ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাস্তি বহাল থাকায় চট্টগ্রামে আনন্দের জোয়ার

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩০ জুলাই ২০১৫

শাস্তি বহাল থাকায় চট্টগ্রামে আনন্দের জোয়ার

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সপ্তাহজুড়ে ভারি বর্ষণে যন্ত্রণার বন্যা শেষে চট্টগ্রামজুড়ে বয়ে যাচ্ছে উচ্ছ্বসিত আনন্দের জোয়ার। এ আনন্দ মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের শীর্ষ নরঘাতকের মৃত্যুদ-ের শাস্তি বহাল থাকার আনন্দ। এ আনন্দ একাত্তরে পাকবাহিনী ও তাদের শীর্ষ দোসর যুদ্ধাপরাধী রাজাকার ও চার দশক ধরে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করা এক জল্লাদের শাস্তি নিশ্চিত হওয়ার আনন্দ। এ আনন্দ মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ শহীদদের স্বজনদের ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের। এ আনন্দ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিশাল অর্জনের আনন্দ। মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে চিহ্নিত জল্লাদ সাকাচৌ’র (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) মৃত্যুদ-াদেশ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বহাল থাকার ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই বুধবার চট্টগ্রামজুড়ে নেমে আসে আনন্দের জোয়ার। এ যেন খুশির প্লাবন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ খলনায়ককের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশের আপীলের রায়ের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই সমগ্র দেশের মধ্যে চট্টগ্রামজুড়ে চলছিল ভিন্ন ধরনের অপেক্ষার ক্ষণগণনা। বুধবার সকাল ৯টা বেজে ঘড়ির কাঁটা কয়েক মিনিট অতিক্রম করতেই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের ৪ সদস্যের বেঞ্চ থেকে ঘোষিত হলো তার মৃত্যুদ- বহাল থাকার চূড়ান্ত রায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তার বিরুদ্ধে দেয়া চারটি ঘটনায় চার মৃত্যুদ- বহাল রইল। এবার অপেক্ষা এ নরঘাতককে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করে শহীদানদের আত্মাকে শান্তি দেয়া ও নির্যাতিত, স্বজন হারানো, বাড়িঘর জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়াদের মনে প্রশান্তির ছোঁয়ায় উদ্বেলিত করা। চট্টগ্রাম শহরের সাকার পারিবারিক যে ভবনটি মুক্তিযুদ্ধে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সেই ভবনটি জনরোষে পড়বে এমন আশঙ্কায় প্রশাসন মঙ্গলবার থেকেই এটিকে নিরাপত্তাধীনে নিয়ে আসা হয়। নগরীর চন্দনপুরা এলাকার একটি পাহাড়ি চূড়ায় এ টর্চার সেলটির নাম ‘গুডস হিল।’ যুদ্ধাপরাধী সাকাচৌ’র পিতা রাজাকার ফকাচৌ (ফজলুল কাদের চৌধুরী) ক্ষমতার জোরে এটি দখল করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ভবন অভ্যন্তরের পরিবেশ আলীশান। মুক্তিযুদ্ধে ফকাচৌ ও তার পুত্র সাকাচৌ’র ইন্ধনে ও ইশারায় তাদের ক্যাডার বাহিনী মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নির্যাতনে নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত করেছে এ ভবনেই। অনেকেই বরণ করেছে পঙ্গুত্ব। নির্যাতনে পরবর্তীতে প্রাণ হারানোর ঘটনাও রয়েছে। সাকাচৌ’র নেতৃত্বে তার ঘাতক বাহিনী মর্মন্তুদ অসংখ্য ঘটনার জন্ম দিয়েছে তাদের নিজ বাড়ি রাউজান এলাকাজুড়ে। সাকার বিরুদ্ধে বুধবার সর্বোচ্চ আদালতের রায় ঘোষিত হওয়ার পর সেই গুডস হিলে নেমে এসেছে কবরের নিস্তব্ধতা। ভবনের প্রধান ফটক ছিল তালাবদ্ধ। আনাগোনা ছিল না কারও। সংবাদ কর্মীরা ভিড় করলেও অভ্যন্তরে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। আর তার নিজ উপজেলা রাউজানে নেমে এসেছে আনন্দের জোয়ার। স্বাধীনতার চার দশক পর রাউজানবাসী যেন মুক্তির প্রকৃত স্বাদ পেল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাঙ্গুনিয়াবাসীও। ওটা তার নির্বাচনী এলাকা। কারণ, একাত্তরে পাশাপাশি এ দুই উপজেলার মানুষ সাকা বাহিনীর হাতে যেমন ব্যাপকভাবে দলিত মথিত হয়েছে, তেমনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শক্তির মদমত্ততার জোরে সাকার ক্যাডার বাহিনী এ দুই উপজেলার সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করেছে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষগুলো। টু শব্দ করতে পারেনি কেউ। স্বাধীনতার বিরুদ্ধচারণ করেও বাঙালীর স্বাধীনতা ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি এই ফকা-সাকা ও তাদের প্রভু পাক বাহিনী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীন বাংলাদেশেও এ সাকা ও তার ক্যাডার বাহিনী নিপীড়ন নির্যাতনে একাকার করে রাখে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার অযুত মানুষকে। কে এই সাকাচৌ? তার পরিচয় এদেশের কারও কাছে অজানা নয়। ডাক নাম খোকন। মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর কাছে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন নামে পরিচিতি ছিল। একাত্তরে মুক্তি সংগ্রামে পাক সেনাদের সহযোগিতায় সাকাচৌ হয়ে ওঠেন মহা এক দানব। তৎকালীন মুসলিম লীগের শীর্ষ নেতা পিতা ফকাচৌ’র প্রভাব আর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নীলনক্সা বাস্তবায়নে এ সাকাচৌ ও তার বাহিনী পুরো রাউজান এলাকাকে হত্যা ও জ্বালাও পোড়াওয়ের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। তাদের লেলিয়ে দেয়া গু-া বাহিনী কত মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। অকাতরে গুলি করেছে মুক্তিকামী মানুষদের। জবাই করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের। রাউজানের দানবীর কু-েশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে মন্দিরে প্রার্থনারত অবস্থায় টেনে হে্যঁচড়ে বের করে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে সাকা বাহিনী। রাউজানের সংখ্যালঘু হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ঊনসত্তরপাড়া, জগৎমল্ল পাড়া, সুলতানপুর, মধ্য গহিরাসহ সর্বত্র সাকা বাহিনীর অত্যাচারের দগদগে ঘায়ের চিহ্ন এখনও মুছে যায়নি। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ও তার পুত্র শেখ আলমগীরসহ অনেকেরই প্রাণপাত হয়েছে সাকার নির্দেশে তার লেলিয়ে দেয়া গু-া বাহিনীর হাতে। বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের বিরোধিতা করে পরাজিত হওয়ার পরও স্বাধীন এদেশের মন্ত্রিত্বের পদ লাভের বিরল সৌভাগ্যের অধিকারীদের অন্যতম এই সাকাচৌ। ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, ফাঁকা বুলি ও ক্ষণে ক্ষণে খবরের শিরোনাম হওয়ার প্রত্যাশীমনা এই সাকাচৌ। স্বাধীনতার বিরুদ্ধচারণকারী চক্রের শক্তির বলয় আর স্বৈরশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টি ও সেনাশাসক জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপি সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে এ সাকা রাউজান-রাঙ্গুনিয়া থেকে বারে বারে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে হয়েছেন এমপি। এমপির বদৌলতে এরশাদ সরকার তাকে করেছেন মন্ত্রী। আর বেগম জিয়ার সরকার মন্ত্রীর মর্যাদায় তাকে করেছেন তার আইন ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। একাত্তরেও ক্ষমতা। আবার দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও ক্ষমতা। এ ক্ষমতা তাকে পরিণত করে জীবন্ত এক দানবে। স্বাধীনতার পরও রাউজান আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির অনেককে গুম, অপহরণ ও হত্যা করেছে সাকার নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী। রাষ্ট্রীয় আইন তাকে কখনও স্পর্শ করতে পারেনি। পুরো জীবনে এ সাকা গ্রেফতার হলেন দু’বার। চট্টগ্রামে ছাত্রদল নিটোল হত্যার নেপথ্য নায়ক এ সাকাকে সিএমপির তৎকালীন উপ-পুলিশ কমিশনার নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে তখন গ্রেফতার করেছিলেন। কিন্তু এমপি পদে থাকার কারণে তাকে জেলে যেতে হয়নি। মাত্র একটি রাত থানায় অতিবাহিত করে পরদিন আদালতে সোপর্দ হওয়ার পরক্ষণেই তার জামিন হয়ে যায়। সেই মামলা আতুড় ঘরেই মরেছে। নিটোলের পরিবারের আহাজারি এখনও অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতার হয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। এবার আর নিস্তার নেই। দ-িত হয়েছেন মৃত্যুদ-ে। যা শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতও বুধবার বহাল রেখেছে। রাজনীতির কাগুজে বাঘ তথা বাঁকা কথায় চোস্ত এ সাকাচৌ’র নির্মম পরিণত তিনি ও তার পরিবার এবং অনুগত গু-া বাহিনী স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। কিন্তু সত্য বড় নিষ্ঠুর। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সাকার ক্ষেত্রেও তাই প্রমাণিত হলো। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী হত্যাকা-ের গ্যাংস্টার দলপতি এ সাকাচৌ এখন ফাঁসিতে ঝুলবে এ আনন্দ দেশবাসীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহর ও রাউজান-রাঙ্গুনিয়ায় যেন একটু বেশি। তার নির্মম নির্যাতনের শিকার এ অঞ্চলের বহু মানুষ। স্বজনহারাদের নীরব কান্না চার দশক পর এখন পরিণত হয়েছে বড় ধরনের এক প্রাপ্তির আনন্দে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সাকা ও তার পরিবার এবং অনুগত বাহিনীর সদস্যরা হেন কোন প্রক্রিয়া নেই যা করেনি। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। সাকার এ শেষ পরিণতি সকলের কাছে কাক্সিক্ষত হলেও তিনি ও তার পরিবার এবং ক্যাডার বাহিনীর কাছে ছিল অনাকাক্সিক্ষত। মুক্তিযুদ্ধে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার হয়েছিল যে রাউজান, সেই রাউজানে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরে ঘরে আনন্দের আলো জ্বলে উঠেছে সাকার মৃত্যুদ- বহাল রাখার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে। এদিকে, ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধী সাকা চৌধুরীর আপীলের রায়কে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে উৎকণ্ঠা ও পুলিশের রেড এলার্ট থাকলেও শেষ পর্যন্ত সাকার ক্যাডার বাহিনী ও তার দল বিএনপি কোন প্রতিক্রিয়াই দেখানোর সাহস করেনি। সাকার নিজ এলাকা রাউজান ও নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় যে কোন ধরনের নাশকতা হতে পারে এমন আশঙ্কায় বুধবার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু বিরূপ কোন প্রতিক্রিয়াতো হয়ইনি বরং চিত্র ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। রায় ঘোষিত হওয়ার পরই বেরিয়ে পড়ে খ- খ- আনন্দ মিছিল। উল্লসিত জনতা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে। যত দ্রুত সম্ভব একাত্তরের এ পিশাচের মৃত্যুদ- কার্যকর দেখতে চায় রাউজানবাসী। একই চিত্র ছিল চট্টগ্রাম নগরীতেও। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আনন্দ মিছিল বের করে। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতিবিজড়িত সাকার বাস ভবন সেই ‘গুডস হিল’কে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি উঠে এসেছে। এ দাবি সাকা চৌধুরীর মামলার সাক্ষী ও মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির। সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহাল থাকায় বুধবার চট্টগ্রাম শহর ছাড়াও রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকু-, মীরসরাই, পটিয়া, বোয়ালখালি, আনোয়ারা, বাঁশখালি এমনকি সন্দ্বীপেও বিভিন্ন হাটবাজার ও পাড়া- মহল্লায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বের হয় আনন্দ মিছিল। এতে যোগ দেন সাধারণ মানুষও। প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছর পর কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বীর চট্টলার ঐতিহ্যবাহী রাউজান। দম্ভোক্তিকারী ঘাতক সাকার ফাঁসি যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর চাই আমরা। কু-েশ্বরী ভবনে স্বস্তি ॥ বুধবার রায় ঘোষিত হওয়ার পর সকলের আকর্ষণ ছিল কু-েশ্বরী ভবন। সাকার নেতৃত্বে একাত্তর সালে হত্যা করা হয়েছিল কু-েশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট দানবীর ও শিক্ষানুরাগী অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে। আপীলের রায়েও নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যার অপরাধ মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রাখা হয়েছে। ফলে পরিবারটি দীর্ঘদিন পর পেয়েছে তাদের অভিভাবক হত্যার বিচার। নূতন চন্দ্র সিংহের পুত্র প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। বাবার হত্যার বিচার পাব সে আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। তিনিও শীঘ্রই সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মৃত্যুদ- কার্যকর দেখতে চান। গুডস হিল ভবনকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করার দাবি ॥ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবসার চৌধুরী রায়ে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, সকল ষড়যন্ত্র ও গুঞ্জন মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে অবশেষে একাত্তরের এই খুনীর মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রয়েছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এ রায়ই প্রত্যাশা করেছিলাম। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধকালে নগরীর গুডস হিলে অবস্থিত সাকা পরিবারের বাড়িটি ছিল টর্চার সেল। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারীদের ধরে সেখানে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানো হতো। অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকেই হয়েছেন পঙ্গু। গুডস হিলের এ বাস ভবন বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করতে হবে। সত্যের জয় হয়েছে ॥ মামলার আরেক সাক্ষী প্রবীণ ব্যবসায়ী নেতা মোঃ সলিম উল্লাহ বলেন, গুডস হিলের ভবনে আমি নির্যাতিত হয়েছিলাম। আমার মতো অনেককে এনে সেখানে নির্মমভাবে টর্চার করা হয়েছে। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গণহত্যার অপরাধে উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে সাকা চৌধুরী। বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে রায়ের কপি চুরিসহ অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়েছে। তখনই মারতে চেয়েছিলাম, পারিনি ॥ একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম মাহবুবুল আলম রায় শুনে এতটাই আনন্দিত হয়ে পড়েন যে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অতীত স্মৃতি টেনে এনে আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা চৌধুরীর নির্মমতা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেজন্য তাকে হত্যার চেষ্টায় অপারেশন চালিয়েছিলাম আমরা ক’জন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সে অপারেশনে সাকা প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হয়েছিল তার গাড়িচালক। সাকাও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। একাত্তর সালে মারতে পারিনি। এখন ফাঁসির দড়িতে তার মৃত্যুদ- কার্যকর হবে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি অনেক আনন্দের। চূড়ান্ত রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। পিতা ও ভাই হত্যার বিচার পেয়েছি ॥ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোজাফফর আহমেদ ও তার পুত্র শেখ মোহাম্মদ আলমগীরকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতনে হত্যা করেছিলেন এ সাকা। ঘটনাটি ঘটেছিল একাত্তর সালের ১৭ এপ্রিল। পিতা ও ভাই হত্যার বিচারের প্রতীক্ষায় পঁয়তাল্লিশ বছর কেটেছে শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের। বর্তমানে তিনি আটাত্তর বছরের বৃদ্ধ। সাকার ফাঁসির রায় বহাল থাকায় তার চোখে ঝরতে থাকে আনন্দাশ্রু। তিনিও যত দ্রুত সম্ভব পিতা ও ভাই হত্যাকারীর ফাঁসির দ- কার্যকর দেখতে চান। রাঙ্গুনিয়ায় খুশির জোয়ার ॥ ফাঁসির রায় আপীলেও বহাল থাকায় সাকা চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খুশির জোয়ার বইছে। বুধবার সারাদিন রাঙ্গুনিয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কঠোরতম। কোন অঘটন বা অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনিক নজরদারী ছিল। রাউজানে আনন্দ ॥ সাকা চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। রায়কে কেন্দ্র করে এ রাউজানে কিছু ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। পুলিশের পাশাপাশি ছিল বিজিবি টহল। কিন্তু ফাঁসির রায় বহাল থাকলেও কোন ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং আনন্দ মিছিল চোখে পড়ে দিকে দিকে। সতর্কাবস্থা থাকলেও কোন বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি পুলিশকে। মহিউদ্দিন চৌধুরী ॥ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সাকাচৌ’র মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
×