ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

মানুষ হত্যা করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৯ জুলাই ২০১৫

মানুষ হত্যা করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না

মৌলবাদ বর্তমান মুহূর্তে বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছে। এই অবস্থানের সঙ্গে বাংলাদেশ যে রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া থেকে উৎসারিত এবং ধনতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক অব-উন্নয়নের ফল, তার সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ ব্রিটিশ আমল থেকে এবং পাকিস্তান আমল থেকে একটি বিশেষ ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফর্ম তৈরি করেছে। এই ফর্মটি ব্রিটিশ (এবং ইউরোপিয়ান) কলোনির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং একই সঙ্গে একটি জাতির ডি-কলোনাইজিং প্রক্রিয়ার ইতিহাস স্পষ্ট করেছে। সেজন্য বাংলাদেশের ইতিহাস ব্রিটিশ আমল এবং পাকিস্তান আমল থেকে ঔপনিবেশিকতার ফাউন্ডেশনাল টেক্সট। এই ডিপেনস ইতিহাসের মধ্যে এরিস্ট হয়েছে ডিপেনডেনসি তত্ত্ব, নব্য ঔপনিবেশিকতার ক্রিটিক, রাষ্ট্র গঠনের সমস্যা, বিভিন্ন অঞ্চলের ভূগোল ও সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন অঞ্চলভুক্ত ধর্মের প্রভাব। এভাবেই ইউরোপিয়ান আধুনিকতার মধ্যে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। মৌলবাদ এই সবকিছু প্রত্যাখ্যান করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসকে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের রাষ্ট্র গঠনের লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং একই সঙ্গে মধ্য এশিয়ার মুসলমানদের জাতীয়তাবাদী লড়াইয়ের অন্তর্গত করেছে। সেজন্য এই দুই ইতিহাস গঠন ও রাষ্ট্র গঠন পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এই অবস্থানের দরুন মৌলবাদ বাংলাদেশে নব্য এলিট ইতিহাসের উৎসারণ, কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস, স্থানীয় ইতিহাস, শ্রেণী ও কলোনাইজেশনের জটিলতা, জাতীয়তাবাদী ইতিহাস এবং নারীবাদী আন্দোলন তাদের ইতিহাস থেকে বাদ দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ইতিহাস পোস্ট কলোনিয়ান স্ট্যাটাস বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী এন্টি কলোনিয়ান লড়াই থেকে উদ্ভূত, সেখানে মডার্নিটি ও নন-মডার্নিটির বিভিন্ন উপাদান। মৌলবাদ এসব উপাদান থেকে একটি উপদেশ গ্রহণ করেছে। সেটি হচ্ছে ধর্ম, একটি এথনিক জাতিগোষ্ঠীর ক্রিয়াকলাপ, মুসলমান, এভাবে রাষ্ট্র গঠনের আখ্যানে একটি ধর্ম ও একটি জাতিকে বড় করেছে মৌলবাদ। তার লড়াই আধুনিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, আধুনিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে, বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ের একদিকে আছে প্রবল জাতীয়তাবাদী মডার্নিটি, অন্যদিকে আছে ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদী আখ্যান। মৌলবাদ সচেষ্ট এই ইসলামী সাম্রাজ্যবাদী আখ্যানের ভেতরে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক ফর্ম এবং ভিন্নতাভিত্তিক এথনিক এক্সক্লুসিভিজম ঢুকিয়ে দিতে, নাগরিকত্বের মধ্যে প্রোথিত সমতার প্রসঙ্গ কনসেন্ট উধাও করে দিতে। মডার্নিটি ও রাষ্ট্র গঠনের অবস্থান থেকে ইসলামিক ঐতিহ্য ও সেক্টারিয়ানিজমের দূরত্ব অনেক। মৌলবাদের