ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠে নেমেছিল দুই দলই, তবে...

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২ আগস্ট ২০১৫

মাঠে নেমেছিল দুই দলই, তবে...

মিথুন আশরাফ ॥ দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনটিও বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে গেল। যথারীতি একটি বলও মাঠে গড়াল না। তবে একটু ভিন্নতা দেখা গেল। দ্বিতীয় দিন হোটেল থেকে মাঠেই আসেননি দুই দলের ক্রিকেটাররা। তৃতীয় দিন মাঠে আসলেন এবং অনুশীলনও করলেন। আর তাই খেলতে না পারার হতাশা থাকল, তবে এর মধ্যে মাঠে নামার আনন্দও মিলল! প্রথমদিনে ৮৮.১ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন শেষে স্কোর সেখানেই আটকে থাকল। বৃষ্টিতে টানা দুইদিন খেলাই হলো না। দ্বিতীয় দিন খেলা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই দেখা যায়নি। তৃতীয় দিন সেই সম্ভাবনা একটু সময়ের জন্য হলেও দেখা দিয়েছিল। বেলা সোয়া ১১টায় বৃষ্টি থামে। এরপর দুপুর দেড়টায় মাঠ পর্যবেক্ষণ করা হয়। দুই দলের অধিনায়ককে জানিয়ে দেয়া হয়, খেলা দুপুর সোয়া ২টায় শুরু হচ্ছে। মনে সবার আশা জাগলেও, শঙ্কা ছিলই। বৃষ্টি যে একটু সময়ের জন্য থামে, আবার আসে। শেষপর্যন্ত বৃষ্টি আবার এলো। খেলা হতে দিল না। তৃতীয় দিনের পরিণতিও দ্বিতীয় দিনের মতোই হলো। বৃষ্টি সকাল থেকেই পড়তে থাকে। এদিনও বোঝা যায় খেলা হবে না। এরপরও যখন বৃষ্টি থামে, বেলা সাড়ে ১২টায় টিম হোটেল থেকে মাঠে আসেন মুশফিকুর রহীম ও হাশিম আমলাবাহিনী। এসে শুরুতে দুই দলই ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে নেমে আসেন। আমলারা গ্রুপ মিটিং করেন। আরেকদিকে মুশফিকরা ফুটবল নিয়ে মেতে থাকেন। এমন সময়ে ম্যাচ রেফারি দুপুর দেড়টায় মাঠে প্রবেশ করে উইকেট দেখেন, মাঠের অবস্থা দেখেন। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণের পর প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক হাশিম আমলাকে ডেকে খেলা শুরু হওয়ার কথা বলেন। এরপর বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিককেও একই কথা জানান। দুই দলই তখন ড্রেসিংরুমে চলে যান। প্রস্তুতি নিতে থাকেন মাঠে নামার। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ২০ মিনিট পরই আবার বৃষ্টি শুরু হয়। তা আর থামেই না। ক্রিকেটারদেরও ব্যাট-বল নিয়ে আর মাঠে নামা হয়নি। তবে মাঠে এসে যে খানিক অনুশীলন করেছেন, এটিই আনন্দ হয়ে থাকতে পারে। না পাওয়ার দিনে, হোটেলে বন্দী হয়ে থাকার চেয়ে মাঠে এসে অনুশীলন করার সুখ তো খানিক মিলল। তাতে আনন্দও জড়িয়ে থাকল। ম্যাচের তিন দিন শেষ হয়ে গেল অথচ এক ইনিংস এখনও শেষ হয়নি। তাই অলৌকিক কিছু না ঘটলে ম্যাচ যে নিশ্চিত ড্র’র দিকেই এগিয়ে গেছে, তা বলাই যায়। তাতে বাংলাদেশেরই লাভ হবে। টেস্ট সিরিজে হারের সম্ভাবনা থাকলেও তা হচ্ছে না। টেস্ট সিরিজ হার হলো না। টি২০ সিরিজ শুরুতেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজে বাজিমাত বাংলাদেশই করবে। যখন সকালেই বোঝা গেল, তৃতীয় দিনটিও বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হবে; তখন গল্প-গুজব করেই সবাই সময় কাটাল। সেই গল্পে উঠে এলো, তিস্তা চুক্তি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কথাবার্তা। যেখানে ইনুর বলা ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা দু’দিন আগে ভারতকে গো-হারা হারিয়েছে। খুব অসন্তুষ্ট হয়েছে ভারত। মোদি সাহেব বলেছেন যে, আমরা তিস্তার পানি দিয়ে দেবো, আপনারা আপনাদের বোলারকে (অঙ্গভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে তিনি মুস্তাফিজের কথা বলছেন) দিয়ে দেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, বোলারকে দেয়া যাবে না, তিস্তার পানির জন্য আমরা দেখব’ এ কথা নিয়েই আলোচনা হয়। শেষে যখন তৃতীয় দিনটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়, তখন সবাই হতাশই হন। টানা দুই দিন খেলাই হলো না। কী আর করার। তৃতীয় দিন শেষ হতেই এ সিরিজে বাংলাদেশ কী পেল, কী হারাল; তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। তাতে হিসেব মিলিয়ে দেখা গেল, এ পূর্ণাঙ্গ সিরিজে বাংলাদেশই সফল। বিশেষ করে ওয়ানডেতে যে বাংলাদেশ কী দুর্দান্ত দল হয়ে উঠেছে, তার প্রমাণ আবারও মিলল। টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ জিতবে না তা ধরেই নেয়া হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের এক নম্বর দল। এ দলের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে যে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ, সেটি এখনও প্রশংসা কুড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম টেস্টের সেই ধারাবাহিকতা অবশ্য ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ম্যাচ হলে যে দক্ষিণ আফ্রিকাও বিপাকে পড়ত না, তা কে বলতে পারত। যদি এমনটি হতো, তখন বৃষ্টিতে শেষপর্যন্ত খেলা না হলে বাংলাদেশ অধিনায়ক হয়ত আবারও বলতে পারতেন, ‘জয়ের সম্ভাবনা আমাদেরও থাকতে পারত।’ যেটি চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে বলেছিলেন। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টে যাও দুই দলের দুই ইনিংস খেলা হয়েছে। ঢাকা টেস্টে তো একটি ইনিংসই এখন পর্যন্ত শেষ হলো না। তাও আবার খেলা হয়েছে, তিন দিনের মধ্যে মাত্র একদিন! সেই প্রথমদিন সারাদিন মাঠে থাকা গেছে। দুই দলই আনন্দ পেয়েছে। ক্রিকেটাররা যে খেলতে পারলেই সবার আগে আনন্দ উপভোগ করেন। দ্বিতীয় দিন এমনই বৃষ্টি পড়েছে, খেলার কোন সম্ভাবনা না থাকায় মাঠেই আসতে হয়নি। হতাশই হতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। তৃতীয় দিন খেলা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখে মাঠে এলেন। অনুশীলনও করলেন। এদিনও হতাশা জড়িয়েই থাকল। তবে মাঠে এসে যে অনুশীলন করতে পেরেছেন, তাতে আনন্দও কি মিলল না!
×