ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী দিনের বাংলাদেশ ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১ আগস্ট ২০১৫

আগামী দিনের বাংলাদেশ ভাবনা

রমজান শেষে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দ মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে উপভোগ করতে যে মানুষগুলো গ্রামে যাওয়ার এবং ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন, নারী-শিশুসহ, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপারে, নাটোরে, গাজীপুরে কিংবা অন্য কোন সড়ক-মহাসড়কে, কিংবা প্রবল বৃষ্টির রাতে অন্যবারের মতো এবারও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রাণ হারালেন যে মানুষগুলো, আমি তাদের সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি, শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। প্রতিবাদ জানাচ্ছি যারা আনাড়ি ড্রাইভারের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং তুলে দেন সেইসব মালিকের প্রতি। দিনের মতো সত্য শিশু রাজন হত্যার এতদিন হয়ে গেল, পুলিশ কেবল আসামি ধরছেন আর রিমা-ে নিচ্ছেন। রাজধানীতে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে যে স্কুল ছাত্রীটি গণধর্ষণের শিকার হলো, কিংবা যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় পাষ- স্বামী ও তার স্বজনরা যে সুখী আখতারের চোখ উপড়ে নিল, কিংবা সরকারী রাস্তায় দেয়া খেজুর কাঁটার বেড়া সরিয়ে ফেলায় সাতক্ষীরায় যে দুটি শিশুকে সিলেটের রাজনের মতো গাছে বেঁধে পেটানো হলো, ওই বর্বর পশুদের ধিক্কার জানাব না কি বলব জানি না। এই হলো বাংলাদেশের এক রূপ। আরেক রূপও আছে। ঝড়ঝঞ্ঝা, মিলিটারি ব্যারিকেড, পেট্রোলবোমার ভয়াবহতা, জঙ্গীবাদের অস্থিরতা সব কিছু মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। এখন আর কেউ পেছনে তাকাচ্ছে না। এই তো পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দ উপভোগ করল। হাজার হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা চলল পুরো রমজান ভরে। তারপর গ্রামে কিংবা অন্য কোন শহরে কিংবা অন্য কোনখানে বসবাসকারী মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে আবার নিজ নিজ কর্মস্থলে নিজ নিজ শহরে ফিরতে শুরু করেছে। কটা দিন ঢাকা বেশ ফাঁকা ফাঁকা ছিল, কোথাও যানজট ছিল না, ছিল না রাজপথে মানুষের গাদাগাদি চলাচলের যন্ত্রণা। এ লেখা যখন ছাপা হবে আবার ঢাকা কর্মমুখর হয়ে উঠবে, আবার মানুষ যানজটে নাকাল হবে। তবুও বলব ঈদ-পার্বণে চলাচলে যে ভোগান্তি হয় তাও আনন্দের। এবার সে ভোগান্তিও হয়েছে অনেক কম। সময়মতো বাহনগুলো ছেড়ে গেছে, আবার সময়মতোই ফিরে আসতে শুরু করেছে। চরম সরকারবিরোধী গলাবাজ কিংবা খুঁতসন্ধানী স্থির বা চলমান মিডিয়াও বলতে পারেনি ট্রেন-বাসের টিকেট কালোবাজারি হয়েছে, অব্যবস্থার কোন সংবাদও। বেচারারা বড়ই কষ্ট পেয়েছে এবার। তবে বাস-লঞ্চের মালিকরা রসিক বটে, ঈদ বোনাসের কথা বলে যাত্রীদের কাছ থেকে উপরি আদায় করেছে। বেদনার ব্যাপার হলো প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল ঈদ আনন্দ মাটি করে চলেছে। বস্তুত এই আমাদের দেশ। এই আমাদের অহঙ্কার। আজ আমি মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের এক গর্বিত নাগরিক। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো গর্বিত জাতির গর্বিত সন্তান। এখন কোন রসের কুলের আত্মীয় আমাকে ‘মিসকিন’ বলতে পারবে না, কোন শ্বশুরের বেটা আমাকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলতে পারবে না, বলতে পারবে না বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কাতর আমার দেশ। সেসব মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে চলেছি। এখন কোন এয়ারপোর্টে আমার সবুজ পাসপোর্ট দেখে কোন সাদা চামড়ার পরিবিবি বাঁকা চোখে তাকাবে না, বরং অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে মনে মনে বলবে - যবু সধহ, যড়ি ফরফ ুড়ঁ ফড় ঃযধঃ? এবং তাড়াতাড়ি ইমিগ্রেশন