ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় কর্মসৃজন প্রকল্প ॥ তদন্তের পর ৩৮ লাখ ফেরত

সোয়া কোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২৮ জুলাই ২০১৫

সোয়া কোটি টাকা আত্মসাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৭ জুলাই ॥ সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দকৃত টাকা থেকে ১ কোটি ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলেও এখন পর্যন্ত এর মধ্যে মাত্র ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা সরকারী কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে। বাকি ৬৬ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা এখন পর্যন্ত ফেরত দেয়া হয়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর সূত্রে জানা গেছে, আত্মসাতকৃত বাকি টাকা ফেরত সংক্রান্ত ব্যাপারে চূড়ান্ত তদন্তের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম পুনরায় বিষয়টি তদন্ত করে এ ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করবেন। উল্লেখিত টাকা সুবিধাভোগী হতদরিদ্র শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ না করে সরকারী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবরা যোগসাজশের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রকৃত শ্রমিকদের নাম গোপন করে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে এবং ভুয়া এ্যাকাউন্ট নম্বর ও কাগজপত্র জাল করে ওই টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়। ওই আত্মসাতের ঘটনায় উপজেলার দহবন্দ, হরিপুর ও বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বররা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জুন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালকের প্রশাসন একরামুল হকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় যে, উক্ত তিনটি ইউনিয়নে ৪৭৬ জন হতদরিদ্র শ্রমিকের নাম গোপন রেখে মোট বরাদ্দ থেকে ১৫ ইউনিয়নে বিভাজন করে একটি তালিকা প্রণয়ন করেন। গোপন করা সুবিধাভোগী শ্রমিকদের মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নে ১৬৭ জন, দহবন্দ ইউনিয়নে ১১৮ জন ও হরিপুর ইউনিয়নে ১৯১ জন। পরে ৪৭৬ জন শ্রমিকের ভুয়া নামের তালিকা, ভুয়া কাগজপত্র ও ব্যাংক এ্যাকাউন্ট দেখিয়ে চেকে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০০ টাকা হারে ৪০ দিনে ৩৮ লাখ ৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া কর্মসৃজন প্রকল্পে ১৫ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নামে ব্যাংকে ভুয়া এ্যাকাউন্ট নম্বর দেখিয়ে প্রতি ইউনিয়নে ৫০ জন শ্রমিকের নাম গোপন করা হয়। এতে ১৫ ইউনিয়নের ৭৫০ শ্রমিকের বিপরীতে ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া ১৫ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের আনুষঙ্গিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা, ১৫ ইউনিয়ন পরিষদের ১৩৫ জন সদস্যদের (মেম্বর) আনুষঙ্গিক ২ হাজার টাকা হিসাবে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও সুবিধাভোগী শ্রমিকদের সার্ভিস ভাতা ২ হাজার টাকা হারে ১৩৫ জনের ২ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ মোট ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকার বিল পাস করেও তা আত্মসাত করা হয়। এতিমখানার ৫০ টন চাল এদিকে একই উপজেলায় ২৫টি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার নামে ভুয়া কমিটি দেখিয়ে ৫০ মেঃ টন চাল আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত টিম বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করার পর জেলা প্রশাসককে রিপোর্ট দাখিল করা হলে উত্তোলিত চাল ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু মাদ্রাসাগুলোর ওইসব কমিটির অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ায় চাল ফেরত পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৫টি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার নামে ২ মেঃ টন করে মোট ৫০ মেঃ টন জিআরের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ উল্লেখিত চালের বরাদ্দ দেন। এ নিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ এহছানে এলাহীর কাছে অভিযোগ করা হলে তাঁর নির্দেশে গাইবান্ধা কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাগফুরুল হাসান আব্বাসী বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে আত্মসাতের ঘটনা সত্যতা প্রমাণিত হলে বর্তমান জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ গত ১৩ জুলাই আত্মসাতকৃত চাল সরকারী ভান্ডারে ফেরতসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই মিল্টনকে নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, জরুরী ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
×