ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা টেস্টে কোমেনের ধাক্কা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ আগস্ট ২০১৫

ঢাকা টেস্টে কোমেনের ধাক্কা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাব কমলেও ঢাকা টেস্টে সেই ধাক্কা পড়ল। তাতে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে একটি বলও মাঠে গড়াতে পারল না। বৃষ্টি নিয়েই ভয় ছিল; কখন যে এসে পড়ে। ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে সেই বৃষ্টি ভয় ধরাতে পারল না। তবে দ্বিতীয় দিনে তা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়ল। প্রথম দিনে যে ৮ উইকেটে ২৪৬ রান করেছিল বাংলাদেশ, সেখানেই খেলাও আটকে থাকল। আজ ম্যাচের তৃতীয় দিনে খেলা হবে কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এমনিতেই বৃষ্টির মৌসুম। চট্টগ্রাম টেস্টে সেই বৃষ্টির প্রভাব দেখা গেছে। এমনই প্রভাব ছিল, প্রতিদিন ৯০ ওভার করে ৫ দিনে ৪৫০ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল। অথচ হয়েছে মাত্র ২২১ ওভার। চট্টগ্রাম টেস্টেও প্রথম দিন বৃষ্টি তেমন বাধা তৈরি করতে পারেনি। দ্বিতীয় দিন থেকেই শুরু হয়েছিল টালবাহানা। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনেতো বৃষ্টির জন্য একটি বলও মাঠে গড়াল না! তাই প্রথম টেস্ট ড্র হলো। ঢাকাতেও যে বৃষ্টির প্রভাব দেখা যাবে। খেলা ঠিকমতো হবে না, তা ধারণা আগে থেকেই করা গেছে। এর সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ এর প্রভাব ছিলই। শেষপর্যন্ত কোমেন দুর্বল হয়ে গিয়ে যে নি¤œচাপ তৈরি হয় তার ধাক্কা ঢাকাতেও লাগে। সারাদেশেই বৃষ্টি হয়। সেই ধাক্কায় মিরপুরে দ্বিতীয় দিনের খেলাও হয়নি। মুস্তাফিজুর রহমান ও জুবায়ের হোসেনকে নিয়ে আগের দিন ১৩ রানে ব্যাট করতে থাকা নাসির হোসেন কোন ‘মিরাকল’ ঘটাতে পারবেন? চমক দেখাতে পারবেন? দলকে অন্তত ৩০০ রানে নিয়ে যেতে পারবেন? এমনটি যখন প্রথম দিন শেষে ভাবা হয়েছে, দ্বিতীয় দিন রোদের দেখাই মিলল না! সেই যে ভোর থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে থাকল, সকাল ৮টায় গিয়ে তা মুষলধারে হানা দিল। তাতে করে ১২টার পর দিনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে বাধ্যই হলেন ম্যাচ রেফারি ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান ক্রিস ব্রড। তাতে দুই দিনে যে ১৮০ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল, তা হলো না। প্রথম দিনে যে ৮৮.১ ওভার খেলা হয়েছে, দ্বিতীয় দিন শেষেও স্কোরবোর্ডে তাই লেখা থাকল। সবারই ভাবনা ছিল বৃষ্টি নিয়ে। মৌসুমটাই যে বৃষ্টি আসার। কিন্তু সেই মৌসুমের প্রভাব প্রথম দিন দেখা গেল না। দ্বিতীয় দিন ঘূর্ণিঝড় কোমেনের ধাক্কা মিলল। দ্বিতীয় দিনের খেলা সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা। তার আগে থেকেই যেভাবে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে, তাতে বোঝাই গেছে দিনটিতে আর খেলা হবে না। এরপরও আশা ছিল, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অনেক ভাল। