও সরবরাহ না বাড়লে আগামী কোরবানি ঈদে এই পণ্যটির দাম কোথায় ঠেকে সেই প্রশ্ন তাদেরও। কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির জনকণ্ঠকে বলেন, শ্যামপুরে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা পর্যায়েও বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে গত রোজার সময়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে গত রমজানে কোন পণ্যেরই দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়নি অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ কারণে পেঁয়াজের বাজারও এবার কঠোরভাবে মনিটরিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমদানিকৃত ভারতীয় প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকায়। এক সপ্তাহ পূর্বে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫-৪৮ এবং এক মাস পূর্বে বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪৫ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসে গড়ে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া দেশীটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬৫, এক সপ্তাহ পূর্বে বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ এবং একমাস পূর্বে বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকায়। এক্ষেত্রে এক মাসের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, পেঁয়াজের উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে সারাবছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এ বছর এখন পর্যন্ত মজুদ রয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। এছাড়া আরও ৪ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রতিমাসে চাহিদা রয়েছে ২ লাখ টনের। রমজান ও কোরবানি ঈদের সময় বাড়তি আরও ১ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা সৃষ্টি হয়। এ কারণে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সাপ্লাই চেইনে ঘাটতি তৈরি হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
×