ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১১ ইনিংস পর আবারও অর্ধশতক পেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, চতুর্থ উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে রেকর্ড জুটি

ব্যাটসম্যান মুশফিকের প্রত্যাবর্তন

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩১ জুলাই ২০১৫

ব্যাটসম্যান মুশফিকের প্রত্যাবর্তন

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভাল কিছুর জন্য ভাগ্যের সহায়তাও লাগে। আরেকবার সেটার প্রমাণ মুশফিকুর রহীম নিজেও পেলেন। নাহলে ভয়ঙ্কর এবং গতিধর বোলার ডেল স্টেইনের বল স্টাম্প স্পর্শ করার পরেও বেলটা বহাল তবিয়তে থাকে কী করে? টানা ৬ টেস্টের ১১ ইনিংস কোন অর্ধশতক না পাওয়াতে দারুণ এক দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না ব্যাটে রানের খরা কাটছে না কেন? ভাগ্যের সহায়তা ছাড়া যেন সঙ্কটটা কোনভাবেই কেটে ওঠা যাচ্ছিল না। সেটা অবশেষে স্টেইনের বলে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন পেলেন মুশফিক। বেল দুটো স্থানচ্যুত হয়ে পড়ে গেলেই ১০ রানে সাজঘরে ফিরে যেতে হতো বাংলাদেশের মিডলঅর্ডারের প্রাণ মুশফিককে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের সহায়তাটা কাজে লাগিয়ে দারুণ এক ইনিংস উপহার দিলেন। ক্যারিয়ারের ১৫তম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত ৬৫ রানে সাজঘরে ফেরেন। দলের বিপদের মুহূর্তে হাল ধরে অনেক দিন এমন কার্যকর ইনিংস খেলে পাওয়া ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নামটা ক্রমেই মুছে যাচ্ছিল। সেটা আবারও যেন মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৮৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন আবার বিপদে বাংলাদেশ তখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৯৪ রানের জুটি গড়েন। যা দু’দলের মোকাবেলায় আজ পর্যন্ত সেরা চতুর্থ উইকেট জুটি। ক্যারিয়ারে এমন দুঃসময় আগে কখনও যায়নি মুশফিকের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টেই ৮০ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস উপহার দিয়ে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছিলেন। এরপরেই এসেছিল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়টা, ঘটেছিল ছন্দপতন। ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাট হাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। টানা ১০ ইনিংস কোন অর্ধশতক দেখা দূরের কথা, ১৫ রানের ইনিংস পেরোতে পারেননি! অনেকেই তখন খালেদ মাসুদ পাইলটের উপযুক্ত উত্তরসূরি হিসেবে মুশফিকের বিকল্প খোঁজার কথা বলতে শুরু করেছিলেন। কারণ ওই সময় টানা ১০ ইনিংসে তিনি মাত্র ৬.৭৭ গড়ে করতে পেরেছিলেন ৬১! ইনিংসগুলোর চেহারা ছিল এমনÑ ১১*, ১, ৭, ৬, ৮, ০, ৭, ২, ১৫ ও ৪! এরপর আর এমন বাজে সময় যায়নি তার। বিশেষ করে অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে ব্যাট হাতে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন। ২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে গৌরবময় এক কীর্তি যোগ করেন ২০০ রানের ইনিংস খেলে। যদিও অধিনায়ক হওয়ার ঠিক আগেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বাজে সময়টার সাক্ষী হয়েছিলেন ২০১০ এর মার্চ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। ওই সময় খেলা ৮ ইনিংসে করেছিলেন ১৬.০০ গড়ে ১২৮ (৩০, ৩, ১৬, ০, ১১, ১৩, ২৭ ও ২৮)। সেই শেষ, এরপর বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডারে অন্যতম নির্ভরযোগ্য একজন হয়ে উঠেন তিনি। ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়টা ছিল ২০১৩ সালের ৮ মার্চ থেকে গত বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলা ১৪ ইনিংসে। এ সময় তিনি করেছেন ৫৭.৬৯ গড়ে ৭৫০ রান। আর সে কারণেই নাম হয়ে গিয়েছিল ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’। এমন নাম কামাবার উপযুক্ত কাজটাই করেছিলেন। সম্প্রতি মূল পরিচয়টা উইকেটরক্ষক হলেও সেই দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালনে চরম বাজে প্রদর্শনীতে সমালোচিত হয়েছেন। এর মধ্যে আবার ব্যাটেও রান পাননি। গত ১১ ইনিংসে তিনি হাফসেঞ্চুরির দেখা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ বিষয়ে মুশফিক নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি ঠিক বুঝতে পারছি না সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে? বলও ব্যাটে আসছে এবং আমিও ঠিকভাবেই খেলছি। কিন্তু রান পাচ্ছি না। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি আগামী টেস্টে রানে ফিরতে পারব।’ তবে এমন কথা গত কয়েক টেস্টেই বলেছেন মুশফিক। আর চেষ্টারও কমতি দেখা যায়নি কোন সময়। আগের মতোই দলের আগেই ব্যাট-বলের অনুশীলন করে ফিরে গেছেন সবার পরে। একাকী নিজেকে শুধরে নেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অবশেষে সুফল পেলেন, তবে সেখানে ভাগ্যদেবীর ইচ্ছাটাও ছিল। কারণ ব্যক্তিগত ১০ রানের সময় স্টেইনের বল তার স্টাম্প ছুঁয়ে গেলেও বেল না পড়াতে রক্ষা পান। তবে এরপর আর সুযোগ দেননি মুশফিক। যখন নেমেছিলেন বাংলাদেশ দল তখন ৮৬ রানেই হারিয়ে বসেছিল ৩ উইকেট। দলীয় ১০১ রান ছিল তখন। মুশফিক সাজঘরে ফিরলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পতিত হতো বাংলাদেশ দল। কিন্তু সে যাত্রা বেঁচে যাওয়ার পর সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যাট চালিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ১৫তম অর্ধশতক। ১২৫ বলে ৭ চারে ৬৫ রান করে ফেরার আগে চতুর্থ উইকেটে ৯৪ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে। চতুর্থ উইকেটে এটিই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা জুটি। দু’দলের মোকাবেলায়ও এটি সেরা জুটির রেকর্ড। এর আগে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে ৬৯ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি ছিল শাহরিয়ার নাফীস ও আব্দুর রাজ্জাকের। তবে মুশফিক যে বলে আউট হলেন সেটা নিয়েও আছে সংশয়। ফিল্ড আম্পায়ার আউট দেয়াতে বেনিফিট অব ডাউট হিসেবে বোলার ডিন এলগার কট বিহাইন্ডের আউটটা পেয়ে গেলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মুশফিক ব্যাট হাতে সফল হয়ে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন এটাই বড় কথা। এর আগে ১১ ইনিংসে তিনি করেছেন ১৬.৯০ গড়ে ১৬৯ (২৩*, ১১, ০, ১৫, ৪৬, ৩২, ০, ১২, ০, ২ ও ২৮)। মুশফিকের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বাজে সময়। অথচ এই ইনিংসগুলো তিনি খেলেছেন দেশের মাটিতে। সেই দুঃসময় কাটিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের সর্বোচ্চ রানটা আসল ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবলের’ উইলো থেকেই।
×