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে মাঠে বল গড়াতেও পারে। কিন্তু যথাসময়ে খেলা শুরু হতে পারল না। ১০টা ২৫ মিনিটে গিয়ে বৃষ্টি কমল। তখন মনে হলোÑ এবার বুঝি খেলা হবে। কিন্তু ৫ মিনিট বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও এরপর যে আবার শুরু হলো আর থামলই না। ক্রিকেটাররাও হোটেল থেকে মাঠে আসার কোন সিগন্যালই পেলেন না। দুপুর ১২টায় গিয়ে আর বৃষ্টি থামার কোন আলামতই মিলল না। শেষে গিয়ে ১২টা ১০ মিনিটে দিনটি পরিত্যক্ত হওয়ার ঘোষণাই এলো। দ্বিতীয় দিন যে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শুরু হতো, তা সবাই বোঝে। বাংলাদেশের বোলিংয়ের জন্যই সবার অপেক্ষা ছিল। মুমিনুল হক যে আগের দিন বলেছিলেন, ‘৩০০ রান অনেক। যদি বোলাররা ভাল বল করতে পারেন।’ সেই বোলিং দেখার অপেক্ষা ছিল। কিন্তু তার আর দেখা মিলল না। বৃষ্টি যে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হলো তা শুক্রবারও থামল না। সেই সঙ্গে আউটফিল্ড যে প্রায় পুরোটাই কাভার দিয়ে ঢাকা ছিল, সেভাবেই থাকল। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় মাঠে পানি জমতে পারেনি। বৃষ্টি থামলে দ্রুত খেলা শুরু করার যে সম্ভাবনা ছিল, তাও ভেস্তে গেল। এখন শনিবার তৃতীয় দিনের খেলা আধঘণ্টা এগিয়ে এনে সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, তবে যদি বৃষ্টি আবার কোন বাধা তৈরি না করে। বৃষ্টির জন্য খেলা না হওয়ায় সবাই গল্প-গুজবেই মগ্ন থাকল। এর সঙ্গে আগের দিনে পেসার ডেল স্টেইন যে ৪০০ উইকেট শিকারের মাইলফলকে পাঁ রেখেছেন, তা নিয়েও আলোচনা চলল। তাতে তামিমকে আউট করে ৪০০ উইকেট শিকার করলেন স্টেইন। এর সঙ্গে ৪০০ উইকেট শিকারী বোলারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরলিধরন (৮০০ উইকেট), শেন ওয়ার্ন (৭০৮ উইকেট), ভারতের অনিল কুম্বলে (৬১৯ উইকেট), অস্ট্রেলিয়ার ম্যাক গ্রা (৫৬৩ উইকেট), ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্টনি ওয়ালস (৫১৯ উইকেট), ভারতের কপিল দেব (৪৩৪ উইকেট), নিউজিল্যান্ডের স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (৪৩১), দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক (৪২১), ভারতের হরভজন সিং (৪১৬ উইকেট), পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম (৪১৪ উইকেট), ইংল্যান্ডের জেমস এ্যান্ডারসন (৪১৩ উইকেট), ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্টলি এমব্রোস (৪০৫ উইকেট) কার উইকেট শিকার করে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন, তা নিয়েই আলোচনা চলেছে। তাতে যতদূর জানা গেল, ওলঙ্গাকে আউট করে মুরলিধরন, স্টেওয়ার্টকে আউট করে ওয়ার্ন, ক্যাটিচকে আউট করে কুম্বলে, ওয়াকারকে আউট করে ম্যাক গ্রা, হিলিকে আউট করে ওয়ালস, টেইলরকে আউট করে কপিল, মানজেরেকারকে আউট করে হ্যাডলি, দ্রাবিড়কে আউট করে পোলক, বোওকে আউট করে হরভজন, আরনোল্ডকে আউট করে ওয়াসিম, গাপটিলকে আউট করে এ্যান্ডারসন, আথারটনকে আউট করে এমব্রোস ৪০০ উইকেট শিকার করেন। সর্বশেষ তামিমকে আউট করে স্টেইন এ মাইলফলক স্পর্শ করেন। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন কোমেনের ধাক্কায় পরিত্যক্ত হওয়ায় এ নিয়েই শুধু আলোচনা চলল।
×