ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষা ও বাল্যবিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৩০ জুলাই ২০১৫

শিক্ষা ও বাল্যবিয়ে

সফিউল আলম প্রধান বাল্যবিয়ের অনেক কারণ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কারণ হলো- মেয়েদের বোঝাস্বরূপভাব, ইভটিজিং, অর্থাভাব, সামাজিক অসচেতনতা, যৌনহয়রানি, কুসংস্কার ইত্যাদি। বখাটেদের উৎপাত থেকে মুক্তি দিতেই বাবা-মায়েরা কম বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হন। পরিবারে মেয়েদের অতিরিক্ত বোঝা মনে করেন অনেক বাবা-মায়েরাই। সমস্যার সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অল্প বয়সে মেয়েকে পাত্রের দ্বারস্থ করা। নিজেদের মুক্তি দিতেই গিয়ে বাবা-মা নিজ হাতে সন্তানের স্বপ্নের চারণভূমিতে বিষ ঢেলে দেন। যে বিষে নিঃশেষ হয়ে যায় একটি স্বপ্ন একটি জাতির ভবিষ্যত, একটি নারীর মন। প্রাথমিক শিক্ষা ভালভাবে সম্পন্ন না করেই যখন মাধ্যমিক পর্যায়ের কন্যাশিশুরা দরিদ্রতাসহ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে, স্বেচ্ছায় বাল্যবিয়ে সম্পর্কে আবদ্ধ হতে হয় বা বাল্যবিয়ের শিকার হতে বাধ্য হয়, তখন গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের বৈষম্য প্রকট থেকে প্রকটতর হতে থাকে। বাল্যবিয়েসহ অন্যান্য কারণে শিক্ষায় যখন নারীরা পিছিয়ে পড়ে, তখন শিক্ষাহীনতা বা স্বল্পশিক্ষাগত দক্ষতার কারণে তারা পরে অন্যান্য মৌলিক চাহিদাগুলো অর্জনেও পিছিয়ে পড়ে, বা অধিকারগুলো অর্জনের ব্যাপারে পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। যার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমান অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টিতেও রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যর্থ হয়। যদি রাষ্ট্র ও সমাজে ‘নারী-পুরুষের সাংবিধানিক সমানাধিকার’ ধারণাটির সঠিক বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়, তাহলে সকল পর্যায়ের শিক্ষাকে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষাকে আরও বেশি নারীদের কাছে প্রশস্ত ও সহজলভ্য করা প্রয়োজন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষাক্ত ব্যাধি শরীফ উল্লাহ আইনসম্মত বয়সের আগেই যখন কোন কন্যাশিশু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন সে সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য এবং সন্তান প্রতিপালনের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকে না। সমাজে বাল্যবিয়ে হলে নারীর জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। পাশাপাশি পরিবারে দেখা দেয় নানা ধরনের দুশ্চিন্তা। অর্থনৈতিক অক্ষমতা বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ। সমাজে অর্থনৈতিক অক্ষমতার কারণে হতদরিদ্র পরিবার সম্পদশালী ধনাঢ্য পরিবার পেলে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বাল্যবিয়ে দিতে কোন প্রকার কালক্ষেপণ করে না। দরিদ্রতার কষাঘাতে পড়ে অনেক সময় পরিবারটি এ পথ বেছে নেয়। এটা আমাদের সমাজে একটা বিষাক্ত ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর থেকে গণমাধ্যমের ভূমিকা মিজান মনির বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে দেশব্যাপী নানা উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও এর হার কমানো যাচ্ছে না। অনেক সময় জোর করে, মতের বিরুদ্ধে, ক্ষমতা/প্রভাব বিস্তার করে অল্পবয়সে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এ রকম বিয়ের ফলে সংসার ভাঙছে, এমনকি আত্মহননের মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। গণমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তরুণপ্রজন্মের মধ্যে প্রচার করতে হবে বাল্যবিয়ের ক্ষতির প্রভাব। যতই বাধা আসুক বাল্যবিয়ে দূর করতে হবে। অন্যথায়, দেশে শিশুমৃত্যুর হার অতিরিক্ত হারে বেড়ে যাবে। বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম থেকে
×