ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বৃষ্টিভেজা শ্রাবণ সন্ধ্যায় ছায়ানটে বর্ষাবন্দনা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২ আগস্ট ২০১৫

বৃষ্টিভেজা শ্রাবণ সন্ধ্যায় ছায়ানটে বর্ষাবন্দনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে বৃষ্টির দরুণ দাপট। শনিবারও হয়নি তার ব্যতিক্রম। সজল মেঘের ওড়াউড়িতে সকাল থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় সুয্যিমামা। সূর্যের প্রখর কিরণের পরিবর্তে মেঘলা আকাশ ছাপিয়ে ঝরেছে জলের ধারা। আর দিন পেরিয়ে শ্রাবণের বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় রূপময় ঋতু বর্ষা বন্দনায় মুখরিত হলো ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। বর্ষারানীকে নিবেদন করে গাওয়া গান। পরিবেশিত হলো নুপুরের নিক্কন ধ্বনি ছড়ানো ছড়ানো নৃত্য। উচ্চারিত হলো দোলায়িত ছন্দে কবিতার আবৃত্তি। আর এমন বৈচিত্র্যময় পরিবেশনায় বাদল দিনে ছায়ানটের বর্ষার অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে রংময়। আর বর্ষাকে রাঙিয়ে তোলা মনমাতানো আয়োজনটি শ্রোতা-দর্শকের কাছে হয়ে ওঠে অপার আনন্দের উৎস। বর্ষাবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা হয় রাগসঙ্গীতের আশ্রয়ে। অসিত দের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় খেয়াল। সেই সুরের রেশ ধরেই স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। এরপর ছিল শুধুই সুরের অনুরণন, নাচের নান্দনিকতা আর কবিতার শিল্পিত গব্দগাঁথা। নবণীতা চক্রবর্তীর গাওয়া নজরুসঙ্গীত ‘মেঘের ডমরু ঘন বাজে’ গানের সুরে ফুটে ওঠে বর্ষার অপার সৌন্দর্য। ঝুমা খন্দকার যখন অতুল প্রসাদের ‘বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখি পাতে’ গানটি ধরলেন তখন যেন ব্যাকুল হলো শ্রোতার হৃদয়। গানের সুরে বর্ষা পেল বিরহী রূপ। রবি ঠাকুরের ‘রিমঝিম ঘন ঘন ঘনরে’ গানের সুরে সমবেত নৃত্য প্রশান্তি পরশ ছড়ায় দর্শকের নয়নে। সৈকত মুখাজীর কণ্ঠে গীত গানটির শিরোনাম ছিল ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’। বর্ষার রাশি রাশি বৃষ্টিকে স্বাগত জানিয়ে লতিফুন জুলিও গেয়ে শোনান ‘ঝর ঝর ঝরে শাওন ধারা’। সম্মেলক কণ্ঠে নজরুলের ‘অম্বরে মেঘ মৃদঙ্গ বাজে’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় একক নৃত্য। সুরেলা শব্দধ্বনির মাঝে শিল্পিত উচ্চারণে কবিতা আবৃত্তি করেন বাকশিল্পী কৃষ্টি হেফাজ ও রফিকুল ইসলাম। সম্মেলক নৃত্যগীতের সঙ্গে পরিবেশিত হয় ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানটি। এছাড়া একক কণ্ঠে গাওয়া হয় বেশ কিছু রবীন্দ্র ও নজরুলসঙ্গীত। সত্যম কুমার দেবনাথ গেয়ে শোনান ‘আজি শ্রাবণ ঘন গহন মোহে’ ও ‘নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়ায়’, এটিএম জাহাঙ্গীরের কণ্ঠে গীত হয় ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’, ইলোরা আহমেদ শুক্লা পরিবেশন করেন ‘বন্ধু রহো রহো’, তানিয়া মান্নান গেয়ে শোনান ‘শ্যামল ছায়া নাইবা গেলে’। এছাড়া একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাহমুদুল হাসান ও এরফান হাসান। ক্বারী আমির উদ্দীন রচিত ‘ওরে ভরা গাঙের নদীর স্রোতে’ গানটি গাওয়া হওয়া হয় সমবেত কণ্ঠে। একইভাবেই অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায় এ কে এক আব্দুল আজিজ রচিত ‘শাওন মাইসা পানির ঢল’ গানটি। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। বর্ষাকে নিবেদিত অনুষ্ঠানে যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন তবলায় এনামুল হক ওমর ও স্বরূপ হোসেন এবং এস্রাজে অসিত বিশ^াস ও মন্দিরায় প্রদীপ কুমার রায়। রাঢ়াঙ উৎসবে মঞ্চস্থ স্বপ্নপথিক ॥ আদিবাসী সাঁওতাল জীবনের গল্পনির্ভর আরণ্যক নাট্যদলের দর্শকনন্দিত নাটক রাঢ়াঙ। শুক্রবার প্রযোজনাটির ১৫০তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। আর এ উপলক্ষে নাট্যদলটির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয় তিন দিনের উৎসব। শনিবার ছিল উৎসবের শেষ দিন। আর সমাপনী সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় দলটির সাম্প্রতিক প্রযোজনা স্বপ্নপথিক। এছাড়াও সকালে নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘বহুত্ববাদী সমাজে আদিবাসী সংস্কৃতির বিকাশ’ শীর্ষক সেমিনার। নাট্য প্রদর্শনী শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রদান করা হয় আরণ্যক দীপু স্মৃতি পদক। এছাড়া অনুষ্ঠিত হয় দলের নাট্যকর্মীদের পরিবেশিত আদিবাসী সঙ্গীত ও নৃত্য। দেশের শিল্প খাতের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি নিয়ে নির্মিত নাটক স্বপ্নপথিক। হারুন রশীদ রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ। শ্রমিকের শ্রম-ঘাম ও নিষ্ঠায় তৈরি পোশাকশিল্পের এগিয়ে চলার দৃশ্যের মাধ্যমে কাহিনীর সূচনা। এরপর আসে সেদিনের সেই মর্মান্তিক ঘটনার ছবি। ফাটল ধরা রানা প্লাজায় ভবন ও কারখানা মালিক-কর্মচারীদের হুমকিতে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হন শ্রমিকরা। কাজ শুরুর স্বল্প সময়ের মধ্যেই ধসে পড়ে ভবনটি। মুহূর্তেই নিভে যায় শত শত প্রাণ। এরপর উদ্ধারকর্মের মধ্য দিয়ে নাটকে দেখানো হয় মানবতার জয়জয়কার ও মানুষের অদম্য চেতনার নমুনা। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, মোমেনা চৌধুরী, তমালিকা কর্মকার, দিলু মজুমদার, রুহুল আমিন, আরিফ হোসেন আপেল, রুবলী চৌধুরী, হাসিম মাসুদ, সাজ্জাদ সাজু, সাঈদ সুমন, চিত্র ছবি, কামরুল হাসান, মনির জামান প্রমুখ।
×