ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাপ বাপকেও ছাড়ে না- জ্বলন্ত প্রমাণ সাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩১ জুলাই ২০১৫

পাপ বাপকেও ছাড়ে না- জ্বলন্ত প্রমাণ সাকা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ একেই বলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে যার দানবীয় হিংস্র ছোবলে বহু প্রাণ ঝরে গেছে অকালে। স্বামীহারা হয়েছে স্ত্রী। পুত্রহারা হয়েছে পিতা। পিতাহারা হয়েছে পুত্র। নিপীড়ন নির্যাতনে পঙ্গুত্ববরণ করেছে অনেকে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে সর্বহারা করা হয়েছে অনেককে। স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যে বিশেষ করে রাউজানে এ দানবীয় উন্মুক্ততার নায়ক ছিলেন সাকা চৌধুরী। যাকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বুধবার যার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীই শীর্ষ খলনায়ক। স্বাধীনতার বিরোধিতা করে সেই স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগে এই সাকাচৌর দাম্ভিকতাপূর্ণ আচরণ, ন্যায়কে অন্যায়, অন্যায়কে ন্যায় করার নেপথ্য কারিগরের ভূমিকায় থেকে দেশজুড়ে সমালোচিত হলেও তাকে বধ করার কোন উদ্যোগ স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরও দৃশ্যমান হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া হাতে নিয়ে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে এ ধারণা অনেকের বিশ্বাসে না এলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা খেয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে তাকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করার পর আপীলেও তা বহাল থাকার ঘটনায় সর্বত্র একযোগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা হয়েছে। অপরাজনীতি, সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী লালন করে বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার প্রক্রিয়ায় রাজনীতিতে তার যে উত্থান ঘটেছিল তার শেষ পরিণতি ঘটতে যাচ্ছে ফাঁসির দড়িতে ঝোলার মাধ্যমে। সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখার খবর শোনার পরও এ যুদ্ধাপরাধী কারাগারে ভেংচি কেটেছেন। তার স্বভাবই বেয়াদবি ও দানবীয় সুলভের। যার শেষ বহির্প্রকাশও বুধবার মৃত্যুদ- বহাল রাখার খবর শোনার পরও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছে। মুসলিম লীগ থেকে এনডিপি। এনডিপি থেকে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে এ যুদ্ধাপরাধী বিচরণ করেছেন ঔদ্ধত্য প্রকাশের মাধ্যমে। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে এই সাকাই বলেছিলেন ‘আগে জানতাম কুকুর লেজ নাড়ায়’, এখন দেখছি ‘লেজে কুকুর নাড়ায়’। আরও বলেছিলেন তালাক দেয়া বিবির সঙ্গে ঘর করা যায় না। এসব কটূক্তি কাকে উদ্দেশ্য করে সাকা বলেছিলেন তা বিএনপিসহ রাজনীতি সচেতন সকল মহলেরই জানা। এছাড়া আরও কত শত দাম্ভিকতাপূর্ণ আচরণ ও অশোভন উক্তি তিনি করেছেন তা হিসাবে আনাও কঠিন। শুধু তাই নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার চলাকালে তিনি কাঠগড়ায় থেকে যেসব উক্তি করেছেন তা আদালতে উপস্থিত সকলে প্রত্যক্ষ করার পর যেন নিজেরাই লজ্জিত হয়েছেন। রাজনীতিতে বারে বারে ভোল পাল্টে তিনি এদেশের ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছেন। জাতীয় পতাকা উড়িয়ে পুরো দেশ চষে বেরিয়েছেন। যা ছিল মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারীদের জন্য চরম অবমাননা। তার অপরাজনীতিতে উৎসাহিত করে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন তাদেরও লজ্জিত হওয়া উচিতÑ এ কারণে যে, তারা মুক্তিযুদ্ধের এক দানবকে পেলে-পুষে লালন করে অপশক্তির মদমত্ততা প্রদর্শনের খলনায়কে পরিণত করেছিলেন। আজ তারা কোথায়? আর সাকাই বা কোথায়। ফাঁসির মঞ্চ ও ফাঁসির রশি তার জন্য এখন অপেক্ষা করছে। এর আগে শুধু বাকি রয়েছে রিভিউ। ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী ও দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা ও প্রসিকিউশনের সঙ্গে যুক্ত বাঘা বাঘা আইনজীবীরা বলেই দিয়েছেন এ রায় পরিবর্তিত হওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। এখন শুধু অপেক্ষা মাত্র। পুরো দেশের মতো চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ করে রাউজানের মানুষও বুঝে গেছেন সাকার আর শেষ রক্ষা নেই। অতীতের দোর্দ-প্রতাপ সৃষ্টিকারী এই সাকাচৌর নির্মম পরিণতির প্রক্রিয়ায় উল্লসিত হয়নি এমন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। খোদ তার পরিবারেও তাকে নিয়ে রয়েছে নানা বিভক্তি। দলেও তার কর্মকা- নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা। আর রাউজানে স্বাধীনতার আগে ছিলেন জল্লাদ। আর স্বাধীনতার পরে ছিলেন জীবন্ত এক দানব। তার বিরুদ্ধচারণকারীদের একেবারে পিষে ফেলে রক্ত চুষে খাওয়ার ভূমিকায় ছিলেন এই সাকাচৌ। এক দুই নয়, হাজারো পাপ তার ভা-ারে জমা হয়েছে। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে যে অপকর্ম সে ও তার দোসররা করেছে তারই বিচার হয়েছে মাত্র। সব অপরাধের বিচার যদি করা যেত এ সাকাচৌ তার রাজাকার পিতা এবং পরিবারের অনেকের অস্তিত্ব জীবনের তরে একেবারে বিলীন হয়ে যেত। সাকার মৃত্যুদ- হবে। তিনি ফাঁসিতে ঝুলবেন। বিষয়টি এখন স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার। বুধবার সর্বোচ্চ আদালতে তার মৃত্যুদ-াদেশ বহাল থাকার রায় ঘোষণার পর তাকে নিয়ে একটি আওয়াজই মানুষের মুখ থেকে বেরোচ্ছে, হায়রে সাকা! আহারে সাকা! তার এ শেষ পরিণতি তার হাতে নির্যাতিতদের অনেকেই দেখে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সন্তুষ্টির জাবর কাটছে। খুন, ধর্ষণ মানবতাবিরোধী অপরাধ করে পার পাওয়া যে যায় না সেটাই আরেকবার এক সময়ের অসীম ক্ষমতাধর ও জানোয়ারতুল্য সাকার ক্ষেত্রে আরেকবার প্রমাণিত হলো।
×