ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

শরীয়তপুরের সোলেমানকে সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৩১ জুলাই ২০১৫

শরীয়তপুরের সোলেমানকে সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত শরীয়তপুরের রাজাকার সোলায়মান মোল্লা ওরফে সোলেমান মৌলভীকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তার ও ইদ্রিস আলী সরদারের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে স্কাইপি সংলাপে বিচারপতিদের সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাওয়ায় সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের আদেশ পিছিয়ে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পুননির্ধারণ করা হয়েছে। বাগেরহাটের তিন রাজাকারের মধ্যে আব্দুল লাতিফ তালুকদার মারা যাওয়ার বিষয়টি অবহিত করেছে প্রসিকিউশন পক্ষ। এ বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য ৫ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশগুলো প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ১৪ জুন রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের কাশিপুর থেকে আসামি সোলায়মান মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। ইদ্রিস আলী সরদার এখনও পলাতক রয়েছে। ১৪ জুন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৮ জুলাই দুই আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল ও ২৩ জুলাই সোলায়মান মোল্লাকে ধানম-িতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয় সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতির আবেদন জানান প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা। শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি ও ৩০ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালে শরীয়তপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদারসহ আরও সাত রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের নেতৃত্বে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া, কাশাভোগ, মানোহর বাজার, মধ্যপাড়া, ধানুকা, রুদ্রকরসহ হিন্দু প্রধান এলাকাগুলোতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় রাজাকাররা। তারা মাদারীপুরের এআর হাওলাদার জুট মিলে রাজাকার হিসেবে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। তাদের সহায়তায় পাকিস্তানী সেনারা এলাকার কয়েক শ’ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে। নারীদের হত্যার আগে ক্যাম্পে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালানোরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, আসামি আবদুল লতিফ তালুকদার মারা গেছেন। বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেছি। ট্রাইব্যুনাল অধিকতর শুনানির জন্য ৫ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছেন। তিন রাজাকার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের তিন রাজাকারের মধ্যে আব্দুল লতিফ তালুকদার মারা যাওয়ার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য ৫ আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কারাবন্দী আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার ২৮ জুলাই মারা গেছেন। সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত রোগে তিনি মারা যান। তিনি ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধী বাগের হাটের ৩ রাজাকারের মধ্যে একজন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ মামলাটি সিএভি রাখা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন রাজাকার কসাই সিরাজ মাস্টার, খান আকরাম হোসেন। এই মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে। আদালত অবমাননা ॥ স্কাইপি সংলাপে বিচারপতিদের সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাওয়ায় সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের আদেশ পিছিয়ে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পুননির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ব্যারিস্টার ফখরুলের পক্ষে সময়ের আবেদন জানান তার আইনজীবী। সাকা চৌধুরীর মামলার রায়ের খসড়া ফাঁস করার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ২০১৩ সালের ২০ নবেম্বর গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক আছেন ব্যারিস্টার ফখরুল। ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিচারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগে কারণ দর্শাও (শো’কজ) নোটিস জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-১ এর পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের কথিত স্কাইপি সংলাপের সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারপতির সংশ্লিষ্টতা ছিল কি-না, কিংবা তারাও এ ধরনের সংলাপ করেছিলেন কি-না তার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে সাকা চৌধুরীর পক্ষে আবেদন করায় ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে না- তা জানতে চেয়ে এ নোটিস জারি করা হয়। ঐ বছরের ৭ মার্চ লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন ব্যারিস্টার ফখরুল। আবেদনটি পাওয়ার পর এ বিষয়ে আদেশের জন্য ৮ এপ্রিল দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ৮ এপ্রিল ব্যারিস্টার ফখরুল সময়ের আবেদন জানান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন এ বিষয়ে শুনানির আবেদন জানান। এসব আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
×