ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে অতিরিক্ত খরচে চাষীরা

আকাশে বৃষ্টি নেই ॥ পাট জাগে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২ আগস্ট ২০১৫

আকাশে বৃষ্টি নেই ॥ পাট জাগে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১ আগস্ট ॥ চলতি বর্ষা ঋতুতে ঠাকুরগাঁওয়ের আকাশে বৃষ্টি নেই। ফলে জেলায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছে না চাষীরা। পাট কেটে রোপা আমন লাগাবে সে সুযোগ পাচ্ছে না তারা। ফলে চলতি মওসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এদিকে বাজারে দাম না থাকায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার পাট চাষীরা। শ্রাবণ মাসের অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে। তারপরও আকাশে পানি নেই। যদিও মাঝে-মধ্যে ছিটে ফোটা পানি হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এলাকার নদী-নালা, খাল-বিল, গর্ত বা পুকুরে কোন জায়গায় এতটুকু পানি নেই। যে কারণে জেলার কৃষকরা পাট কেটে জাগ দিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পাট কেটে গর্ত বা নালার মধ্যে শ্যালোইঞ্জিনের সাহায্যে পানি জমিয়ে পাট জাগ দিচ্ছে। এতে চাষীরা অতিরিক্ত খরচের মধ্যে পড়ছে। পানি না থাকার কারণে আমন ধান লাগানোর কাজেও চরম বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে পাটের দাম মণ প্রতি মাত্র সাড়ে ৮শ’ থেকে ৮শ’ ৫০ টাকা হওয়ায় পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে তারা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পাট চাষী জয়নাল আবেদিন জানান, পাট কেটে কোথাও পানি না পেয়ে একটি গর্ত ভাড়ার মাধ্যমে পাট জাগ দিয়েছি। এলাকার অনেক চাষী জানিয়েছে, বর্ষাকালে জেলায় বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল, নদী-নালা গর্ত কিংবা পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় তারা পাট কেটে পচাতে পারছে না। যদি কোন গর্তে পাট পচানোর জন্য ফেলছে তাতেও প্রতি ২-৩ দিন পরপর ওই গর্তে শ্যালোইঞ্জিনের মাধ্যমে পানি দিতে হচ্ছে। এতে তার অতিরিক্ত ৮শ’ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান যে পাটের বাজার তাতে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছে। সদর উপজেলার আক্চা ইউনিয়নের বন্দপাড়া গ্রামের কৃষক শ্রী জয়ন্ত লাল জানান, প্রতিবিঘা পাটের আবাদে চাষ-মই খরচ, বীজ, সার-বিষ কেনা, সেচ দেয়া, নিড়ানী, পাট কাটা, বাধা, বহন, গর্তভাড়া, পচানো, আঁশ ছাড়ানো, শুকানো ইত্যাদি খরচ বাবদ প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপন্ন হয় প্রায় ১২ মণ। যার বর্তমান বাজার দাম সাড়ে ৮শ’ টাকা মণ দরে ১০ হাজার টাকা। হিসাব-নিকাশ করে লাভ থাকে পাট খড়ি। তারপরও খড়ি বহনের খরচ আছে। যে কারণে পাট চাষ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলছে চাষীরা। গড়েয়া ইউনিয়নের তেওয়ারিগাঁও গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দীন জানান, এক হাজার ৫শ’ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হলেই চাষীদের সামান্য লাভ থাকত। এ বছর যে সব চাষীরা নিজের লাঙল-গরু দিয়ে চাষ করে এবং নিজেরা শরীরে খেটে আবাদ শেষ করেছে তারাই কেবল সামান্য লাভের মুখ দেখতে পেয়েছে। রফিকুল ইসলাম নামে আরেক পাট চাষী জানান, এবার ৩ বিঘা জমিতে পাট আছে। ওই পাট কেটে তার ধান লাগানোর কথা। কিন্তু পানির অভাবে পাটও কাটা হচ্ছে না। ধানও লাগানো যাচ্ছে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী খান জানান, পানির অভাবে বর্তমানে পাট জাগ দেয়া বড় সমস্যা হচ্ছে। শ্রাবণ মাসের অর্ধেক চলে গেছে এরপরও বৃষ্টির কোন খোঁজখবর নেই। আর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে খাল বিলে পানি নেই। কৃষক পাট কাটার ঝুঁকি নিচ্ছে না। তারপরও জেলায় অর্ধেকের বেশি পাট কাটা হয়ে গেছে। কৃষক সেচ দিয়ে ধান রোপণ করছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে দ্রুত পাট কাটা শেষ হবে এবং কৃষক পূর্ণদমে রোপা আমন চাষ করবে।
×