ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরিয়ান শিল্পী উং সানের গানে মুগ্ধ ঢাকার দর্শক

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২ আগস্ট ২০১৫

কোরিয়ান শিল্পী উং সানের গানে মুগ্ধ ঢাকার দর্শক

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই’- প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের এ কালজয়ী গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কোরিয়ান শিল্পী উং সান বাংলা মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধের এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন ঢাকার দর্শক-শ্রোতাদের। ইংরেজী গানের পাশাপাশি দর্শকদের অনেকটা অবাক করে দিয়ে তিনি গানটি গেয়ে ওঠেন। বারবার করতালিতে দর্শক স্বাগত জানাতে থাকে তাঁকে। দর্শক হৃদয়ে এক ভিন্ন অনুরণন তোলেন গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। একজন বিদেশী হয়েও উচ্চারণ ও গায়কীতে বাংলা গানকে যেভাবে কণ্ঠে তুলে নিলেন তা শুধু যেন একজন বাঙালীর ক্ষেত্রেই সম্ভব। বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ না থাকলে বিদেশী কোন শিল্পীর পক্ষেই এত শৈল্পিকভাবে তা পরিবেশন করা সম্ভব হতো না। অনন্য এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তিনি যেন বাংলাদেশী সংস্কৃতিরই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। কোরিয়ান এ জ্যাজ শিল্পীর ঢিমেতালে বাংলা গান পরিবেশনায় মিলনায়তন ভর্তি দর্শক-শ্রোতা শুধু উচ্ছ্বসিতই হননি, রীতিমতো অবাক বনে গেছেন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে শুক্রবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় কোরিয়ান দূতাবাস আয়োজিত ‘চার্ম অব কোরিয়া-৭’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দৃশ্যটা এমনই ছিল। কোরিয়া ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪২তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কোরিয়ান রফতানি প্রস্তুতকরণ এলাকা, ইন্ট্রাকো, পিএইচপি ও ইয়ংগন। নাট্যশালায় ঢোকার পথে দেখা যায় সামনের দুই পাশে বিশাল ব্যানার। শিল্পী উং সানের ছবি সংবলিত এ ব্যানারে লেখা চার্ম অব কোরিয়া ৭ উং সান স্টোরি। ভিতরে ঢুকে চোখে পড়ে উৎসবের সাজে প্রস্তুত মঞ্চ। সাজানো বাদ্যযন্ত্র, ওপরে জ্বলছে রঙিন বাতি। ততক্ষণে মিলনায়তন পুরোপুরি ভর্তি দর্শক। ঘড়িতে ঠিক ৭টা বাজতেই মঞ্চে এলেন উপস্থাপিকা। তাঁর আহ্বানে মঞ্চে উঠে এলেন বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাঞ্জাবি পরিহিত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি-ইয়ান-ইয়ং। উৎসুক দর্শকদের আসসালামু আলাইকুম বলে সম্ভাষণ জানালেন। বললেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের যাত্রা এবার ৪২ শেষ করে ৪৩এ পা রাখছে। এ উপলক্ষেই এই সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে যে শিল্পী গাইবেন, তাঁর সম্পর্কেও দুটি কথা বলে গেলেন। তিনি বলেন, উং সান দক্ষিণ কোরিয়া তথা এশিয়ার জনপ্রিয় জ্যাজ শিল্পীদের একজন। তিনি নিজের দেশে কোরিয়ান ফোক ও ধ্রুপদি গান করেন। গান গাওয়া, গান লেখা ছাড়াও গানের ভিডিওতে অভিনয়ও করেন তিনি। পেয়েছেন তাঁর দেশের সেরা সেরা পুরস্কার ও সম্মাননা। এর পরে মঞ্চে আসেন প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি সংক্ষিপ্ত আলোচনায় জানালেন, কোরিয়ান সংস্কৃতি চর্চায় তিনি মুগ্ধ হন সবসময়ই। সংস্কৃতির মাধ্যমে জাতিতে জাতিতে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয়। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং খুব ভাল বন্ধু। দুই দেশের মধ্যকার এ সাংস্কৃতিক বিনিময় অব্যাহত থাকবে এবং এ বন্ধুত্বও অটুট থাকবে। দর্শকের প্রতীক্ষার অবসান হলো। মঞ্চে এলেন দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় সুদর্শনা তরুণী শিল্পী উং সান। বেগুনী আর নীল রঙের মিশেলে গর্জিয়াস কোরিয়ান পোশাকে মঞ্চে দ্যূতি ছড়াতে লাগলেন তিনি। কোন কথা না বলেই তিনি শুরু করলেন ‘নাথিং কমপেয়ার টু ইউ’ গানটি। দর্শকদের সাড়াও পেলেন। কেননা, ইংরেজী গানের সঙ্গে বেজে চলেছে জ্যাজ মিউজিক, যা পৃথিবীর প্রায় সব দর্শকের চেনা ও পছন্দের। ইংরেজী গানের পাশাপাশি দর্শকদের হতবাক করে দিয়ে সান প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি গেয়ে ওঠেন। তুমুল করতালিতে দর্শকরা স্বাগত জানান তাঁকে। একটি কোরীয় ভাষার গানের পাশাপাশি সান ও তাঁর ব্যান্ড দল ইয়ো সয় মারিয়া, মিস্টার ব্লুস, হেল্প মি মেক ইট থ্রো দ্য নাইট, মার্সি, সামারটাইম, ইয়েস্টারডে, আই উড র‌্যাদার গো ব্লাইন্ড, হে বারট্রেন্ডার, ভোলারে গানগুলো গেয়ে শোনান। গানের ফাঁকে মঞ্চ থেকে নেমে দর্শকদের কাছাকাছি এসে নেচে নেচে গান শোনান সান। এ ছাড়া ‘আসসালামুয়ালাইকুম’ বলে সম্ভাষণ জানিয়ে চমকেও দেন সবাইকে। গানের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর দেশ। আর এদেশের মানুষ অনেক বেশি সংস্কৃতিপ্রেমী। এমন পরিবেশে সঙ্গীত পরিবেশনের সুযোগ করে দেয়ায় আমি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁর স্বপ্ন এশিয়ার বাইরের বিভিন্ন দেশে গান করা। গান ছাড়াও স্যাক্সোফোন বাজিয়ে শোনান তাঁর দলের জাংচিক লি। সঙ্গীতানুষ্ঠানের পরিবেশটা এমন হয় যে কোন এক সময়ে শিল্পী সান এই আমার শেষ পরিবেশনা বলে মঞ্চ ছাড়েন। দর্শক কিন্তু তাঁকে ছাড়তে রাজি নয়। সবাই আরও গান পরিবেশনের আহ্বান জানায়। বাধ্য হয়ে আবার মঞ্চে ফিরে আরও একাধিক গান পরিবেশন করেন।
×