ন্যারেটিভ কাঠামো এবং জাতীয়তাবাদের ন্যারেটিভ কাঠামো একেবারে ভিন্ন। তার দরুন মৌলবাদ অন্য সমাজ গ্রুপ, অন্য ধর্মজ গ্রুপকে অনবরত প্রবল সম্পর্কের মাধ্যমে অধস্তন করেছে, যুক্তিপূর্ব এবং আদিম স্ট্যাটাসকে সামনে ঠেলে দিয়েছে, মডার্নিটির এজেন্ট থেকে বহিষ্কার করেছে। আমরা যখন কৃষকদের লড়াই, নারীবাদী ইতিহাস কিংবা নন এলিট সাংস্কৃতিক ফর্মের কথা বলি, তখন মৌলবাদীরা আল্লাহর আইন কিংবা বেহেশতি সওগাত কিংবা মানুষের তৈরি আইনের নিকৃষ্টতা প্রমাণে সচেষ্ট হয়ে ওঠি। অধস্তনতার ভিত্তি সাম্প্রতিক ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের মধ্যে ক্রিয়াশীল হত্যার ধারণা। এই ধারণা হচ্ছে অন্য ধর্ম বিশ্বাসী মানুষদের ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে উচ্ছেদ করা ও হত্যা করা। সেজন্য মৌলবাদী ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের মধ্যে একটা সশস্ত্রতার এমার্সশন আছে। সে কারণে সশস্ত্রতা চেতনার মধ্যে ছড়িয়ে যায়। যেমন পুরুষের এমার্সশন এবং নারীদের অধস্তনতা। এই অধস্তনতা ডিসকার্সিভ সম্পর্কের মধ্যে ক্রিয়াশীল। মৌলবাদী ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের মধ্যে পুরুষ ও নারীবিরোধী টার্ম, মওলানা ও মুসল্লিবিরোধী টার্ম, ধর্মজ এলিট ও অনুসারীবিরোধী টার্ম এভাবে উল্লেখিত ক্ষমতার সাংঘর্ষিক দিক। ক্ষমতা ও ক্ষমতার সাংঘর্ষিক দিক বাদ দিয়ে মৌলবাদী ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের মতাদর্শের কাছে পৌঁছনো যায় না। বাংলাদেশের মৌলবাদ ইসলামের দূরবর্তী অঞ্চল, এই অঞ্চলটি ধারাবাহিকভাবে ইসলামিক ধর্মজ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়েছে সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে ও কলোনি হিসেবে। বাংলাদেশ ও অন্য ইসলামিক দেশসমূহের সম্পর্কের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ উন্মোচিত করেছে ধনতান্ত্রিক কলোনিয়াল অব উন্নয়ন। আবার রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ার দিক থেকে বাংলাদেশে উন্মোচিত হয়েছে অভ্যন্তরীণ কলোনিয়ানিজমের ধারা। মৌলবাদ এই ধারার মধ্যে সমাজ গঠন ও রাষ্ট্র গঠনের অভ্যন্তরীণ কলোনিয়ানিজমকে শক্তিশালী করেছে। মৌলবাদী ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন সমাজ গঠন ও রাষ্ট্র গঠনের দিক থেকে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার ও মধ্য এশিয়ার রাজনীতির মধ্যে লুপ্ত করার চেষ্টা করেছে। এই চেষ্টা থেকে উদ্ভূত হয়েছে হিন্দু ভারতের সঙ্গে মুসলিম বাংলাদেশের সম্পর্ক, বৌদ্ধ মিয়ানমারের সঙ্গে মুসলিম বাংলাদেশের সম্পর্ক। মৌলবাদী ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এসব সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক কলোনিয়ানিজম ব্যবহার করেছে। রাষ্ট্র দখলের ষড়যন্ত্রের ইতিহাস প্রণয়ন করে চলেছে ইসলামী রাষ্ট্র, জামায়াত, হেফাজত ও বিএনপি; এই প্রণয়নের বিরুদ্ধে তৈরি হয়েছে অন্য ধারা: থমসন ও হফসমের তৃণমূল থেকে ইতিহাস তৈরির ধারা : একপক্ষে হিস্টি ওয়ার্কশপের জার্নাল এবং অন্যপক্ষে ফরাসীদের প্রাত্যহিক ও স্থানিক ইতিহাস তৈরির ধারা। এভাবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ও ইন্টিলেকচুয়াল লড়াই চলছে। বাংলাদেশে এসব লড়াই প্রবলভাবে কাজ করে চলেছে; এদের মধ্যে উল্লেখ্য মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, স্বদেশ রায়। মৌলবাদীদের রাষ্ট্র দখলের ষড়যন্ত্রের ইতিহাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কাজ নির্মিত হচ্ছে। এসব ইতিহাস হচ্ছে নারী মুক্তির ইতিহাস, কৃষক মুক্তির ইতিহাস, শ্রমিক মুক্তির ইতিহাস, আদিবাসীদের মুক্তির ইতিহাস। এসব ইতিহাস মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রের ইতিহাস নির্মাণকে পরাভূত করেছে এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন মুক্তির ইতিহাসকে শক্তিশালী করেছে। আামদের যাত্রা মানবমুক্তির দিকে। ॥ দুই ॥ তালেবানী আগ্রাসনের দরুন মাদ্রাসার ঐতিহ্য থেকে মানবিকতা বহিষ্কৃত হচ্ছে। তালেবানী আগ্রাসন মানবিকতার ধারণাকে মাদ্রাসা ও মসজিদ থেকে উচ্ছেদে উদ্যত হয়েছে। এই ধারণা অষ্টম শতাব্দী থেকে ইসলামিক ঐতিহ্যের একটি বড় ধারা। জ্ঞানের আধুনিক সিস্টেমে যাকে বলা হয় মানবিকতা তার উদ্ভব পঞ্চদশ ও ষষ্টদশ শতাব্দীর ইতালিতে নয়, যদিও জেকব বুর্খহাডট তাই ভেবেছেন। ইসলামিক ঐতিহ্য থেকে উত্থিত মানবিকতা খ্রীস্টান ঐতিহ্যে যুক্ত হয়েছে, এই যুক্ততা থেকে তৈরি হয়েছে জ্ঞানের আধুনিকতা। এভাবেই লিগ্যাল, ফিওলজিক্যাল এবং সেক্যুলার জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্য ও কারিকুলাম গঠিত হয়েছে। ইসলামিক ঐতিহ্য গঙ্গা যমুনার মতো খ্রীস্টান ঐতিহ্যে মিলেছে এবং তৈরি করেছে মানবিকতার বোধ। এখান থেকে উৎসারিত হয়েছে জ্ঞানচর্চার কিছু ধ্যান-ধারণা, উৎসারিত হয়েছে জ্ঞানচর্চার আবহাওয়া, যেখানে বিবাদ, মতভেদ ও বিতর্ক মিলে তৈরি হয়েছে জ্ঞানচর্চার পশ্চাৎপদ মানবিকতা সেজন্য পশ্চিমের একান্ত কনসেপ্ট নয়, এই কনসেপ্ট একই সঙ্গে আরবীয়, ভারতীয় এবং চৈনিক। সেজন্য মানবিকতা পাশ্চাত্যের লিবারেলিজমের সঙ্গে একাত্মক নয়। আবার নিওলিবারেলিজম হচ্ছে বিশ্বায়ন : অর্থাৎ মুক্তবাজার অর্থনীতি যা কিনা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং এথনিক ভিন্নতা গভীর করে তুলেছে। আজকের পৃথিবী ছোট হয়ে এসেছে। এর ধরনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি করেছে, যে নির্ভশীলতার সূত্রপাত ঊনবিংশ শতাব্দীর ধনতন্ত্র থেকে। এই ধনতন্ত্র মানবাধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। ধনতন্ত্রের অন্য নাম মৌলবাদ। মৌলবাদের মধ্যে একটা কলোনিয়াল পৃথিবী তৈরির চেষ্টা আছে। এই কলোনিয়াল পৃথিবী শাসন করে চলেছে সাম্রাজ্যবাদ। মৌলবাদ যে কলোনিয়াল পৃথিবী তৈরির চেষ্টা করে চলেছে সেখানে কাজ করেছে এক ধরনের ধর্মজ ডিক্টেটরশিপ। মৌলবাদী প্রবক্তারা একটা বিশেষ ধরনের ধর্মজ সাংস্কৃতিক ভূখ-ের বাসিন্দা। এসব প্রবক্তা ধর্মজ অনুসারীদের দক্ষিণ এশিয়ার (মুসলমানদের) কালেনিয়াল স্ট্যাটাস প্রদানের পক্ষপাতি, এসব অনুসারী সাংস্কৃতিক দিক থেকে মৌলবাদ প্রণীত ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের ওপর নির্ভরশীল ইসলামের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্ক নেই কিংবা ডিক্টেটরশিপের সম্পর্ক নেই। অথচ মৌলবাদ ইসলামের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী নির্যাতন তৈরি করেছে, মৌলবাদী বিশ্বাসের বাইরে কিংবা পরপারে অন্য কোন বিশ্বাস নেই, যদি অন্য কোন বিশ্বাস থাকে (এক ধর্মপ্রসূত অন্য বিশ্বাস কিংবা অন্য কোন ধর্মপ্রসূত বিশ্বাস) তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে লড়াই করে যেতে হবে। এর ফলে একদিকে অন্য বিশ্বাস উচ্ছেদ করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে এবং অন্য বিশ্বাস থেকে তৈরি হয়েছে বিশ্বাসের