ফরমালিটিজ শেষ করতে পারলেই খুশি হবে। একজন মাত্র মানুষ আমাকে এই গর্বের জায়গাটায় তুলে এনেছেন। তিনি আর কেউ নন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, গর্বিত পিতার গর্বিত সন্তান। পিতা আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মানচিত্র, আমাদের পতাকা এনে দিয়েছেন, আর তাঁর মেয়ে বন্যা, অভাব-অনটনে জর্জরিত, মিলিটারি আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত, জঙ্গীবাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ, ঝড়ঝঞ্ঝাকবলিত বাংলাদেশকে সাহস, মেধা এবং দূরদর্শিতা দিয়ে সব প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করে নি¤œ আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। একজন মাত্র মানুষ, যিনি স্বপ্ন দেখতে জানেন, স্বপ্ন দেখাতে জানেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নের যোগ্যতা ও ক্ষমতা রাখেন, তিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন মাত্র মানুষ, যিনি পিতার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে উচ্চারণ করতে পারেন- ‘ভিক্ষুকের জাতির কোন ইজ্জত নেই, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ একজন মাত্র মানুষ, যিনি সেøাগান দেন- ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।’ তাইতো সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল এবং টিউলিপ সিদ্দিক একেকটি স্ফূলিঙ্গের নাম। শাকিব-মোস্তাফিজ-সৌম্যরা আজ বিশ্বজুড়ে গর্বিত বাঙালী। শেখ হাসিনা তাঁর রূপকল্প- ভিশন ২০২০-২১ ঘোষণা করেছিলেন। বলেছিলেন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবেন। এখন ২০১৫ এরই মধ্যে বাংলাদেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ২০২১ সাল পর্যন্ত হয়তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না, তার আগেই আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হব। তবু মাঝে-মধ্যে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, কি করে এতটা আশাবাদী হচ্ছেন। উত্তর হলো আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাঙালী, আমরা তো আশাবাদী হবই। এই আশাবাদ বা আত্মবিশ্বাসই আমাদের ভবিষ্যত পথ দেখাচ্ছে, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জাতির জনককে হত্যার পর মাঝে কখনও মিলিটারি জিয়া, কখনও তদীয় পতœী হাফ-মিলিটারি খালেদা বা কখনও মিলিটারি এরশাদ চেষ্টা করেছে চলার পথ সংকীর্ণ করতে। তারা বেশকিছু ক্ষেত্রে সফলও হয়। তবে বেশিদিন টেকেনি। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে সেসব অতিক্রম করে এগিয়ে যাবার যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন সেদিন, তাই আজ বাস্তবে রূপ লাভ করতে শুরু করেছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী উচ্ছন্নে যাওয়া এক বিকৃত প্রজন্মের বিপরীতে আজ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে নিয়ে এমন এক প্রজন্ম জন্ম নিয়েছে যাদের আমরা এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা বলছি, যাদের বুকে সাহস আছে, আধুনিক শিক্ষা আছে, তেমনি আছে আদর্শ, যা দিয়ে তারা এরই মধ্যে সকল প্রকার পশ্চাৎপদতা, অধর্ম, কুসংস্কার, বিদেশী আগ্রাসন এবং রাজাকার আলবদর ও তাদের রগকাটা বংশধরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করেছে। ওদের মুখে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, হাতে লাল-সবুজ পতাকা। কোন বাম বিভ্রান্তিও ওদের স্পর্শ করতে পারছে না। তবে বড়দের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদার সেসব লোক কেউ পার্লামেন্টে মেম্বাররূপে, কেউ পদ-পদবির জোরে লোভী-লুটেরারূপে আবির্ভূত হচ্ছে মাঝে-মধ্যেই। এরা আওয়ামী লীগ করে, কিংবা সহযোগী সংগঠন, তবে আদর্শ নেই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দিক-নিদের্শনাও অনুপস্থিত। কোন কোন এলাকায় এরা এতই শক্তিধর যে, এদের অপছন্দ করে ওই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ, তারপরও কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায় না। এলাকায় পুলিশ এদের গৃহভৃত্যের মতো কাজ করে। এদের স্বেচ্ছাচারিতায় ওইসব এলাকা পেছনে পড়ে থাকছে। এরা আবার জনগণকে ভীষণ ভয় পায়। তাই সামনে একটা-দুটা হোল্ডা-গু-ার পেছনে পুলিশের গাড়ি ভ্যাপু বাজাতে বাজাতে সঙ্গে সঙ্গে চলে। এলাকার সিভিল প্রশাসন এবং উন্নয়ন অফিসকে যা বলে তাই তারা পালন করে। সরকারের কোন উন্নয়ন কাজের ছোঁয়া এদের এলাকায় নেই। যার ফলে ওই এলাকা পশ্চাৎপদই থেকে যাচ্ছে। তবুও এরা জনপ্রতিনিধি, নেতা। দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের আস্থা হারিয়ে পরগাছার ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করছে। শেখ হাসিনা যখন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন তখন তারা যুদ্ধাপরাধীদের দলে ভেড়াচ্ছেন, কখনও দল ভারি করার জন্য, কখনও অর্থের বিনিময়ে। জামায়াত পোষ্য ব্যাংক তো অর্থ নিয়ে এদের পেছনে ব্রিফকেস আর প্রকল্প হাতে এক পায়ে দাঁড়িয়েই আছে। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, কিছু আওয়ামী লীগ নেতাও জামায়াত সমর্থিত ব্যাংকের অর্থায়নে ব্যবসা করে। আরেক গ্রুপ আছে যারা বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকারের কর্মকর্তা এবং পদোন্নতিও সরকারের কারও কারও অনুগ্রহে। কিন্তু পদে বসে তারা কেউ নিউট্রাল হয়ে যান এবং নিউট্রালিটির আড়ালে অর্থের বিনিময়ে জামায়াত-শিবিরকে ভাল পোস্টিং দেন, চাকরি দেন। কলামটি শুরু করেছিলাম ‘আগামী দিনের বাংলাদেশ ভাবনা’ শিরোনাম দিয়ে। মাঝে অনেক প্রসঙ্গ এসে গেল। আমি বিশ্বাস করি কিছু মিস ম্যানেজমেন্ট বাদ দিলে আগামী দিনের বাংলাদেশ আশার আলো দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কাজ আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সেই অমর কাব্যÑ ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না।’ পাকিস্তান, পশ্চিমা দুনিয়া এবং কিছু এশীয় দেশের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার মতো ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুকন্যার যেমন আছে, তেমনি তিনি জাতিকেও সেভাবে গড়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে আমরা এখন শক্তিশালী একটি দেশ, একটি জাতি। আমাদের এখন গড় আয়ু ৭০ ছাড়িয়েছে, শিক্ষার হারও ৭০ প্লাস, গত ৬/৭ বছর জিডিপি চলছে ৬-এর ওপরে, মাথাপিছু আয় ১৩১৪ মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের হারও সাম্প্রতিককালে অভাবনীয়ভাবে কমেছে, বাংলাদেশে কোথাও কোন মানুষ এখন না খেয়ে নেই (অলস বাদ দিয়ে), এখন আমাদের খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি টন ছাড়িয়েছে, আমরা বিদেশে চাল রফতানি শুরু করেছি। আমাদের শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জকহারে বেড়ে চলেছে। নারীর ক্ষমতায়ন, যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান এসব খাতেও আমরা এগিয়ে। অর্থাৎ আমাদের প্রতিটি উন্নয়ন খাতের সূচক ওপরের দিকে। গউএ (সরষষবহহরঁস ফবাবষড়ঢ়সবহঃ মড়ধষ)-এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের অনেককে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে। অবশ্য আমরা আরও অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু বার বার আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মিলিটারি শাসন, জঙ্গীবাদ এবং আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ ও তথাকথিত ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদ। স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ লাগায়। আমাদের কেনা চালের জাহাজ বোম্বে বেড়ায়, দুর্নাম করার জন্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৩ নবেম্বর জাতীয় ৪ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে হত্যা করে মোশতাক-জিয়া প্রথমেই বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর চক্রান্তে লিপ্ত হয়, হাজার বছরের বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা যা আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছি, তাও পাল্টে বিপরীতমুখী ধারায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবির-মুসলিম লীগ এবং নাগরিকত্ব বাতিল করা গো. আযমদের আবার রাজনীতিতে নিয়ে আসে। জিয়াপতœীও রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে জাতিকে অপমান করে। এরশাদও তার মিলিটারি ধারায়ই চলে। অবশ্য এসব কোনটাই টহপযধষষবহমবফ যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৪ বছর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরে গোটা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে জনগণের আস্থা অর্জন করে ঐ মিলিটারি লুটেরা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাঁর নিরলস লড়াই আজ বাংলাদেশকে সম্মানের জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। তিনি আমাদের এতটাই সম্মানিত করেছেন যে, এখন যে কোন বিদেশীও আমাদের সম্মানের চোখে দেখে। অবশ্য এজন্য কারও কারও গা জ্বলে। যেমন মিলিটারি জিয়াপতœী খালেদা। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে প্রধান বাধা এই নারী। আগামী দিনের বাংলাদেশ গঠনে জাতি অনেক বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে যেমন সত্য, তেমনি অনেক বাধা এখনও সামনে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে আছে। শেখ হাসিনা সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে একটার পর একটা দেয়াল ভেঙ্গে অতিক্রম করে চলেছেন। আর বেগম খালেদা জিয়া যিনি দেশকে পেছনে ঠেলে দিতে বেশি আনন্দ পান। ক্ষমতায় থাকতে যেমন, তেমনি ক্ষমতার বাইরেও। এর কারণ ভালভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে খালেদা জিয়া মূলত পাকিস্তানের ‘প্রধান এজেন্ট’ হিসেবে বাংলাদেশে রাজনীতি করছেন এবং তার দল বিএনপিকেও একই ধারায় গড়ে তুলেছেন। এজন্য তিনি যেমন যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীকে (চট্টগ্রামের ফকা চৌধুরী বা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য এবং তার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা বানিয়েছিলেন। এর কারণ হলো পাকিস্তানের আইএসআইর কাছে সাকা চৌধুরী নাম্বার ওয়ান বিশ্বস্ত এবং তার সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আইএসআইর অর্থে লালিত বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফাসহ অন্যান্য গোপন সংগঠনের সম্পর্ক রয়েছে বলে শোনা যায়। যে কারণে খালেদা জিয়ার আমলে উলফা বাংলাদেশে সবরকম সহযোগিতা পেয়েছিল। দ্বিতীয়ত জামায়াত তো এখন তার সবচেয়ে বড় পার্টনারই শুধু নয়, বরং জামায়াতের মধ্যে বিএনপিকে বিলীন করে দিয়েছেন। সবই করছেন দুর্নীতির মামলায় পলাতক পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করেই। পত্রিকার সংবাদ হলো (প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০১৫) জঙ্গীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩৫০ মামলা একটিরও নিষ্পত্তি হয়নি। অভিযোগ উঠেছে গাফিলতির, সরকারী কৌঁসুলিদের অবহেলা কালক্ষেপণের জন্য দায়ী। যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে ১১১টি মামলার অনুমোদন দেয়। মামলাগুলোর একটিরও বিচার শেষ হয়নি। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার বলে আমি মনে করি। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে দলের যেসব নেতা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরকে দলে নিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্য তাদের অর্থের বিনিময়ে সরকারে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নভাবে নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতি দিচ্ছেন তাদের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেয়া। জামায়াত-শিবির বিএনপি খেয়েছে, এটি ভুলে গেলে চলবে না। ঢাকা ॥ ২৯ জুলাই ২০১৫ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×