ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশকে ভালবেসেই ভারতে গেলেন না মুক্তিযোদ্ধার কন্যা আর্জিনা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৩১ জুলাই ২০১৫

দেশকে ভালবেসেই ভারতে গেলেন না মুক্তিযোদ্ধার কন্যা আর্জিনা

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ শেকড়ের টান। এ দেশের আকাশ-বাতাসে বেড়ে উঠা। সব কিছুই তার চেনা জানা। তারপরও স্বামীর চাপে আর অভাবের তাড়নায় মনের ক্ষোভে মুক্তিযোদ্ধার কন্যা আর্জিনা স্বামী সন্তানকে নিয়ে ভারত যেতে নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে মানসিকভাবে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না তিনি। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক সময় আর্জিনা জেদ ধরে স্বামীকে চাপ দেন ভারতে না যাবার। তার এই মাতৃভূমির টান দেখে স্বামী শহীদুল ইসলাম বাদল ভারত যাওয়া থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। শত কষ্টেও থেকে যেতে চান এই দম্পতি। এই মাটিতেই মরতে চান তারা। কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের ফুলকুমার গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের ম-লের কন্যা আর্জিনা বেগম। ৮ বছর আগে বিয়ে হয় ভারতীয় গাঁওচুলকা ১৪৩ নং ছিটমহলের বাসিন্দা বাদলের সঙ্গে। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে অনামিকা খাতুন বৃষ্টি জন্ম নেয় তাদের সংসারে। ছিটের মধ্যে বাদলের বাড়িভিটেসহ জমি রয়েছে ২ বিঘা ৮ শতক। ফেরি আর কৃষি কাজ করে ৫ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় স্বামী বাদলকে। ভারত সরকারের ছিটমহলবাসীদের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা শুনে স্বামী শহীদুল ইসলাম বাদল এক প্রকার জোর করেই ভারত যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং রেজিস্ট্রেশন করেন। প্রথম দিকে স্বামীর সিদ্ধান্তে মত দিলেও সময় যত গড়াচ্ছিল তা মেনে নিতে পারেননি আর্জিনা। এক প্রকার জেদ ধরে বসে তিনি ভারতে যাবেন না। এ নিয়ে স্বামী তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করলেও তিনি রাজি হননি। দেশের প্রতি টান দেখে বাধ্য হয়ে স্বামী বাদল ভারতীয় রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাহার করে নেন। আর্জিনা বেগম জানান, সংসারে অভাবের তাড়নায় ভারতের লোভনীয় প্যাকেজের জন্য হেডকাউন্টিং শুরুর ৫ম দিনেই ভারত যেতে স্বামী বাদল নিবন্ধন করেন পরিবারের ৩ জনকে নিয়ে। প্রথম দিকে তার ইচ্ছা হলেও এক সময় তার মনে হয় ভারতের নতুন পরিবেশে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি আত্মীয়তার বন্ধন বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিজের মাতৃত্বের টানে নিবন্ধনের দু’দিন পরই নাম প্রত্যাহার করে নেন। আর্জিনার শ্বশুর মহির উদ্দিন জানান, ছেলের সিদ্ধান্তে হতবাক আর ব্যথিত হয় পরিবারের সকলেই। কারণ এখানে যে জমি জমা আছে তাতে কোন রকম জীবন চলে যায়। নতুন পরিবেশে কি করবে তাই হতাশ হয়েছিলাম। এখন বাড়ির সবাই খুশি পুত্র বাদলের মতামত পরিবর্তনের জন্য। আর্জিনার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের ম-ল জানান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। মেয়ে ও জামাইয়ের ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আমাদের দরিদ্র পরিবারে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া।
×