ডিক্টেটরশিপ। এখান থেকে উদ্ভূত হয় অন্ধত্ব, পিস্তল-বন্দুকের খেলা। প্রতিপক্ষকে হত্যা করে উচ্ছেদ করতে হবে, প্রতিপক্ষের কোন জায়গা নেই, প্রতিপক্ষ একই ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমান হতে পারে কিংবা ভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসী হতে পারে। প্রতিপক্ষ হচ্ছে সর্বতোভাবে নারীরা ও তালেবানী বিশ্বাসের বাইরে তাদের কোন জায়গা নেই, তারা পুরুষের অধস্তন, তালেবানী সাম্রাজ্যে সকল কর্তৃত্ব পুরুষের। তালেবানী টিরেনির ভিত্তি হচ্ছে জবরদস্তি, জবরদস্তি হচ্ছে সকল রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সমস্যার সমাধান আর রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে কর্তৃত্বের ম্যানুয়াল। কর্তৃত্ব হচ্ছে ধর্মজ কর্তৃত্ব, জবরদস্তি স্তরবিন্যস্ত ধর্মজ শিক্ষাব্যবস্থা কর্তৃত্বের ভিত্তি শক্তিশালী করে রাখবে। গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা ধর্মজ কর্তৃত্ববিরোধী বলে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করা জায়েজ। অন্যদিকে আধুনিক তালেবানী ব্যবস্থা আত্মসাত করেছে কিন্তু আধুনিকতা নয়। সেজন্য তালেবানী ব্যবস্থা আধুনিক ধ্যান-ধারণাবিরোধী। পশ্চাৎপদতা থেকে আধুনিকতা তৈরি করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের সমস্যা : পশ্চাৎপদতা থেকে আধুনিকতা তৈরি করা সম্ভব হয়নি বহু ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে তালেবানী বিশ্বাসপ্রসূত বেশসংখ্যক রাজনৈতিক দল আছে- জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, বিএনপি। সব রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। বাংলাদেশে এখন, বর্তমান মুহূর্তে যেসব সরকারবিরোধী আন্দোলন তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেমন বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতে ইসলামের এসব আন্দোলনের প্রথম বলি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাব্যবস্থায় বার বার আঘাত করা হচ্ছে। চলছে পরীক্ষা বন্ধ করার অপচেষ্টা। সাধারণ মানুষ ও সাধারণ মানুষের সন্তান-সন্ততি লেখাপড়ার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে রেখেছে, অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতে ইসলাম আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট করে পরীক্ষা বন্ধকরণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সার্বিক পরিবেশ নষ্ট করে চলেছে। পরীক্ষার সময় হরতাল দিয়ে স্কুল পুড়িয়ে মেয়েদের পড়ার বিরোধিতা করে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উচ্ছেদ করার চেষ্টা চলছে। সেই সুদূর আমলে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে যে আন্দোলন কৃষকের সন্তান-সন্ততি শুরু করেছিল, সেই আন্দোলন হচ্ছে বর্তমানের একুশের আন্দোলন, আধুনিক লেখাপড়ার আন্দোলন, বাংলা ভাষাচর্চার আন্দোলন। এই অর্থে ভাষার বিরুদ্ধে, আধুনিক লেখাপড়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে চলেছে বিএনপি, জামায়াত এবং হেফাজত। আধুনিকতার বিরুদ্ধে ও আধুনিক শিক্ষার আন্দোলন রুদ্ধ করে মানুষকে পশ্চাদমুখী ও অনগ্রসর করে রাখাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্ট্র্যাটেজি। আমরা এই স্ট্র্যাটেজির বিরুদ্ধে, আধুনিকতা রুদ্ধ করার বিরুদ্ধে, পশ্চাদমুখিতার বিরুদ্ধে। মানুষ হত্যা করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
×