ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পাদক সমীপে

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৯ জুলাই ২০১৫

সম্পাদক সমীপে

ওরা মানবতার শত্রু মানুষ যখন রাতারাতি বিত্তশালী হয়ে ওঠে তখন কটাক্ষ করে বলতে শুনেছি মনে হয় লোকটি আদম বেপারীতে জড়িত অর্থাৎ সাধারণ মানুষের কাছে একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে সহজেই অবৈধভাবে আয়ের একমাত্র পথ হচ্ছে এই আদম ব্যবসা যা ভাষার পরিবর্তনে আজকে হয়েছে মানবপাচার ব্যবসা। যদিও বা আজকের সমাজে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অনেক পথই মানুষ বের করেছে। তথাপিও সভ্য জগতে পৃথিবীর বহু দেশে আদি দাস প্রথাকেও হার মানিয়ে আশঙ্কাজনক হারে জড়িয়ে পড়েছে এই মানবপাচার কাজে। তেমনিভাবে আমাদের দেশেও উদ্বেগজনক হারে অমানবিক এই পেশায় যুক্ত হয়েছে সমাজের অসংখ্য মানুষ। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলীয় সীমান্তের গহীন জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের আস্তানা থেকে মৃত মানুষের হাড়-গোড় উদ্ধারের পর সে দেশের পুলিশ অনুসন্ধান করে অসংখ্য গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। বেশিরভাগই রোহিঙ্গা মুসলমান কিংবা ভাগ্য বিড়ম্বিত বাংলাদেশী মানব সন্তানের। সমুদ্রপথে বিভিন্নভাবে পাচার হওয়া এ মানুষগুলোর রোগে-শোকে, খাদ্যে ও অভাবে কিংবা পাচারকারীদের হাতে নির্যাতিত হয়ে মারা পড়েছে, যার পরিণতিতে ভিন দেশের মাটিচাপায় হয়েছে তাদের চিরকালের ঠিকানা। মালয়েশিয়ার উপকূলীয় সীমান্তের সংরক্ষিত একটি এলাকায়ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধান পাওয়া গণকবরে উদ্ধার হওয়া দুই শ’ জনই বাংলাদেশী নাগরিক। থাইল্যান্ডে প্রথম গণকবর আবিষ্কার হওয়ার পর যখন বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হলে বাংলাদেশেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। কেননা পাচার হওয়া মানুষের মধ্যে অসংখ্য বাংলাদেশী নাগরিকও রয়েছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এ ঘটনায় সাগরে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে ওঠে আসে মাসের পর মাস ভাসতে থাকা পাচার হওয়া হাজার-হাজার নারী-পুরুষের জীবন-মৃত্যুর করুণ কাহিনী। বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার পেয়েছে এ অমানবিক ঘটনার। নড়ে-চড়ে উঠে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র। পাচারকারীদের গ্রেফতার অভিযানে নামে পুলিশ-বিজিবি। গ্রেফতার হয় কিছু পাচারকারী। ক্রসফায়ারে মারা যায় কয়েকজন পাচারকারী। পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হয় দুয়েকজন এবং সাগরে ভাসমান কিছু মানুষকে উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড। ফলে স্বভাতই প্রশ্ন জাগে, এই পাচারকারীরা এতদিন কিভাবে বহাল তবিয়তে সমাজে চলাফেরা করেছে। কিভাবে তারা হাজার-হাজার নারী-পুরুষকে পাচার করে সাগরে ভাসিয়ে দিল আর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কিভাবে এতসংখ্যক মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেল আর আমাদের রাষ্ট্র কিছুই জানল না। শহীদুল আলম শহীদ রাউজান, চট্টগ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলা গ্রামপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি নাম; গ্রামই যার ধ্যান, গ্রামই যার প্রাণ। সবুজ শ্যামল গ্রামবাংলার পরতে পরতে মিশে রয়েছে গ্রামীণ খেলার বাহারি আয়োজন। গ্রামীণ জীবনের একটি বড় অনুষঙ্গ গ্রামীণ খেলা। হা-ডু-ডু, দাঁড়িয়াবান্দা গোল্লাছুট, ডাংগুলি, পুতুল খেলা, লাট্টু খেলা, বউচি, কানামাছি মলদাইর, লাঠি খেলা, সাঁতার কাটা, ষোলোকাঠি খেলা, লুডু খেলা, কাবাডিসহ বিভিন্ন খেলার মোক্ষম ক্ষেত্র হলো গ্রামবাংলা। কিন্তু দিন গড়াচ্ছে যুগ পাল্টাচ্ছে। কালের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার সেসব লোকজ খেলা। অথচ এমন এক সময় ছিল যখন গ্রামীণ খেলার আমেজে মুখরিত থাকত গ্রামবাংলার মাঠ। বাড়ির আঙ্গিনাসহ মাঠ প্রান্তরজুড়ে জমে উঠত গ্রামীণ খেলার আয়োজন। পড়ন্ত বিকেলে দেখা যেত বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট ছেলেমেয়ে মেতে উঠত বউচি, কানামাছি খেলায়। অবসর সময়ে বয়স্করা ঘরের বারান্দায় মাটিতে এঁকে ‘ষোলোকাঠির’ খেলায় মেতে উঠতেন। মাঠে-ঘাটে প্রান্তরে জমে উঠত দাঁড়িয়াবান্দা, কাবাডি ও গোল্লাছুট খেলায়। ফাল্গুন চৈত্র মাসের জ্যোৎস্না আলোকিত রাতে বিবাহিত ও অবিবাহিত জনের মধ্যে জমে ওঠা ‘মলদাইর’ খেলার অবলুপ্তির আঁধারে হারিয়েছে। বাড়ির আঙ্গিনা, মাঠের পাশে ‘ডাংগুলি’ খেলার পুরনো স্মৃতি আজও মনে পড়ে। ছোট্ট মেয়ে শিশুটির হাতে পুতুল খেলা, লাঠিয়ালদের হাতে লাঠি, বাজি ধরে সাঁতার খেলা আজ আর চোখে পড়ে না। ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য, গ্রামীণ খেলা। কী শহর, কী গ্রাম এখন যেখানেই একটু খালি জায়গা, সেখানেই জমে উঠছে ক্রিকেট আসর। ছেলেদের হাতে এখন আর ডাংগুলি নেই। সেখানে স্থান করে নিয়েছে ব্যাট-বল। গ্রামীণ খেলার নাম নিশানা ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। আমাদের শেকড় ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে গ্রামীণ খেলা টিকিয়ে রাখা আবশ্যক। শ্যামল চৌধুরী মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা
×