ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় রামেশ্বরমে দাফন সম্পন্ন ‘জনতার রাষ্ট্রপতির’

অন্তিম শয়ানে আবদুল কালাম

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৩১ জুলাই ২০১৫

অন্তিম শয়ানে আবদুল কালাম

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও পরমাণুবিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার জন্মস্থান তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে দাফন করা হয়েছে। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা-ভালবাসা নিয়ে চিরনিন্দ্রায় গেছেন ভারতের মিসাইলম্যান। খবর এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা ও ওয়েবসাইটের। শেষ আনুষ্ঠানিকতার আগে রামেশ্বরমের একটি মাঠে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কালামের কফিনে স্যালুট দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে তিনি কালামের কফিনের চারদিক প্রদক্ষিণ করেন। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকালেই রামেশ্বরম পৌঁছেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চা-ি প্রমুখ। শারীরিক কারণে তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা উপস্থিত না থাকলেও উপস্থিত ছিলেন তার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য। কালামকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের একাধিক বিশিষ্টজন। রামেশ্বরমের পেই কারুম্বুর কবরস্থানে কালামকে দাফন করা হয়। দাফনের আগে কালামের পারিবারিক মসজিদে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ফুলে শোভিত কামানের শকটে করে ভারতের তেরঙা পতাকায় ঢাকা জনতার রাষ্ট্রপতির দেহ কবরস্থানে আনা হয়। তিন বাহিনীর তিনটি দল সারিবদ্ধভাবে শকটটি পাহারা দিয়ে নিয়ে আসেন। সামরিক বাহিনীর সাবেক এই সর্বাধিনায়কের সম্মানে তোপধ্বনি করা হয় এবং সামরিক বাহিনীর বাদকদল বিদায়ী শোক সঙ্গীত বাজান। ‘জনতার রাষ্ট্রপতি’খ্যাত আবদুল কালামকে শেষ বিদায় জানাতে সারা দেশ থেকে হাজারো মানুষ রামেশ্বরমে আসে। কেউ আসে হেঁটে, কেউবা বাস, ট্রেন, নৌযানে। গন্তব্যে আসতে গিয়ে অনেকে সড়কে রাত কাটান। বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ রামেশ্বরমের পথঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। তারা শেষবারের মতো তাঁদের প্রিয় মানুষকে শ্রদ্ধা জানান। জানান হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা। দাফনসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার সময় প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতির ৯৯ বছর বয়সী বড় ভাই মোহাম্মদ মুথু মারাইকরসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ভারতের পরমাণু কর্মসূচীর পথিকৃৎ ৮৪ বছর বয়সী আবদুল কালাম গত সোমবার সন্ধ্যায় মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে বক্তৃতা করার সময় হঠাৎ হৃদ্?রোগে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। আবদুল কালাম চিরকুমার ছিলেন। শিলং থেকে গুয়াহাটি হয়ে দিল্লীতে পৌঁছায় তার মরদেহ। দিল্লী থেকে বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে মাদুরাই পৌঁছে দেয়া হয় দেহ। সেখান থেকে তার শহর রামেশ্বরমে। সঙ্গে আগাগোড়া ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাত দিনের শোক পালন চলছে। তবে কর্মনিষ্ঠ কালামকে শ্রদ্ধা জানাতেই রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা হয়নি।? ১৯৩১-এর ১৫ অক্টোবরে রামেশ্বরমে এপিজে আবদুল কালামের জন্ম অত্যন্ত গরিব ঘরে।? শৈশবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে খবরের কাগজ বিলি করতেন কালাম। পরে বিজ্ঞানে তার অসামান্য কৃতিত্বের জেরে বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছেন। ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানে উত্তরণ তারই হাত ধরে। ইসরো, ডিআরডিওতে কর্মরত ছিলেন বিভিন্ন সময়ে। বিজ্ঞানে তার অবদানের জন্য প্রথমে পদ্মভূষণ ও পরে ভারতরতœ সম্মানে ভূষিত হন। রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তাঁর মেয়াদ ছিল স্মরণীয়। তিনি ছিলেন সর্বার্থেই জনতার রাষ্ট্রপতি। পড়ুয়াদের বিশেষ পছন্দ করতেন। শিক্ষকতা ছিল তার প্রিয় কাজ। পড়াতে পড়াতেই বিদায় নিলেন শেষমেষ। এদিকে একদিনের জন্য বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ুতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যটির সব ব্যাঙ্ক, স্কুল, কলেজ, বীমাসংস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে। মদের দোকানও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। কালামকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাজ্যের প্রায় ৩০ হাজার সোনার দোকানও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
×