ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

কবিতালাপের পঁয়ত্রিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩০ জুলাই ২০১৫

কবিতালাপের পঁয়ত্রিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খুলনার সংগঠন কবিতালাপ পা রাখল পঁয়ত্রিশে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্নের ব্যক্তিবর্গও চিন্তা-চেতনার আবেগ অনুভূতিতে বয়স আর অভিজ্ঞতার আলোকে দীপান্বিত। তারুণ্যের তোরণ পেরিয়ে যৌবনের গান গাইতে গাইতে কালের ভেলায় চেপে সে এখন সুপুরুষ। কবিতালাপ এখন শুরু কবিদের সংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কবিতা প্রেমিকদের, কবিতার শুভানুধায়ীদেরও সংগঠন। কবিতালাপের প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বুধবার বিকেলে। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের বরেণ্য কবি সাহিত্যিক, গবেষক ও সাংবাদিকদের পুরস্কার প্রদান করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দেশের বরেণ্য ১০ জন কবি সাহিত্যিকদের পুরস্কার প্রদান করে সংগঠনটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কবি রবিউল হুসাইন, কবি কামাল চৌধুরী, লেখক ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস ও সাংবাদিক লিয়াকত আলী। সঙ্গীতশিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ানের কণ্ঠে ‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলে’ রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শিল্পী একে একে আরও তিনটি গান পরিবেশন করেন। এগুলো হলো ‘দীপ নিভে গেছে মম’, ‘কে দিল আবার আঘাত’ ও ‘পৃথিবী আমারে চায়’। এরপর শুরু হয় পুরস্কার প্রদানের পালা। প্রধান অতিথির কাছ থেকে একে একে পুরস্কার গ্রহণ করেন কবি সাংবাদিক ফারুক আলমগীর, কবি প্রাবন্ধিক গবেষক মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, কবি আসাদ মান্নান, কবি রুবী রহমান, প্রাবন্ধিক গবেষক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, কবি গবেষক আবদুস সামাদ ফারুক, কবি রবীন্দ্র গোপ, কবি মুহাম্মদ সামাদ, কবি মোশাররফ হোসেন ভূঞার পক্ষে কবি শাপিকুর রাহিম ও এম মোস্তাকুল হক। পরে শুভেচ্ছা বক্তব্যে কবি অর্পণ উজ্জামান বলেন, এ পুরস্কারের মাধ্যমে দেশের বরেণ্য কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে এক মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। যার ফলে বরেণ্য ব্যক্তিরা যেমন সম্মানিত হচ্ছেন, তেমনি কবিতালাপও সম্মানিত হচ্ছে। কবিতালাপের মাধ্যমে এই সম্মান জানাতে পরাটাই আমাদের সাফল্য মনে করি। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সংগঠন হিসেবে জনবল আর যন্ত্রপাতির বিচারে কবিতালাপ বড় একটা কিছু নয়। তবে এর সারথীরা সংখ্যায় স্বল্প হলেও নিবেদিত নিষ্ঠায় বড় বলিষ্ঠ কর্মী বলা যায় নির্দ্বিধায়। আঞ্চলিক পর্যায়ে পদচারণার পাশাপাশি প্রথম থেকেই বলতে গলে জাতীয় পর্যায়ের কাব্য-সাহিত্য সাধক এবং সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের কীর্তি কবিতালাপের রয়েছে। অবয়বে কবিতালাপ আজ সুপরিচিত। সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে সুদূর নিউইয়র্কে গঠিত হয়েছে এর শাখা। সব বয়সের তরুণ মনের অধিকারীরা সৃজনশীল আবেগ ও সংবেদনশীল সখ্যতায় এখানে আছেন। পঁয়ত্রিশ বছর তাকে তাই বেশ সবল ও সক্রিয় মনে হয়। বুক পাইরেসি: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ॥ বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, এদেশের কপিরাইট অত্যন্ত দুর্বল। বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার পথকে অগ্রসর রোধে যারা অপরাধমূলক কাজ করেন তাদের প্রচলিত আইনে যেমন তেমনি সুনির্দিষ্ট ফাঁক দিয়ে তারা বের হয়ে যান। সুতরাং এটার সংস্কার জরুরী। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি আয়োজনে ‘পাইরেসি: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমরা সহজভাবে যে কোন ব্যাপারে পুলিশকে দোষারূপ করি। পুলিশ রাষ্ট্রের ঘটমান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজকে প্রায়োরিটি দেয়। পাইরেসি সম্পর্কিত মামলা করতে আসেন তারা নিজেরাও যথেষ্ট সচেতন নন। ফলে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে দেরি হওয়ায় পুলিশের মামলা নিতে দেরি হয়। পাইরেসি সম্পর্কে লেখক, প্রকাশক ও সর্বসাধারণকে সচেতন হলে সর্বক্ষেত্রেই সহজ হবে। এ সময় তিনি পাইরেসি রোধে সকল কার্যক্রমের সঙ্গে থাকবেন দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আয়োজক সংস্থার সভাপতি ওসমান গনির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক ও ইনটেকচ্যুয়াল প্রপার্টি এ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক আজিজুর রহমান। আলোচনা করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও কপিরাইট বিশেষজ্ঞ মনজুরুর রহমান। অন্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, পাইরেসি সম্পর্কিত বিষয়টাকে মোবাইল কোর্টের অধীনে আনার চেষ্টা চলছে। এতে করে দ্রুত আসামিকে শাস্তি প্রদান করা সহজ হবে। আইটি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার বলেন, যেসব অপরাধ চোখের সামনে হয় তা হয়ত রোধ করতে পারব কিংবা অল্প পরিসরে পারছি। কিন্তু ইন্টারনেট জগতে যেসব পাইরেসি হচ্ছে তা কী আমরা রোধ করতে পারব? শীঘ্রই এর বিষয়ে গুরুত্ব না দিলে অমাদের মিউজিক ইন্ড্রাস্টির মতোই এর অবস্থা হবে। আলোচকের বক্তব্যে মনজুরুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের পাইরেসির নেপথ্যে রয়েছে পাইরেসিরোধ সম্পর্কিত আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা। এর দূরীকরণ করতে হলে সেই অজ্ঞতা থেকে বের হয়ে লেখক, প্রকাশক ও প্রশাসনের আন্দোলেন প্রয়োজন। বুক পাইরেসির আন্তর্জাতিক অবস্থার সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে কামরুল হাসান শায়ক বলেন, পাইরেটেড বইয়ের কারণে ২০০৮ সালে পাকিস্তানের প্রকাশনা ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একইভাবে সোভিয়েত রাশিয়ার ক্ষতি ৪২ মিলিয়ন, থাইল্যান্ডের ক্ষতি ৩৭ মিলিয়ন, ইতালিতে ২০ মিলিয়ন, বাংলাদেশে ৮ মিলিয়ন ও চিলির ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের ব্যাপকভাবে যেসব স্থানে বুক পাইরেসি হয় সেসব স্থানের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নীলখেত, নিউমার্কেট, বাসাবো, ঢাকার বাইরে বগুড়ার সকল থানায়, কুষ্টিয়ায়, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট ও নওগাঁসহ বিভিন্নস্থানে ব্যাপকভাবে পাইরেসি হয়। এ থেকে উত্তরণের জন্য কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে প্রাবন্ধিক বলেন, বুক পাইরেসি বন্ধ করা ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রচলিত আইনের শাস্তির বিধান আরও কঠিনতর করা ও তার যথাযত প্রয়োগ। সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের চিহ্নিতকরণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। দেশী-বিদেশী প্রকাশকদের যৌথ প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। বাংলাদেশকে ইউনেস্কোর ফ্লোরেন্স এগ্রিমেন্টের আওতায় আমদানিকৃত বইয়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় কর প্রত্যাহার অথবা সীমিতকরণ করতে হবে। প্রশাসনিকভাবে পাইরেসিনির্ভর ওয়েবসাইটগুলোর প্রতি নজরদারিকরণ করতে হবে। সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে পাইরেসি বিরোধী জনসচেতনতামূলক ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।
×